বছরের শুরুতে মাস তিনেকের বেশি সময় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন বাংলা গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমীন। এরপর ঢাকায় ফিরে আবার নিয়মিত চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে হয়। এদিকে লম্বা সময় ধরে সাবিনার দেশের বাইরে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে থাকা গানের ভক্ত–শুভাকাঙ্ক্ষীরা চিন্তায় পড়েন। জানতে চান, কেমন আছেন তাঁদের প্রিয় শিল্পী। আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় সাবিনা ইয়াসমীনের। জানালেন, তিনি আগের চেয়ে অনেকে ভালো আছেন। চলছে সংগীতচর্চাও।
সাবিনা ইয়াসমীনের পেশাদার গানের জীবন ছয় দশকের বেশি সময়। এই দীর্ঘ সময়ে আজ পর্যন্ত কোনো দিন রেওয়াজ থেকে নিজেকে দূরে রাখেননি খুব বেশি অসুস্থ না হলে। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আলাপ প্রসঙ্গে জানালেন, ‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর অনেক সময় ধরে রেওয়াজ করেছি। এটা আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত করলাম। তবে সকাল কিংবা বিকেল নয়, যখনই মন চায় তখনই রেওয়াজ করি।’
সাবিনা ইয়াসমীনের একাকী জীবন। বাসার সব কাজকর্ম তাঁকে একাই সারতে হয় বলেও জানালেন। তাই গানের ব্যস্ততা আপাতত না থাকলেও সাংসারিক কাজের ব্যস্ততায় সময় পার হয়ে যায়। তাঁর ভাষায়, ‘একটা সংসারে আসলে কত রকমের কাজ থাকে, তার কোনো হিসাব নেই। আমার তো মাঝেমধ্যে মনে হয়, আরও সময় পেলে ভালো হতো। আরও অনেক কাজ করা যেত।’
ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশে সাবিনা ইয়াসমীন বললেন, ‘আল্লাহপাকের অশেষ রহমত, আপনাদের সবার দোয়া ও চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। সুস্থ আছি। স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর ফলোআপের জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়া লাগবে।’
গত ফেব্রুয়ারিতে গুঞ্জন ওঠে, আবারও ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে জোর চর্চা। শুধু তা-ই নয়, সাবিনা ইয়াসমীনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করে মূলধারার বেশ কিছু গণমাধ্যমও। এমনকি ভারতীয় গণমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের বরেণ্য এই সংগীতশিল্পীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য। আসল সত্যটা কী? সবকিছু খোলাসা করে তখন দেশবাসীর প্রতি বার্তা পাঠান সাবিনা ইয়াসমীন। সেই বার্তায় তিনি বলেছিলেন, নিয়মিত চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে তিনি। একই সঙ্গে নিজের বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যম থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য পাচ্ছেন বলেও জানান শিল্পী নিজে।
সাবিনা ইয়াসমীনের ভাষ্য, ‘আমি আপনাদের সাবিনা ইয়াসমীন। প্রতিবছরই নিয়মিত চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর যেতে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার চেকআপে এসে আমার দাঁতে একটু সমস্যা দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ফেব্রুয়ারি আমার দাঁতে ছোট একটি সার্জারি হয়, যা সফল হয়। এরপর চিকিৎসক যেভাবে বলবেন, সেভাবেই চলব।’
ছয় দশক ধরে গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাবিনা ইয়াসমীনের নাম। গেয়েছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত দুই শিল্পী মান্না দে ও কিশোর কুমারের সঙ্গেও। চলচ্চিত্রে গান গেয়ে ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন কিংবদন্তি এই শিল্পী। সংগীতে অবদানের জন্য একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কারও অর্জন করেছেন তিনি। ১৯৬২ সালে রবীন ঘোষের সুরে প্রথম ছোটদের গানে কণ্ঠ দেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে অভিনেত্রী কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবিতে কণ্ঠ দেন। শুধু তা-ই নয়, প্রথমবার সুরকার হিসেবে ছবিটির চারটি গানের সুরও করেন সাবিনা ইয়াসমীন।
মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার স্টেজে গান করেছেন সাবিনা; ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এরপর আর ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বাপ্পি লাহিড়ী, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মতো সুরকারদের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গান কণ্ঠে তুলেছেন তিনি। সহশিল্পী হিসেবে কুমার শানু, আশা ভোঁসলে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীকে পেয়েছেন তিনি। শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সাবিনা ইয়াসমীন।