‘মেরি আওয়াজ হি প্যাহচান হ্যায়, গর ইয়াঁদ রাহে’- সুরসম্রাট ভূপিন্দর সিংয়ের গাওয়া এই গানের কথাগুলোর মতো সত্যিই তাঁর গায়কী তাঁর আসল পরিচয়। আর সুরের জাদুকর হয়ে আজীবন তিনি সংগীতপ্রেমীদের স্মৃতিতে তাজা থাকবেন। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেলেন ভারতীয় সংগীত দুনিয়ায় খ্যাতনামা শিল্পী ভূপিন্দর সিং। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। এই সংগীতশিল্পীর মহা প্রয়াণে ভারতীয় সংগীত দুনিয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ নাগাদ মুম্বাইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন ভূপিন্দর সিং। ভূপিন্দরের স্ত্রী সংগীতশিল্পী মিতালি মুখার্জি এক বিবৃতির মাধ্যমে তাঁর প্রয়াণের খবর জানিয়েছিলেন। গতকাল রাত ১২টা ৩০ মিনিটে মুম্বাইয়ের আন্ধেরির ওসিওয়ারা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল। ভূপিন্দর সিংয়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর নিকটাত্মীয় পরিজন। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁর শেষকৃত্য হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে গতকালই তাঁকে দাহ করা হয়।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ছয় মাস ধরে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। প্রবাদপ্রতিম এই সংগীতশিল্পী কোলন ক্যানসারে ভুগছিলেন। আর তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। শুরুতে মূত্রনালিতে সংক্রমণের কারণে ভূপিন্দর সিংকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় তিনি কোভিড আক্রান্ত। ১০ দিন ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে কোলন ক্যানসার আর কোভিডের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
ভূপিন্দর সিংয়ের নশ্বর দেহ বিলীন হয়ে গেলেও তিনি রেখে গেছেন তাঁর অজস্র সৃষ্টি। আর রয়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী মিতালি সিং, পুত্রসন্তান নিহাল সিং, এবং অগুনতি ভক্ত। বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী মিতালি মুখার্জিকে বিয়ে করেছিলেন ভূপিন্দর সিং। বিয়ের পর মিতালি ‘সিং’ পদবি ব্যবহার করেন। তাঁদের যুগলবন্দী অসংখ্য সুন্দর সুন্দর গান উপহার দিয়েছে। ভূপিন্দর আর মিতালির ছেলে নিহাল পেশায় সংগীতপরিচালক।
১৯৬৪ সালে চেতন আনন্দ পরিচালিত ‘হকিকত’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে গায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছিল ভূপিন্দর সিংয়ের। তাঁর গাওয়া অনেক হিট হিন্দি এবং বাংলা গান আছে। গায়ক হিসেবে তিনি প্রচুর সুনাম অর্জন করেছিলেন। তবে গীটারবাদক হিসেবেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। ‘দম মারো দম’, ‘চুরা লিয়া হ্যায়’, ‘চিঙ্গারি কোঈ ভরকে’, ‘মেহেবুবা মেহেবুবা’-র মতো সুপারহিট গানের সংগীতায়জনে গীটারবাদক ছিলেন ভূপিন্দর।