শিরোনামহীনের ‘বন্ধ জানালা’, ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ ও ‘জাহাজী’ অ্যালবামের পোস্টার
শিরোনামহীনের ‘বন্ধ জানালা’, ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ ও ‘জাহাজী’ অ্যালবামের পোস্টার

জি–সিরিজের বিরুদ্ধে শিরোনামহীনের অভিযোগ

অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি–সিরিজের ব্যানারে প্রথম তিনটি অ্যালবাম জাহাজী, ইচ্ছেঘুড়ি ও বন্ধ জানালা প্রকাশ করেছিল জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীন। ২০১৮ সালে শিরোনামহীনকে তিন অ্যালবামের অন্তত ৩০টি গানের কপিরাইট সনদ দিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ড।

ব্যান্ডটির দলনেতা জিয়াউর রহমানের অভিযোগ, কপিরাইট বোর্ডের রায়কে অমান্য করে জি–সিরিজ শিরোনামহীনের এসব গান ইউটিউবসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে।

শিরোনামহীনের অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৬ মে জি–সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়ার কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস।

নাজমুল হক ভূঁইয়া গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে জানান, তিনি চিঠি পেয়েছেন। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনার পর লিখিত ব্যাখ্যা জানাবেন।

নাজমুল হক ভূঁইয়া গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে জানান, তিনি চিঠি পেয়েছেন। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনার পর লিখিত ব্যাখ্যা জানাবেন।
জি সিরিজের লোগো
২০০৪, ২০০৬ ও ২০০৯ সালে তিনটি অ্যালবাম বের হয়েছিল। তিনটি অ্যালবাম প্রকাশের পরপরই শ্রোতৃমহলে সাড়া ফেলেছিল।

এর আগে ১৯ শিরোনামহীনের দলনেতা জিয়াউর রহমান কপিরাইট অফিসে জি–সিরিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে শিরোনামহীনের জনপ্রিয় গান বাণিজ্যিকভাবে ইউটিউবে প্রচার করছে জি–সিরিজ। এতে মুনাফাও করছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে শিরোনামহীনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘বন্ধ জানালা’ গানটি তোলা হলে স্ট্রাইক দিয়েছে জি–সিরিজ।
২০০৪, ২০০৬ ও ২০০৯ সালে তিনটি অ্যালবাম বের হয়েছিল। তিনটি অ্যালবাম প্রকাশের পরপরই শ্রোতৃমহলে সাড়া ফেলেছিল। অ্যালবাম কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন শ্রোতারা। মাঝে এসব গানের কপিরাইট নিজেদের নামে করে নিয়েছিল জি–সিরিজ। ২০১৭ সালের দিকে বিষয়টি নজরে এলে কপিরাইট অফিসের শরণ নেয় শিরোনামহীন।

বাংলাদেশ কপিরাইটের লোগো

বছরখানেক ধরে দুই পক্ষের বক্তব্য ও তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর জি–সিরিজের কপিরাইট সনদ বাতিল করে কপিরাইট বোর্ড। তিন অ্যালবামের কপিরাইট সনদ শিরোনামহীনকে দেওয়া হয়। কপিরাইট আইন অনুসারে, এই ৩০টি গানের স্বত্বাধিকারী শিরোনামহীন।
২০১৯ সালে কপিরাইট বোর্ডের রায়ের ওপর হাইকোর্টে আপিল করেছে জি–সিরিজ।
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের সাবেক রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, জি–সিরিজ শিরোনামহীনের তিন অ্যালবাম শুধু অডিও আকারে প্রকাশ করতে পারে। অ্যালবাম থেকে জি–সিরিজ ব্যবসা করে ফেলেছে। এখন এসব অ্যালবাম ইউটিউবসহ ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করতে চাইলে শিরোনামহীনের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। অন্যথায় ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করলে কপিরাইট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
২০১৮ সালে কপিরাইট বোর্ডে ছিলেন জাফর রাজা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কপিরাইট সনদ পাওয়ার পর এসব গানের মূল মালিক শিরোনামহীন। ওরা (জি–সিরিজ) এই গানগুলো শুধু ক্যাসেটে বিক্রি করতে পারবে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের অধিকার জি–সিরিজের নেই।’

কপিরাইট সনদ পাওয়ার পর এসব গানের মূল মালিক শিরোনামহীন। ওরা (জি–সিরিজ) এই গানগুলো শুধু ক্যাসেটে বিক্রি করতে পারবে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের অধিকার জি–সিরিজের নেই।
সাবেক রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী

কপিরাইট বোর্ডের রায় অমান্য করে শিরোনামহীনের ডিজিটাল মাধ্যমে গান প্রচার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জি–সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়া কোনো সদুত্তর দেননি। তাঁর দাবি, তিনি অর্থ লগ্নি করে অ্যালবামগুলো করেছেন। ফলে সেগুলো সব মাধ্যমে প্রচার করবেন।
তবে কপিরাইট বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, স্বত্বাধিকারীর (শিরোনামহীন) অনুমতি ছাড়া জি–সিরিজ ডিজিটাল মাধ্যমে এসব গান প্রচার করতে পারে না। এটা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন।