স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত আপেল মাহমুদ বলেছেন, ‘গান শুধু শুনলে বা পড়লে হবে না, এটা শুধু বিনোদনের জন্য নয়। এর মধ্য থেকে দেশপ্রেম খুঁজে নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেম যার মধ্যে নেই, সে মানুষ নয়। আমি কখনো দেশের বিরুদ্ধে কোনো গান গায়নি। তবে যারা দেশের ক্ষতি করে, আমি তাদের বিরুদ্ধে গান গেয়েছি।’
আজ শনিবার দুপুরে খুলনা নগরের উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ড. মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলামের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মারক বক্তৃতায় আপেল মাহমুদ এ কথাগুলো বলেন। স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল—আমাদের সংগীতে স্বদেশভাবনা।
তরুণসমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে এ সময়ে আপেল মাহমুদ বলেন, ‘দেশকে ভালোবাসতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হয় না। ১৯৭১ সালে যাঁরা আমার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন করেছিলেন, তাঁরা কেউ উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না। মাঠে লাঙল-হাল ফেলে এসে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন দেশপ্রেমের জন্য। নতুন প্রজন্মের তোমরা দেশপ্রেমের জন্য দৃঢ় শপথ নাও।’
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে আপেল মাহমুদ বলেন, ‘খুলনা বেতারে যখন কর্মরত ছিলাম, তখন দেখেছি লাখ লাখ চিঠি আসত। অনেক চিঠিতে রক্ত দিয়ে লেখা গান থাকত। এটা সুরের মায়ার প্রতিফলন। মানুষের চাওয়া না–চাওয়ার স্বাধীনতা, পাওয়া না–পাওয়ার স্বাধীনতা সবই সেসব সংগীতে ফুটে উঠত।’
মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলাম স্মরণে আপেল মাহমুদ বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য, যাঁদের জীবনাদর্শ অনুপ্রেরণার উৎস, তাঁদের একজন এ মাটির কৃতীসন্তান মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলাম। তিনি যেমন মেধাবী ছিলেন, তেমনি হৃদয়বান। আর মাতৃভূমি ও মানুষের জন্য ছিল তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসা। তাঁর ব্যবহৃত কম্পিউটারটি বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটার, যা এখনো জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। তিনি এ দেশে কম্পিউটার প্রচলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন খুলনার প্রবীণ সাংবাদিক মনিরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলাম বিশ্বের যে প্রান্তে যখনই ছিলেন, কখনোই স্বদেশকে ভুলে যাননি। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাজীবনে অর্জিত অর্থের সঞ্চয় থেকে তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শার্লী ইসলাম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য কোটি টাকা প্রদান করে গেছেন। অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান নিজ কর্মপ্রচেষ্টা ও একাগ্র সাধনার দ্বারা আমাদের সমাজে অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলাম ও শার্লী ইসলাম ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান। তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেম বলতে দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে, দেশ আমাকে কী দিল, সেটা বড় কথা নয়। আমি দেশকে কী দিতে পারলাম, সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের দেশ খুবই সমৃদ্ধ। এটুকু ভূমি ১৮ কোটি মানুষের খাবারের চাহিদা পূরণ করছে। আমাদের দেশপ্রেমের মাধ্যমে দেশের সম্পদকে যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।’ অনুষ্ঠান শেষে খুলনার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়।