বিদায় ‘হাইস্কুল সুইটহার্ট’

‘গ্রিজ’ ছিল অলিভিয়ার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কাজ
ছবি : সংগৃহীত

গায়িকা হিসেবে চারবার গ্র্যামি জিতেছেন। তবে অনেক ভক্তের কাছে এখনো তিনি ‘গ্রিজ’ ছবির ‘স্যান্ডি’ হিসেবেই পরিচিত। হবেনই–বা কেন, ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে জন ট্রাভেলটার বিপরীতে অভিনয় করে রাতারাতি তারকা বনে যান। সত্তরের দশকে বড় হয়েছেন, গান-সিনেমার প্রতি আগ্রহ ছিল অথচ তাঁকে চেনেন না, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। সেই গায়িকা-অভিনেত্রী অলিভিয়া নিউটন-জন মারা গেছেন। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ৭৩ বছর বয়সে অলিভিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে এএফপি। তবে মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি। ১৯৯২ সালে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর তিন দশক ধরে এ রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তৃতীয়বারের মতো ক্যানসার ধরা পড়েছে তাঁর।

১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে জন ট্রাভেলটার বিপরীতে অভিনয় করে রাতারাতি তারকা বনে যান অলিভিয়া

‘গ্রিজ’ ছিল অলিভিয়ার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কাজ। ছবিতে ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’ হিসেবে তাঁর পারফরম্যান্স কে ভুলতে পারেন। স্কিন টাইট কালো প্যান্ট, গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা স্কার্ট আর ঢেউখেলানো চুলের ‘স্যান্ডি’কে এত দশক পরও মনে রেখেছেন দর্শক। এ ছবির পরই বিশ্বজুড়ে ‘হাইস্কুল সুইটহার্ট’ হিসেবে খ্যাতি পান তিনি। মুক্তির পর তিন দশক ধরে সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল মিউজিক্যাল ছবি হয়ে ছিল ‘গ্রিজ’। প্রিয় ‘স্যান্ডি’র মৃত্যুর পর ‘ড্যানি’ চরিত্রে অভিনয় করা জন ট্রাভেলটা এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘প্রিয়তম অলিভিয়া, তুমি আমাদের সবার জীবন আরও উপভোগ্য করছ। তোমার প্রভাব অবিশ্বাস্য।’

১৯৭১ সালে প্রথম অ্যালবাম মুক্তির পর ২০১৬ পর্যন্ত গেয়ে গেছেন অলিভিয়া

গায়িকা হিসেবেও তাঁর রেকর্ড অনন্য। ১৯৭১ সালে প্রথম অ্যালবাম মুক্তির পর ২০১৬ পর্যন্ত গেয়ে গেছেন অলিভিয়া। দীর্ঘ পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে চারবার গ্র্যামি জিতেছেন। তাঁর ১০টি সিঙ্গেল বিলবোর্ড হট হানড্রেডের শীর্ষে জায়গা পায়। ১০০ মিলিয়ন কপির বেশি বিক্রি হয়েছে তাঁর গান। গত শতকের যেসব শিল্পীর গান সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে, অলিভিয়া ছিলেন তাঁদের একজন।

অলিভিয়া স্মরণে গোলাপি অপেরা হাউস

১৯৪৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে জন্ম হয় অলিভিয়ার। পরিবারে তিন সন্তানের মধ্যে ছোট ছিলেন তিনি। তাঁর নানা নোবেলজয়ী পদার্থবিদ মাক্স বর্ন। ছয় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। বড় হওয়ার পর নিজেকে পরিচয় দিতেন অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে। অস্ট্রেলিয়াও শিল্পীকে বড় আপন ভাবত। মৃত্যুর পর ‘ফিজিক্যাল’ গায়িকা অলিভিয়া স্মরণে সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউস গোলাপি রঙে সাজানো হয়।

মৃত্যুর পর হলিউড ওয়াক অব ফেমে ভক্তদের প্রদ্ধা

মৃত্যুর আগপর্যন্ত ক্যানসার সচেতনতা নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। নিজের অনেক গান ও কনসার্ট উৎসর্গ করেছেন ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের। কথা বলেছেন তিন দশক ধরে ক্যানসারের সঙ্গে নিজের লড়াই নিয়ে। কিছুদিন আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্টির কথাই শুনিয়েছিলেন অলিভিয়া, ‘আমি সবকিছু করেছি। ফলে এখন যা হচ্ছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

মৃত্যুর আগপর্যন্ত ক্যানসার সচেতনতা নিয়ে কাজ করেছেন অলিভিয়া