সান আবিদুর রেজা জুয়েল
সান আবিদুর রেজা জুয়েল

আমিও ‘ছ্যাঁকা খাওয়া’ ছেলেদের শিল্পী হয়ে রইলাম, সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন জুয়েল

উৎকর্ষ ও জনপ্রিয়তায় গত শতকের শেষের দিকে তুঙ্গে পৌঁছে যায় ব্যান্ড সংগীত। সে সময় একেবারে ব্যতিক্রম একটি কণ্ঠ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল।
‘রোমান্টিক-স্যাড’ ঘরানার গান করে শ্রোতামহলে আলোচিত হয়েছেন এই শিল্পী। গানের পাশাপাশি টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতা ও উপস্থাপক হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে না–ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন জুয়েল। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি।

কেন তিনি রোমান্টিক–স্যাড ঘরানার গান করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ২০১৭ সালে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে আবিষ্কার করেছিলেন বাচ্চু ভাই (আইয়ুব বাচ্চু)। বলেছিলেন, “গাও”। তিনি বাজিয়েছেন, আমি গেয়েছি। আমার কণ্ঠ শুনে তিনিই ঠিক করে দিয়েছিলেন যে আমাকে “রোমান্টিক-স্যাড ব্যালাড” ধরনের গান গাইতে হবে। প্রথম অ্যালবাম “কুয়াশা প্রহর” করেছিলেন তিনি।’
জুয়েলের ভাষ্যে, ‘এরপর যা হওয়ার তাই হলো। একবার কমেডিয়ান চরিত্রে ভালো করলে সারা জীবন তাকে কমেডিয়ান হিসেবেই কাজ করতে হয়। আমার ক্ষেত্রে সবাই ধরেই নিলেন, জুয়েলের জন্য এ রকম সুরের গানই করতে হবে। আমিও তেমন “ছ্যাঁকা খাওয়া” ছেলেদের শিল্পী হয়ে রইলাম।’

নিজের ক্যারিয়ারের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকাকালে গানে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন জুয়েল। কোনো অভিমান ছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি আসলে কখনোই ফুলটাইম মিউজিশিয়ান ছিলাম না। আমার একটা ভিন্ন ক্যারিয়ার ছিল। গানকে আমি রুটিরুজি করতে চাইনি। কারণ, যখনই কোনো প্রতিষ্ঠান বুঝবে যে গান গেয়ে আপনার বাচ্চার দুধ কিনতে হবে, তখনই সে আপনাকে কোথাও কিনবে, কোথাও বেচবে। আমি তাদের কাছে বিক্রি হতে চাইনি।’

জুয়েল বলেছিলেন, ‘আমি বুঝেছি যে, তাদের হাতে নিজেকে সঁপে দিলে তারা আমার গানকে নিয়ন্ত্রণ করবে। দেখা যাবে, যেসব গান আমাকে মানায় না, তেমন গানও গাইতে হচ্ছে। তখন আপনারাই বলবেন, আমি কেন এসব গাইলাম? সে জন্য শুরুতেই আমি একটা ভিন্ন ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছি। গান ছিল সেকেন্ডারি।’
জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘এক বিকেলে’ (১৯৯৪), ‘আমার আছে অন্ধকার’ (১৯৯৫), ‘একটা মানুষ’ (১৯৯৬), ‘দেখা হবে না’ (১৯৯৭), ‘বেশি কিছু নয়’ (১৯৯৮), ‘বেদনা শুধুই বেদনা’ (১৯৯৯), ‘ফিরতি পথে’ (২০০৩), ‘দরজা খোলা বাড়ি’ (২০০৯) এবং ‘এমন কেন হলো’ (২০১৭)।