মুজিব পরদেশীর অনেক গান এখনো শ্রোতাদের নস্টালজিক করে। ফিরিয়ে নিয়ে যায় চার দশক আগে। কিন্তু জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকতেই হঠাৎ করে তিনি চলে যান লন্ডনে। এক যুগ সেখানে ছিলেন। এরপর দেশে ফিরলেও সেভাবে নতুন গানে পাওয়া যায়নি তাঁকে। হঠাৎ হঠাৎ একটা গান প্রকাশ করেন, এরপর আবার উধাও। সেই মুজিব পরদেশীকে পাওয়া গেল লিভিং রুম সেশনে প্ল্যাটফর্মে। সুরকার ও সংগীত পরিচালক পাভেল আরীন তাঁকে দিয়ে নতুন করে গাওয়ালেন তাঁরই গাওয়া ‘মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে’ গানটি। গত বৃহস্পতিবার গানটি প্রকাশিত হয়েছে। নতুন সংগীতায়োজনের এই গান প্রকাশের পর থেকে প্রশংসিতও হচ্ছে।
একসময়ের জনপ্রিয় শিল্পী মুজিব পরদেশীর রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় গান। তাঁর গান শোনেননি, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। ‘কলমে নাই কালি’, ‘আমি বন্দী কারাগারে’, ‘সাদা দিলে কাদা’, ‘তোমায় আমি হলেম অচেনা’, ‘আমি কেমন করে পত্র লিখি’, ‘আমার মনের আগুন জ্বলে দ্বিগুণ’, ‘মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে’ তাঁর গাওয়া এমনই সব গন শ্রোতাদের আন্দোলিত করে।
নতুন প্রজন্মের কাছে মুজিব পরদেশীকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের প্রয়াস থেকেই পাভেল আরীন এই উদ্যোগ নিয়েছেন। মুজিব পরদেশীকে দিয়ে গীতিকার ও সুরকার হাসান মতিউর রহমানের ‘মন তোরে পারলাম না বোঝাইতে’ গানটি নতুন সংগীতায়োজন গাওয়ালেন পাভেল।
লিভিং রুম সেশনে মুজিব পরদেশীকে দিয়ে গানটি নতুনভাবে গাওয়ানো প্রসঙ্গে পাভেল বলেন, ‘বাংলা লোকগানকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি। বিনয়ী স্বভাবের এই গুণীজনের গানের সাথে অনেক আগে থেকে পরিচিত হলেও ২০১৫ থেকে তার সাথে ব্যক্তিগত পরিচয়। আমাদের ব্যান্ড চিরকুটের জাহিদ নিরবের মামা হওয়ার সুবাদে আমরাও তাঁকে মামা বলে ডাকি। সেই সূত্রে আমার অনুষ্ঠানে মামাকে আমন্ত্রণ জানাই। আমার একডাকেই বিনা বাক্যে মামা এলেন, গাইলেন, সারা রাত আড্ডা দিলেন। শুনলাম তাঁর বর্ণাঢ্য সংগীতজীবনের নানান গল্প।’
লিভিং রুম সেশনে নতুন সংগীতায়োজনে ‘মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে’ গানটি বেছে নেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে পাভেলের উত্তর, ‘অনেক আগে থেকেই গানটা আমার ভীষণ পছন্দ। কী সহজে কত সুন্দর উপস্থাপন। সুর এবং কথার অনবদ্য মেলবন্ধন। অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল, কোনো দিন যদি সুযোগ আসে গানটিকে নতুন সাউন্ডে উপস্থাপনের, তাহলে করব। অসংখ্য ধন্যবাদ গানটি যিনি তৈরি করেছেন, সেই হাসান মতিউর রহমান আংকেলের কাছে প্রস্তাব দিতেই তিনি আমাদের অনুমতি দিলেন। গানটি নতুনভাবে উপস্থাপনের অনুমতি দেন। শুধু তাই নয়, আমাদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভকামনা জানিয়েছেন।’
‘মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে’ গানটি ‘আমি বন্দী কারাগারে’ অ্যালবামের। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় বলে জানালেন গীতিকার-সুরকার ও প্রকাশক হাসান মতিউর রহমান।
শুক্রবার বিকেলে কথা প্রসঙ্গে হাসান মতিউর রহমান জানালেন, ‘মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে’সহ ১১টি গানের এই অ্যালবামের রেকর্ডিং হয় ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর, রোববার। ঢাকার তেজকুনীপাড়ার ঝংকার স্টুডিওতে পৌনে দুই ঘণ্টায় সব গানের রেকর্ডিং হয়েছে। লাইভ রেকর্ডিং ছিল। এসব গানে হারমোনিয়ামও বাজিয়েছিলেন মুজিব পরদেশী। তবলায় ছিলেন সজল দাশ।
৩৮ বছরের মাথায় গানটি নতুন সংগীতায়োজনে তৈরি প্রসঙ্গে হাসান মতিউর রহমান বললেন, ‘মমতাজের কয়েকটি গানের কাজ প্রসঙ্গে পাভেল আরীনের সঙ্গে আমার পরিচয়। তার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগে। দারুণ সব কাজ করছে। পাভেল ও ইমন চৌধুরী দুজনেই আমার পছন্দের, তাদের চমৎকার সব কাজের কারণে। এর মধ্যে পাভেল যখন এই গানের নতুন সংগীতায়োজনের প্রস্তাব দেয়, ভাবনাটা পছন্দ হয়। আমিও চেয়েছি, তাদের হাত ধরে নতুন প্রজন্মের কাছেও গানটি ছড়িয়ে পড়ুক।’
পাভেল আরীন জানান, লিভিং রুম সেশনের প্রথম সিজনে আটটি রিমিক্স ও একটি মৌলিক গান রয়েছে। গানগুলোর অডিও প্রোডাকশন করেছে বাটার কমিউনিকেশন, ভিডিও নির্মাণ করেছেন মারুফ রায়হান। পরিবেশনায় থাকছে মাশরুম এন্টারটেইনমেন্ট।