তাঁর প্রথম অ্যালবাম হিট, প্রথমবার পর্দায় হাজির হয়েও সফল। কিছুদিন আগেই অস্কার মঞ্চে নাচে, গানে ঝড় তুলেছেন। সব মিলিয়ে লালিসা মানোবান হয়ে উঠেছেন সারা দুনিয়ার তরুণদের প্রিয় তারকা, এই সময়ের পপ কালচারের অন্যতম মুখ।
কোরীয় ভাষায় আনাড়ি ছিলেন লালিসা মানোবান, যিনি লিসা নামে পরিচিত। তিনি থাইল্যান্ডের মেয়ে; জন্ম ও বেড়ে ওঠা বুরিরাম প্রদেশে। থাই ভাষার সঙ্গে ইংরেজি, জাপানি ভাষাটা টুকটাক পারতেন। তবে কোরীয় ভাষায় দখল ছিল না। সেই ‘বহিরাগত’ লিসাই কে–পপে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পেলেন।
২০১০ সালে ব্যাংককে অডিশন নেয় কোরীয় বিনোদন সংস্থা ওয়াইজি এন্টারটেইনমেন্ট। এক হাজারের বেশি প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে টিকেছেন লিসা। তখন মাত্র ১৩ বছর। মা–বাবাকে ছেড়ে সিউলে পাড়ি দেন। তখনো কে–পপ ইন্ডাস্ট্রিতে ‘বহিরাগত’ শিল্পীদের খানিকটা বাঁকা চোখেই দেখা হতো।
একে তো বয়স কম, তার ওপর অচেনা দেশ, ভাষা ও সংস্কৃতি—পথটা কাঁটায় ভরা ছিল। ওয়াইজি এন্টারটেইনমেন্টের ডরমিটরিতে কড়া নিয়মের বেড়াজালে দাঁতে দাঁত চেপে ছিলেন লিসা। টিকে থাকার লড়াইয়ে কখনো কখনো হাঁপিয়ে উঠেছেন। স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে মা–বাবার কাছেও ফেরার চিন্তা করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোবলটা ধরে রেখেছিলেন লিসা।
সেই প্রশিক্ষণের দিনগুলো কেমন ছিল, তা নিয়ে ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সের তথ্যচিত্র ব্ল্যাকপিংক: লাইটআপ দ্য স্কাই-এ কথা বলেছেন ব্ল্যাকপিংকের সদস্যরা। শুরুতে একে অপরের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল, তবে দূরত্ব বাড়তে থাকে। ক্রমেই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ পরিবারের কথা ভেবে কান্নায়ও ভেঙে পড়েন।
বিরুদ্ধ সময়ে কীভাবে মনোবল ধরে রেখেছিলেন লিসা? সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে লিসা বলেন, ‘আমাকে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছিল। আমার সবটুকু দিয়ে আমি চেষ্টা চালিয়ে গেছি। কতটা সময় লাগবে, তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা ছিল না। আমি নিজেকে বলেছিলাম, “চালিয়ে যাও। ”’
অল্প সময়ের ব্যবধানে কোরীয় ভাষা রপ্ত করে ফেলেন লিসা। লিসার সাবলীল উচ্চারণে বাকিরা রীতিমতো অবাক হয়েছেন। ভাষার সঙ্গে গায়কি, নৃত্যেও নিজেকে শাণিত করেছেন তিনি। তাঁর দৃঢ় মনোবল অন্যদের সাহস জুগিয়েছে। ব্ল্যাকপিংকের আরেক সদস্য জেনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে, যাদের জন্মই হয়েছে এটা (কে-পপ) করার জন্য।’
প্রথম একক অ্যালবাম
২০১৬ সালে কোরীয় ব্যান্ড ব্ল্যাকপিংকে নাম লেখানোর পর দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন লিসা। আট বছরের ক্যারিয়ারে গান কিংবা নৃত্যে কে–পপে এতটাই লীন হয়েছেন, শ্রোতাদের কেউ কেউ তাঁকে কোরিয়ান ভেবে ভুল করেন।
একক ক্যারিয়ারে ‘লালিসা’ ও ‘রকস্টার’ প্রকাশ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন লিসা। এবার প্রথম একক অ্যালবাম অলটার ইগো প্রকাশ করেছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত অ্যালবামটি সাড়া ফেলেছে। বিলবোর্ডের তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ‘বিলবোর্ড ২০০’ তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে ‘অলটার ইগো’।
অ্যালবামে ‘থান্ডার’, ‘লাইফস্টাইল’, ‘চিল’, ‘ড্রিম’সহ মোট ১৫টি গান রয়েছে। অ্যালবামে পাঁচটি চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেছেন লিসা। চরিত্রগুলো হলো রক্সি, সুন্নি, কিকি, ভিক্সি ও স্পিডি। গায়িকা জানান, বছর কয়েক আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি, সেখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার গান শোনেন। এটি তাঁকে বৈচিত্র্যময় পাঁচ চরিত্র নিয়ে অ্যালবামটি করতে অনুপ্রাণিত করেছে।
এই অ্যালবামে বেশ কয়েকজন বিশ্বতারকার সঙ্গে গান করেছেন লিসা। এর মধ্যে মার্কিন র্যাপার মেগান থি স্টেলিয়ন, টাইলাসহ আরও অনেকে রয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি কোচেলা ভ্যালি মিউজিক অ্যান্ড আর্ট ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রণ পেয়েছেন লিসা। এপ্রিলে একক শিল্পী হিসেবে গাইবেন তিনি।
অভিনয়েও অভিষেক
গানের বাইরে অভিনয়েও অভিষেক ঘটেছে লিসার। এইচবিও ম্যাক্সের ওয়েব সিরিজ দ্য হোয়াইট লোটাস-এর তৃতীয় মৌসুমে অভিনয় করেছেন লিসা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজে ‘মক’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিসা। এই গায়িকা-অভিনেত্রী ভ্যারাইটিকে বলেন, ‘এখনকার অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো মুশকিল। আমি রোমাঞ্চিত। সবাই যে পুরো মৌসুম কবে দেখবে, তর সইছে না।’
প্রথমবার অভিনয়, তাই কোনটা করলে ভালো হবে, কোনটা করলে হবে না, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা লিসার ছিল না। তাঁকে সিরিজের সহশিল্পীরা দারুণ সহযোগিতা করেছেন; এ জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেননি ২৭ বছর বয়সী এই তারকা।
ভ্যারাইটির সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারে লিসা জানিয়েছেন প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা, ‘যখন “অ্যাকশন” বলা হয়, প্রচণ্ড নার্ভাস হয়ে পড়ি। খুব ঘামছিলাম। মনে হচ্ছিল, নিজের সংলাপগুলো ভুলে বসে আছি; পুরো মাথা খালি।’
চলতি মাসে প্রথম কে-পপ তারকা হিসেবে অস্কারে পারফর্ম করেছেন লিসা। এবারের অস্কারে জেমস বন্ডকে উৎসর্গ করে ছিল একটি বিশেষ পরিবেশনা, সেখানেই পারফর্ম করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জিমি কিমিলের শোতে তিনি বলেন, পারফরম্যান্স নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় ছিলেন তিনি। লিসা বলেন, ‘শুরুতে আমাকে অনেক উঁচু থেকে দড়ি বেয়ে নেমে আসতে হয়েছে। কয়েকবার অনুশীলন করেছি কিন্তু এটা ঠিকঠাকভাবে হবে কি না, এটা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম।’