একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ারকে তাঁর বাবা সৈয়দ বজলুর রহমানের কবরে সমাহিত করা হবে। কাল শুক্রবার বাদ জুমা যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে বনানীতে বাবার কবরে সমাহিত করা হবে, প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিল্পীর স্বামী সারোয়ার আলম।
সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমার এবং পাপিয়ার পরিবারের অনেককে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। তাই আমাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তে পাপিয়াকে বনানী কবরস্থানে তার বাবার কবরে সমাহিত করা হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তার আগে কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গতকাল শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। আজ সকালে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়।
সারোয়ার আলম জানান, পাপিয়া সারোয়ারের মরদেহ বেলা একটায় ধানমন্ডি ২৮ নম্বরের বাসায় নেওয়া হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। কাল জুমার পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন পাপিয়া। গত মাসে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন গুণী এই শিল্পী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম বরিশালে, ১৯৫২ সালের ২১ নভেম্বর। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র–অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সাল থেকে বেতার ও টিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারতে যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই প্রথম ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানে স্নাতক করার সুযোগ পান।
এর আগে তিনি ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন ও জাহেদুর রহিমের কাছে গানের দীক্ষা নেন। তাঁর প্রথম অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮২ সালে। অ্যালবামটির নামও ছিল শিল্পীর নামেই, ‘পাপিয়া সারোয়ার’। দীর্ঘ সংগীতজীবনে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পাপিয়া সারোয়ার পেয়েছেন। তাঁর ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ও গায়কির প্রশংসা ছিল সংগীতাঙ্গনে। আধুনিক গানেও আছে তাঁর সাফল্য। ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাঁকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দিয়েছে। সংগীতবোদ্ধাদের মতে, আধুনিক গান বাছাইয়ে বেশ সচেতন ছিলেন বলে তাঁর অ্যালবামের সংখ্যা কম। তাঁর সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে।