আইয়ুব বাচ্চু তাঁর রুপালি গিটার ফেলে গেছেন ছয় বছর পার হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ডের গানে সারা দেশের মানুষের প্রিয় হয়ে ওঠেন। দেশের বাইরের বাঙালিদের কাছেও ছিল তাঁর জনপ্রিয়তা। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মারা যান তিনি। চট্টগ্রামে তাঁকে সমাহিত করা হয়। আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে মৃত্যুর এক বছর পার হওয়ার আগেই চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে ‘রুপালি গিটার’ নামে স্মারক ভাস্কর্য নির্মাণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। দীর্ঘদিন ধরে ভাস্কর্যটি অযত্নে–অবহেলায় পড়ে ছিল। পরিষ্কার করা হয়নি তা। সচেতনতার অভাবে ভাস্কর্যের পুরো জায়গাটা ছিল অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন। আইয়ুব বাচ্চুর ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী মোহাম্মদ মহসিনের উদ্যোগে গতকাল রোববার ভোরে রুপালি গিটারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলে।
মোহাম্মদ মহসিন তিনি আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুপালি গিটার প্রাণের একটা বিষয়। সব সময় ওখানে গেলে তা দেখার চেষ্টা করি। অপরিষ্কার–অপরিচ্ছন্ন দেখার পর কষ্ট লাগে। এ–ও ভাবছিলাম, এটা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব কার? এরপর অন্যকে দোষারোপ না করে ভাবলাম, আমিই নাহয় উদ্যোগ নিই। তারপর এ নিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিই।’
কয়েক দিন আগে রুপালি গিটার পরিষ্কারে আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ মহসিনের সেই ফেসবুক পোস্ট ছিল এ রকম, ‘আমরা সবাই খুবই পছন্দ করি এই রুপালি গিটারের সঙ্গে সেলফি তুলতে। আজকে ছবি তুলতে গিয়ে এই অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট লাগল। এটা কার দায়িত্ব আমি জানি না, তবে আমি মনে করছি এটা আমারই দায়িত্ব। আগামী ৮ ডিসেম্বর সকাল ছয়টার সময় আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাজির থাকব জায়গাটা পরিষ্কার করার জন্য। আপনারাও আমন্ত্রিত।’
মোহাম্মদ মহসিন জানান, তাঁর দেওয়া সেই পোস্টে অনেকেই সাড়া দেন। এরপর গতকাল সকালে সেখানে অনেকেই উপস্থিত হন। এরপর একসঙ্গে সবাই মিলে রুপালি গিটার পরিষ্কারের কাজ করেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে ১৮ ফুট উচ্চতা ও ৬ ফুট প্রস্থের এই রুপালি গিটারের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। গিটারের পাশে আছে পানির ফোয়ারা ও আলোকসজ্জা। ধীরে ধীরে প্রবর্তক মোড়ের রুপালি গিটার শহরের মানুষ ও দর্শনার্থীদের কাছে আবেগের একটা জায়গায় পরিণত হয়। সম্প্রতি সোলস ব্যান্ডের পার্থ বড়ুয়াকেও সেখানে গিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে। মোহাম্মদ মহসিন জানান, প্রবর্তক মোড়ে রুপালি গিটারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সবাই খুব আকর্ষণ বোধ করেন। বাচ্চু ভাই তাঁদের প্রাণের মানুষ ছিলেন। তাই ভাস্কর্যের দুরবস্থা দেখে এই উদ্যোগ নিয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলে।
এদিকে রুপালি গিটার পরিষ্কারের ঘটনাটি নজরে এসেছে আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার চন্দনারও। পরিচ্ছন্নতার ভিডিটিও নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘অনেক অনেক শ্রদ্ধা চট্টগ্রামের মিউজিশিয়ানদের এবং যাঁরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত হলেন। বিশেষ করে পিএইচপি গ্রুপের মহসিন ভাইকে আমি ও আমার পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা। আইয়ুব বাচ্চু কোনো রাজনৈতিক দলের নন। তিনি সারা পৃথিবীর বাংলাভাষী গানপ্রেমী মানুষের আইয়ুব বাচ্চু। এভাবেই তাঁকে সারা জীবন ভালোবাসায় রাখবেন, তিনি এ দেশের গর্ব, রত্ন।’