যাঁকে ঘিরে এত আয়োজন, যাঁর জন্য এত অপেক্ষা। গান নিয়ে মঞ্চে এলেন পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। রাত তখন ৯টা ৫০ মিনিট। গায়ে নকশা পাঞ্জাবি, মঞ্চে উঠেই বাংলায় বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, বাংলাদেশ আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ আর্মি স্টেডিয়ামের অগণিত দর্শকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে গান ধরলেন,‘তু না জানে আস পাস হ্যায় খুদা’। একে একে তিনি শোনান তাঁরই গাওয়া পরিচিত গানগুলো।
অবশ্য রাহাত ফতেহ আলী স্টেডিয়ামে আসেন আরও বেশ খানিকটা আগে। মঞ্চের পেছনে অস্থায়ী বিশ্রাম ঘরে কিছুটা সময় কাটান। আয়োজক, অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ভক্তদের ছবির আবদার মেটান।
এর আগে শনিবার বেলা দুইটায় কনসার্টের দরজা খোলে। আগে থেকে আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে সংগীতানুরাগীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বিকেল চারটায় আর্মি স্টেডিয়ামে সিলসিলার পরিবেশনা দিয়ে কনসার্ট শুরু হয়েছে। এরপর মঞ্চে আসেন ‘আওয়াজ উডা’ গানের জন্য পরিচিত র্যাপার হান্নান। শুরুতে র্যাপ গানটি পরিবেশন করেন তিনি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গানটি গাওয়ার জন্য জেল খেটেছেন হান্নান। হান্নানের পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন আরেক আলোচিত র্যাপার সেজান। ‘কথা ক’ গান দিয়ে সাধারণ শ্রোতাদের মধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন সেজান। মঞ্চে গানটি ধরলে শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া ফেলে।
বিরতির পর সাড়ে পাঁচটার দিকে মঞ্চে এল রক ব্যান্ড আফটারম্যাথ। মাইক্রোফোন হাতে ব্যান্ডের ভোকালিস্ট নাভিদ ইফতেখার চৌধুরী শ্রোতাদের বললেন, ‘এর আগে কখনোই আর্মি স্টেডিয়ামে আফটারম্যাথ কনসার্ট করেনি। প্রথমবারের মতো আর্মি স্টেডিয়ামে গাইছি। এবার স্বপ্ন পূরণ হলো।’
আজ আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্টে শুরুতেই ব্যান্ডটি গেয়েছে তরুণদের মধ্যে আলোচিত গান ‘অধিকার’। এরপর ‘উৎসর্গ’, ‘মাটির রোদ’সহ কয়েকটি গান পরিবেশন করেছে আফটারম্যাথ। তাদের পরিবেশনার পরে সন্ধ্যায় ইকোস অব রেভল্যুশন কনসার্টে মঞ্চে আসে চিরকুট। শুরুতে বাদ্যযন্ত্রীরা জাতীয় সংগীতের সুর তোলেন। স্টেডিয়ামে দর্শকের আসনে বসে থাকা শ্রোতারা জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।
এরপর দেশাত্মবোধক গান ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সুমি। এরপর ‘মরে যাব’, ‘জাদুর শহর’, ‘আহারে জীবন’-এর মতো ঘোরলাগা ছড়িয়ে দেয় ব্যান্ডটি। মোলায়েম সুরের এসব গানে যাতনা খুঁজে ফিরেছেন শ্রোতারা। পরিবেশনা শেষে চিরকুট মঞ্চ ছাড়ার আগে দর্শকেরা মুহুর্মুহু করতালিতে ব্যান্ডটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে আর্মি স্টেডিয়ামে ইকোস অব রেভল্যুশন কনসার্টে মঞ্চে উঠে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধসহ আন্দোলনে আহত আতিকুর রহমান, খোকন চন্দ্র বর্মণ শহীদ আহনাফের মা এবং শহীদ সৈকতের বোন।
আয়োজকেরা জানান, এই কনসার্ট থেকে আয় হওয়া অর্থ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে দেওয়া হবে।