বাবা সায়গল
বাবা সায়গল

কোথায় হারিয়ে গেলেন নব্বইয়ের সেই জনপ্রিয় শিল্পী বাবা সায়গল

হাতে হাতে তখনো মুঠোফোন পৌঁছায়নি। তবে তরুণদের জীবনে ‘নতুন জোয়ার’ এনে দিয়েছে স্যাটেলাইট টেলিভিশন। ডিশ অ্যানটেনার কল্যাণে তখন চোখের সামনে খুলে গেছে কত কত বিদেশি চ্যানেল। রিকি মার্টিন, মাইকেল জ্যাকসন, ম্যাডোনা বা কুইনের ভক্তরা চ্যানেল ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎই আবিষ্কার করেন তাঁকে। এমটিভি খুললেই দেখা মিলত তাঁর। একটু জমজমাট মফস্বল শহরের বনেদি দোকানে ঢুঁ মারলে মিলত গোটা অ্যালবামও।

একা আর মিউজিক ভিডিওর রমরমার যুগের অনেক আগে তখন গান মানেই ছিল ক্যাসেট। অনেক যত্নে রাখা টেপ রেকর্ডারে ক্যাসেটের ফিতা ঘুরতেই বেজে উঠত চেনা সুর। কখনো ‘দিল ধাড়কে’, ‘আজা মেরি গাড়ি মে বেঠ জা’ কখনো বা ‘ঠান্ডা ঠান্ডা পানি’। সেই শিল্পী বাবা সায়গল নব্বইয়ে এসেছিলেন ঝড়ের মতোই। ভারতের প্রথম র‍্যাপার বলা হয় তাঁকে। তবে যেমন ঝড়ের মতো এসেছিলেন, হারিয়েও গেলেন তেমনি ঝড়ের মতোই। কিন্তু তাঁর মতো এত জনপ্রিয় কীভাবে স্রেফ ‘হাওয়া’ হলেন? একটু সলুক-সন্ধান করে দেখা যাক।  

বাবা সায়গলের জন্ম লক্ষ্ণৌতে। পড়াশোনা উত্তরাখন্ডের জিবি পান্ট ইউনিভার্সিটি অব অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে। তবে পড়ার বিদ্যা কাজে না লাগিয়ে সায়গল মজে গেলেন গানে। নব্বইয়ের দশকে একের পর এক ভারতীয় শিল্পী হাজির হয়েছিলেন স্বাধীন ঘরানার গান, অ্যালবাম নিয়ে।

১৯‍৯০ সালে সায়গলের প্রথম অ্যালবাম ‘দিলরুবা’ মুক্তি পায়। এক্স থেকে

হিন্দি সিনেমার মেলোডির বাইরে যা শ্রোতাদের দিয়েছিল নতুনত্বের স্বাদ। বিশেষ করে তরুণেরা যেন এমন কিছুর জন্যই অপেক্ষা করেছিল। ফেসবুক, এক্স আর ইনস্টাগ্রামে তখন শিল্পীদের অনুসরণের সুযোগ নেই, তবে শহর বা মফস্বলের তরুণদের ঘরে উঁকি দিলে ঠিকই দেখা যেত বাবা সায়গলের পোস্টার দেয়ালে সাঁটা রয়েছে।

১৯‍৯০ সালে সায়গলের প্রথম অ্যালবাম ‘দিলরুবা’ মুক্তি পায়। পরের দুই বছর আসে আরও দুই অ্যালবাম—‘আলিবাবা’ ও ‘ঠান্ডা ঠান্ডা পানি’। শেষেরটি বিক্রি হয় ৫০ লাখের বেশি! এরপর নব্বইয়ের দশকের প্রায় প্রতিবছরই মুক্তি পেয়েছে তাঁর অ্যালবাম। তিনিই প্রথম ভারতীয় শিল্পী, যাঁর গানের মিউজিক ভিডিও এমটিভি এশিয়ায় প্রচারিত হয়েছিল। ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাবা সায়গলের ২২টি অ্যালবাম মুক্তি পায়। এরপরই ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকেন বাবা সায়গল।

গান ছাড়া অভিনয়, সঞ্চালনাও করেছেন বাবা সায়গল। ১৯৯৮ সালে হিন্দি সিনেমা ‘মিস ৪২০’ দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমা ‘হেলিকপ্টার এলা’তে দেখা গেছে তাঁকে। পরে অভিনয় করেছেন ভারতের বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রে। করেছেন হিন্দি সিনেমার সংগীত পরিচালনাও। এত কিছু করতে গিয়েই হারিয়ে গেলেন তিনি?

বাবা সায়গল

ভারতের এই সময়ের হিন্দি সিনেমার অন্যতম শীর্ষ পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তা মনে করেন না। তাঁর মত, পরিকল্পিতভাবেই বাবা সায়গলের মতো ইন্ডি ঘরানার শিল্পীদের কার্যত নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে বলিউড। সম্প্রতি দিবাকর হাজির হয়েছিলেন ইউটিউব চ্যানেল ‘আনফিলটার্ড বাই সমদীশ’-এ।

এই ইউটিউব চ্যানেলে কথা প্রসঙ্গে দিবাকর বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের ভারতের ইন্ডি সংগীত কত শক্তিশালী ছিল, আমরা সবাই এমটিভি দেখতাম। কিন্তু ২০০৪ সালের দিকে এমন অবস্থা করা হলো যে বাবা সায়গলের মতো শিল্পীরাও হিন্দি সিনেমার জন্য গাইতে বাধ্য হন।’

বাবা সায়গল

একই সাক্ষাৎকারে দিবাকর আরও বলেন, ইন্ডি ধারার গানের মতোই ইন্ডি ঘরানার সিনেমাগুলোকেও জায়গা দেয় না বলিউড।

বাবা সায়গল এখনো হিন্দি সিনেমায় মাঝেমধ্যে প্লেব্যাক করেন, প্রকাশ করেন নিজের আলাদা গানও। তবে সেখানে নব্বইয়ের সেই বাবা সায়গলকে খুঁজে পাওয়া যায় কি?