দুই দশকের বেশি সময় ধরে ব্যান্ড চিরকুট নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরছেন শারমীন সুলতানা সুমী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে যাত্রা শুরু গানের দলটি নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড স্করয়পিয়নসের সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করেছেন। ২০২২ সালের শেষ দিকে চিরকুট ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য সুমী বিশ্বের বড় দুটি সংগীত উৎসবেও অংশ নেন। গত বছর নরওয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হন কি-নোট স্পিকার (মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক) হিসেবে। আজ বুধবার জানালেন, অন্য রকম একটি খবর। বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অতিথি শিক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
চিরকুট ব্যান্ড বেশ কিছুদিন ধরে স্টেজ শো নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছে। ঈদের পর তাদের ব্যস্ততা আরও বাড়বে, এমনটাই জানা গেছে। চলছে তাদের নতুন অ্যালবামের কাজও। এর মধ্যে দলের অন্যতম সদস্য সুমীর এমন একটি খবরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত অন্য সদস্যরাও। এদিকে সুমী তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে আগামী ২২ মার্চ আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডার স্কুল অব মিউজিক ডিপার্টমেন্টের একটি ক্লাসে অতিথি প্রভাষক হিসেবে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটি ওই ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের সামনে অনলাইন; অর্থাৎ জুমে হবে।’
সুমী বললেন, ‘গত বছরের নভেম্বরে নরওয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কি-নোট স্পিকার হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। একটি সেশনে কি-নোট স্পিকার আর তিনটা সেশনে উইমেন অ্যান্ড মিউজিক, মিউজিক অ্যান্ড ক্লাইমেট এবং মিউজিক বিজনেস নিয়েও ক্লাস নিয়েছি, যা ছিল আমার জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে সুমী বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালে বেঙ্গালুরুতে মিউজিক এডুকেশন নিয়ে একটা গ্লোবাল কনফারেন্স অংশ নিই। সেখানে অধ্যাপক কাঘোন্দি এসেছিলেন। ওই কনফারেন্সে আমার বক্তব্য শুনে তিনি মুগ্ধতার কথা জানান। তিনি এখন ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডার স্কুল অব মিউজিক ডিপার্টমেন্টে আছেন। দুই মাস আগে আমাকে প্রস্তাব দেন, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ক্লাস নিতে। এরপর বললেন, তুমি তো আসতে পারবে না, অনলাইনে ক্লাস নাও। আমি বললাম, সেটা আমার জন্য সুবিধার হয়। প্রফেসর কাঘোন্দি আমাকে জানিয়েছেন, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভীষণ এক্সাইটেড, আমার কথা ও আমাদের ব্যান্ডের কথা শুনতে।’
কথায় কথায় সুমী বললেন, ‘প্রধান কথা হচ্ছে, বাংলা মিউজিক নিয়ে যে একাডেমিক পর্যায়ে আগ্রহ বেড়েছে, এটা যে আমরা করতে পেরেছি—যেখানে গবেষণা হয়, নীতিনির্ধারণী হয়, সেসব জায়গায় বাংলা মিউজিক নিয়ে এই আগ্রহের ব্যাপারটি আমার জন্য শান্তির বা স্বস্তির জায়গা।’
যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন একটি আমন্ত্রণ পেয়ে ভীষণ আনন্দিত ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সুমী।
তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বপরিসরে বাংলা গানের গৌরবকে নানাভাবে ছড়ানোর সুযোগ আমাকে আরও একবার করে দেওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে সব সময়ের মতো অসীম কৃতজ্ঞতা। কৃতজ্ঞতা আমার চিরকুট টিম মেম্বারদের প্রতি। আমার শক্তি তো ওরাই। ধন্যবাদ জানাই অধ্যাপক কাঘোন্দি ওয়ামওয়া এমওয়াঙ্গার প্রতি, যিনি আমাকে বিশ্বাস করেছেন, এই সম্মানের সুযোগ দিয়েছেন। আপনি সত্যি অসাধারণ একজন মানুষ। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষক হিসেবে আমার জীবনে নতুন আরেকটা অধ্যায় রচিত হবে, যা করতে আমি সত্যিই ভীষণ ভালোবাসি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা, ভাবনার আদান-প্রদান, তাঁদের চিন্তা, সৃজনশীলতা ও সংগীতের জগৎ জানা; আমাকেও একরকম সমৃদ্ধ করা।’