গানে গানে দুই দশক পার করেছে চিরকুট। পথচলার দুই দশক উদযাপন করতে আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি, যেখান থেকে তাদের শুরু, সেই টিএসসিতে বিশেষ কনসার্টের আয়োজন করেছে তারা। তার আগে ব্যান্ডটির হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন মনজুর কাদের।
চিরকুট ব্যান্ডের হয়ে এখন যাঁদের মঞ্চ মাতাতে দেখা যায়, শুরুর দিকে তাঁদের একজন ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। শারমিন সুলতানা সুমী,শোয়েব ও পারভেজ সাজ্জাদ—এই তিনজন মিলে ২০০২ সালে শুরু করেন চিরকুট। তাঁরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পথ চলতে চলতে এরপর অনেকে চলে যান, আবার অনেকে যুক্ত হন। এই আসা–যাওয়ার মধ্যে একজনই এখনো দলটাকে আগলে রেখেছেন। তিনি সুমী, চিরকুট ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। কেন এই যাওয়া–আসা, জানতে চাইলে সুমী বলেন, ‘আসলে একটা ব্যান্ডে সবার মতাদর্শ সমান হয় না। অনেকে আসছেন, অনেকে চলে গেছেন।
আগামীতেও অনেকে আসবেন। যত দিনই থেকেছেন, সবাই পরিবারের মতো থেকেছেন। শুরু থেকে চিরকুট সব মিউজিশিয়ানের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। শুধু মিউজিকই নয়, জীবনাচরণ, আইডিয়া, মূল্যবোধের সমন্বয়ে সবকিছুর মাধ্যমে এখানে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তারও চর্চা করা হয়।’ সুমী জানান, চিরকুটে আসা–যাওয়া সব সদস্য যে যেখানেই থাকুক, আমরা নিশ্চিত করব যে আমরা ভালো মিউজিক করব।’ বর্তমানে এই দলের অন্য সদস্যরা হলেন ইমন চৌধুরী, পাভেল আরীন ও জাহিদ নিরব।
দুই দশক আগে যাত্রা শুরু করা ব্যান্ডটির প্রথম গান ‘ঘরে ফেরা’ আর এখন পর্যন্ত শেষ প্রকাশিত গান ‘লালে লাগ’। দীর্ঘ পথচলায় তাদের তৈরি গানের সংখ্যা প্রায় ১৫০। ‘আহা রে জীবন’, ‘কানামাছি’, ‘মরে যাব’, ‘বন্ধু গো’, ‘কাটাকুটি’, ‘উধাও’, ‘একটা ছেঁড়া দিন’, ‘জাদুর শহর’, ‘দুনিয়া’, ‘এই শহরের কাকটাও জেনে গেছে’ কিংবা ‘খাজনা’-র মতো অসাধারণ সব গান শ্রোতাদের উপহার দিয়েছে। এসবের পেছনে রয়েছে নানা গল্প।
কী লক্ষ্য নিয়ে ব্যান্ড গড়েছিলেন এবং এ অবধি এসে কতটা সফল জানতে চাইলে সুমী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলা গানের ভান্ডারে নতুন কিছু গান প্রতিষ্ঠা করা। কিছুটা হয়তো পেরেছি। অনেকটা পথ বাকি। বাংলা গান শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন।’
প্রথম অ্যালবাম ‘চিরকুটনামা’ প্রকাশিত হওয়ার পর নাটক আর সিনেমার গানেও নাম লেখায় চিরকুট। নাটকে প্রথম গান ‘জাদুর শহর’ আর সিনেমায় ‘কানামাছি’। নাটক ও সিনেমায় সাফল্য পাওয়ার পর গান করার অনেক প্রস্তাব পায় চিরকুট। কিন্তু তারা তা লুফে নেয়নি। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যান্ড হিসেবে নিউইয়র্কের বিখ্যাত ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনেও গান শুনিয়ে এসেছে তারা। সাহস, তারুণ্য, উদ্দীপনা, অদম্য শক্তি—এ সবই ব্যান্ডটির অন্যতম শক্তি, জানান সুমী। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়েই বাংলা গান নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় চিরকুট, জানান সুমী।
দুই দশক পূর্তির আয়োজন
দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে আজ টিএসসিতে বিশেষ কনসার্টের আয়োজন করেছে চিরকুট। ‘টিএসসি টু ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন’ শিরোনামের এই কনসার্টের টিকিটের মূল্য ৫০০ টাকা। ব্যান্ডের সদস্য সুমী জানান, দেশ, চলচ্চিত্র, ফোক, জলবায়ু, জনতা—এমন নানা বিষয়ে আমরা নানা ধরনের গান করেছি। এই আয়োজনে সেসব বিষয় আলাদাভাবে গুরুত্ব পাবে। থাকবে টিএসসি থেকে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন পর্যন্ত যাত্রার গল্প।
এই আয়োজনে চিরকুটের সঙ্গে অতিথি হিসেবে পারফর্ম করবে এ সময়ের জনপ্রিয় পাঁচ বাংলা ব্যান্ড—ক্রিপটিক ফেইট, অ্যাশেজ, বাংলা ফাইভ, কাঁকতাল ও বাঙ্গু বিবি। একই মঞ্চে পরিবেশনায় অংশ নেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির দুর্গ, কোলস্ল ও ইনট্রয়েড। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন ব্যান্ড তারকা মাকসুদুল হক, ফোয়াদ নাসের বাবু ও নকীব খান। বিশেষ পরিবেশনায় অংশ নেবেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী জয়া আহসান।