মঙ্গলবার রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোক স্টুডিও বাংলার দুটি সিজনের বিস্তারিত তথ্য, অর্জন ও সাফল্যগাথা তুলে ধরেন কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং প্রধান আবীর রাজবীন
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোক স্টুডিও বাংলার দুটি সিজনের বিস্তারিত তথ্য, অর্জন ও সাফল্যগাথা তুলে ধরেন কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং প্রধান আবীর রাজবীন

বিশ্বের সামনে বাংলা সংগীত ও শিল্পীদের তুলে ধরছে ‘কোক স্টুডিও বাংলা’

২০০৮ সালে কোক স্টুডিওর যাত্রা শুরুর পর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে শুরু হয় ‘কোক স্টুডিও বাংলা (সিএসবি)’। যাত্রা শুরুর পর থেকে বৈচিত্র্যময় ধারার প্রতিভাদের একত্রিত করে সৃজনশীল ও নতুন ধারার সংগীত সৃষ্টির মাধ্যমে সংগীতের জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে ডিজিটাল মিউজিক প্ল্যাটফর্মটি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোক স্টুডিও বাংলার দুটি সিজনের বিস্তারিত তথ্য, অর্জন ও সাফল্যগাথা তুলে ধরেন কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং প্রধান আবীর রাজবীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোক স্টুডিও বাংলার কিউরেটর এবং সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক শায়ন চৌধুরী অর্ণব।
অনুষ্ঠানে আবীর রাজবীন বলেন, ‘যুগান্তকারী দুটি সিজনে কোক স্টুডিও বাংলা সংগীতজগতে দিয়েছে নতুন প্রাণের ছোঁয়া, অতিক্রম করেছে দেশের সীমানা, প্রশংসা কুড়িয়েছে ভক্ত ও শিল্পীদের কাছ থেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিন লাখের বেশি কথোপকথন, হাজারো ফ্যান আর্ট, মিউজিক ও ড্যান্স কাভার এবং যন্ত্রসংগীতের মাধ্যমে কোক স্টুডিও বাংলা একটি প্রাণবন্ত ও সংযুক্ত কমিউনিটি তৈরি করেছে। এই কমিউনিটি প্ল্যাটফর্মটির গানগুলোর প্রতি নিজেদের ভালোবাসা সব সময় তুলে ধরছে। প্রথম দুই সিজনে আমরা অভূতপূর্ব সমর্থন ও সাড়া পেয়েছি। এতে আমরা সৃজনশীল ক্ষেত্রে নতুন কিছু করার প্রেরণা পাই।’

ইউটিউবের সিলভার ও গোল্ড প্লে বাটন  
কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলের বর্তমানে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২৮ দশমিক ৬ লাখের বেশি। এতসব অর্জন হয়েছে চ্যানেলটির যাত্রা শুরুর মাত্র ২০ মাসের মাথায়, যা প্ল্যাটফর্মটির তুমুল জনপ্রিয়তার প্রমাণ।
এ ছাড়া একমাত্র বাংলাদেশি এফএমসিজি ব্র্যান্ড হিসেবে কোক স্টুডিও বাংলা পেয়েছে ইউটিউবের সিলভার ও গোল্ড প্লে বাটন। কনজ্যুমার-প্যাকেজড গুড (সিপিজি) শিল্পের ইউটিউব চ্যানেলে গড় এনগেজমেন্ট রেট হলো ১০ শতাংশের কম, সেখানে ২০ শতাংশ এনগেজমেন্ট রেট নিয়ে সিএসবি অনেক এগিয়ে আছে। পৃথিবীর ১৫টির বেশি দেশ থেকে তিন হাজার সাত শতাধিক স্বতঃস্ফূর্ত রিভিউ ও রিঅ্যাকশন কনটেন্ট সিএসবির বৈশ্বিক জনপ্রিয়তার প্রমাণ। এভাবে প্ল্যাটফর্মটি আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে একটি দৃঢ় স্থান করে নিয়েছে।

কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলের বর্তমানে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২৮ দশমিক ৬ লাখের বেশি

ইউটিউবে সেরা যে গানগুলো
কোক স্টুডিও বাংলার গানগুলো সারা পৃথিবীর দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। ইউটিউবে সেরা গানের তালিকায় রয়েছে প্রথম সিজনের ‘ভবের পাগল’, ‘বুলবুলি’ ও ‘নাসেক নাসেক’ এবং দ্বিতীয় সিজনের ‘দেওরা’ ও ‘কথা কইয়ো না’।

বৈচিত্র্যময় ভক্তের সম্মিলন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সের মানুষেরা কোক স্টুডিও বাংলার ভক্তদের মধ্যে প্রধান। সাবস্ক্রাইবারদের ৮০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশি। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আছে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে।

এরপরই আছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের নানা দেশ। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে কোক স্টুডিও বাংলার শ্রোতা–দর্শক স্বাভাবিকভাবে বেশি। তবে কলকাতাতেও প্ল্যাটফর্মটির উল্লেখযোগ্য ভক্ত রয়েছেন।
স্পটিফাইয়ে জনপ্রিয়তা    
স্পটিফাইয়ের ডেটা দিয়ে সম্ভবত কোক স্টুডিও বাংলার বিস্ময়কর সাফল্যের চিত্র সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায়। এখন পর্যন্ত স্ট্রিমিং ডিউরেশন ১ দশমিক ৩৮ কোটি স্ট্রিম, যা ৭ দশমিক ৫ কোটি মিনিটের সমান। এর চেয়েও চমকপ্রদ হচ্ছে, কোক স্টুডিও বাংলার গানগুলোর সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের স্পটিফাই অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধির চিত্র। স্পটিফাইয়ের দেওয়া তথ্য অনুসারে, প্ল্যাটফর্মটি চালু হওয়ার পর থেকে স্পটিফাইয়ে বাংলা গান শোনার পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে। স্পটিফাইয়ে সবচেয়ে বেশি স্ট্রিম হওয়া সিএসবির গানগুলো হলো প্রথম সিজনের ‘বুলবুলি’, ‘চিলতে রোদ’ ও ‘ভবের পাগল’ এবং দ্বিতীয় সিজনের ‘দেওরা’, ‘কথা কইয়ো না’ ও ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’।

টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম ট্রেন্ডিং
প্রথম দুই সিজনের প্রতিটি গান প্রকাশ পাওয়ার পর গানগুলো টিকটককে একপ্রকার দখল করে নিয়েছিল। কোক স্টুডিও বাংলার গানগুলোর ওপর ভিত্তি করে ১০ লাখের বেশি ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্ট পিস প্রকাশিত হয়েছে, যেসব কনটেন্টের ভিউ সংখ্যা ৪০ কোটির বেশি। টিকটকে সবচেয়ে বেশি ট্রেন্ডিং কোক স্টুডিও বাংলার গানগুলো হলো ‘দেওরা’, ‘কথা কইয়ো না’ ও ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’। ইনস্টাগ্রাম রিলসেও দেখা গেছে সিএসবির জাদু; তৈরি হয়েছে ১০ লাখের বেশি ইউজার-জেনারেটেড রিলস। ‘কথা কইয়ো না’ হলো ইনস্টাগ্রাম রিলসে সবচেয়ে বেশি ট্রেন্ডিং গান।

বাংলাদেশি এফএমসিজি ব্র্যান্ড হিসেবে কোক স্টুডিও বাংলা পেয়েছে ইউটিউবের সিলভার ও গোল্ড প্লে বাটন

শিল্পকর্মের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ
প্ল্যাটফর্মটি যাত্রা শুরুর পর থেকে গান ও শিল্পীদের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশে হাজারো ভক্ত–শিল্পী তাঁদের সৃজনশীল চিত্রকর্ম প্রকাশ করেছেন। পেইন্টিং, স্কেচ, ডিজিটাল আর্ট, অ্যানিমেশন, ক্যালিগ্রাফি, এআই-জেনারেটেড ইমেজেস ইত্যাদিসহ হাজারো চিত্রকর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে।

এই উৎসাহ ও সৃজনশীলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্ল্যাটফর্মটি শুরু করে কোক স্টুডিও বাংলা বিলবোর্ড ফ্যান আর্ট কনটেস্ট। দুই মাসের কম সময়ে তাদের কাছে ৬০টির বেশি শিল্পকর্ম জমা পড়ে, যার মধ্যে নির্বাচিত কিছু শিল্পকর্ম ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের ১১টি বিলবোর্ডে প্রদর্শিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গান পরিবেশিত হয়েছে প্ল্যাটফর্মটিতে। এতে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১০০ শিল্পী, যার মধ্যে আছেন অনিমেষ রায়, হামিদা বানু, আলেয়া বেগম, মুকুল মজুমদার ঈশানসহ অনেক লুকিয়ে থাকা প্রতিভা। তাঁদের অনেকের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। দুই সিজনে প্রকাশিত হয়েছে ২০টির বেশি গান।