রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

ভালোবাসার অত্যাচার, আমার জীবনে আজকের দিনটা তেমনই: রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

জীবনে এমন দিন কখনোই আসেনি। আসবে কীভাবে! ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার যে জীবনে প্রথমবার উঠতে যাচ্ছে তাঁর হাতে। তাই তো গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অন্য রকম একটা সময় কাটছে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার। রাত ১২টা থেকে ব্যস্ততা যেন বাড়তেই লাগল। একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তায় ভাসল বরেণ্য এই শিল্পীর মুঠোফোন। অনেকে সশরীর শুভকামনা ও অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলেন তাঁর লালমাটিয়ার সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’ কার্যালয়ে। কেউ আবার তাঁর বাড়িতে ছুটে যান প্রিয় শিল্পীর সম্মাননাপ্রাপ্তির খবরটি সামনাসামনি উদযাপন করতে। পুরো ব্যাপারটিতে ভীষণ সম্মানিত, আনন্দিত ও গর্বিত রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
ভারতের মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। বৃহস্পতিবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এবারের ‘পদ্ম’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেছে। ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন। এরপর রয়েছে পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ ও পদ্মশ্রী।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছর ভারত সরকার ১৩২ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে পদ্ম সম্মাননার জন্য মনোনীত করেছে। তাঁদের মধ্যে ৫ জন পদ্মবিভূষণ, ১৭ জন পদ্মভূষণ আর ১১০ জন পদ্মশ্রী সম্মাননা পাচ্ছেন। আর এবার পদ্মশ্রী পদকের একজন হয়ে উঠলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
আজ শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কোনোভাবেই তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হচ্ছিল না। রাত সোয়া ৯টায় যখন তাঁর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হচ্ছিল, তখন তাঁকে ভীষণ উচ্ছ্বসিত মনে হচ্ছিল। বললেন, ‘সারা দিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে না, “ভালোবাসার অত্যাচার”, আমার জীবনে আজকের দিনটা তেমনই। সবার এত ভালোবাসায় আমার দম নেওয়ার অবস্থা ছিল না। এটা অনেক বড় একটা আশীর্বাদ। আমার জীবনে সত্যিই কোনো দিন এমন একটা দিন আসবে ভাবিনি।’
কবে জানতে পারলেন পদ্মশ্রীপ্রাপ্তির খবরটি? এমন প্রশ্নে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বললেন, ‘গতকাল রাতেই আমাকে ফোন করে জানানো হয়েছিল। ভারতীয় হাইকমিশনার সাহেব নিজেই ফোন করে আমাকে জানিয়েছেন। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের একটা ব্যাপার ছিল। আমি হাইকমিশনার সাহেবকে বলেছি, ইউ মাস্ট বি জোকিং। তখন তিনি হাসছিলেন। বলেছিলেন, “নো আই অ্যাম নট জোকিং। আই অ্যাম সিরিয়াস। ইউ হ্যাভ ওনড ইট।”’

পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়ায় দায়বদ্ধতা অনেক বেড়ে গেল বলে জানান বন্যা। তিনি বলেন, ‘সত্যিই দায়িত্বটা অনেক বেড়ে গেল। এখন যে সম্মান ও স্বীকৃতি দেওয়া হলো, তাঁর যোগ্য যেন হয়ে উঠতে পারি। আগামীতে ভালোভাবে যেন সব কাজ করতে পারি। সবাই আমার জন্য যেন দোয়া করেন।’

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেক ধরনের পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সংগীতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১৬ সালে তিনি অর্জন করেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘স্বাধীনতা পদক’। এ ছাড়া তিনি ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ সংগীত পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ভারতেও তিনি বেশ কিছু পদক পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘বঙ্গভূষণ’। ২০১৭ সালে কলকাতার নজরুল মঞ্চে এই রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীর হাতে বঙ্গভূষণ পুরস্কার তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ‘সংগীত সম্মান পুরস্কার’ পেয়েছেন বন্যা।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে প্রতিবছর পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করা হয়।  সাধারণত মার্চ বা এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠান করে পুরস্কারগুলো তুলে দেওয়া হয়। এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক সন্‌জীদা খাতুন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীককে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করেছিল ভারত সরকার। তার আগে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও কূটনীতিবিদ সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ‘পদ্মভূষণ’ সম্মাননা পেয়েছিলেন। আর ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননা পেয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ এনামুল হক ও সমাজকর্মী ঝর্ণাধারা চৌধুরী।