চলতি বছর জনপ্রিয়তা পাওয়া বেশির ভাগ গান সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একদল তরুণ সংগীত পরিচালক। অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ সংগীত পরিচালকদের পাশাপাশি এসব তরুণের ওপর নির্ভরতা খুঁজছেন নির্মাতা, প্রযোজকেরা
চলতি বছর জনপ্রিয়তা পাওয়া বেশির ভাগ গান সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একদল তরুণ সংগীত পরিচালক। অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ সংগীত পরিচালকদের পাশাপাশি এসব তরুণের ওপর নির্ভরতা খুঁজছেন নির্মাতা, প্রযোজকেরা

সংগীত পরিচালনায় তারুণ্যের কেতন

‘সাদা সাদা কালা কালা’ ও ‘চলো নিরালায়’—‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’ চলচ্চিত্রের এই দুটি গান এখন দেশের আনাচকানাচে বাজছে। এ ছাড়া চলতি বছরের বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও নাটকের অনেক গানই জনপ্রিয় হয়েছে। ভক্ত–শ্রোতারা ফেসবুক, টিকটকে এসব গানের নানা ধরনের ভিডিও যেমন আপলোড করছেন; তেমনি গায়ক-গায়িকা, গীতিকারের পাশাপাশি প্রশংসা করছেন গান সৃষ্টির পেছনের মানুষদের।
চলতি বছর জনপ্রিয়তা পাওয়া বেশির ভাগ গান সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একদল তরুণ সংগীত পরিচালক। অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ সংগীত পরিচালকদের পাশাপাশি এসব তরুণের ওপর নির্ভরতা খুঁজছেন নির্মাতা, প্রযোজকেরা।

প্রথম চলচ্চিত্র ‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’-এ সংগীত পরিচালনা করেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন ইমন চৌধুরী

হাওয়ার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের সংগীত পরিচালক ইমন চৌধুরী। প্রথম চলচ্চিত্র মায়া: দ্য লস্ট মাদার-এ সংগীত পরিচালনা করেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন তিনি। ‘সাদা সাদা কালা কালা’ নিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে গানটি তৈরি করেছি। গীতিকার ও সুরকার হাশিম মাহমুদের কণ্ঠে গানটি ধারণের ইচ্ছা থাকলেও হয়ে ওঠেনি। শুনতে খুবই সাদামাটা মনে হলেও এই গানের মিউজিক করতে বেশ কষ্ট হয়েছে। কারণ, গানটিতে যে মিউজিক বাজানো হয়েছে, সেখানে একটি বাদে কোনোটিই পেশাদার বাদ্যযন্ত্র নয়। এগুলো থেকে সুর বের করা অনেক কঠিন। দিনের পর দিন আমরা কলস, থালাবাসন খোঁজার জন্য দোকানে দোকানে ঘুরেছি। নৌকার পাটাতন বানিয়েছি। এভাবেই গানের মিউজিক তৈরি হয়েছে।’ অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে সংগীত পরিচালনা করছেন ইমন। একক ক্যারিয়ারের বাইরে জনপ্রিয় ব্যান্ড চিরকুটের গিটারিস্ট, ম্যান্ডোলিনবাদক ও সংগীত পরিচালক তিনি।

‘চলো নিরালায়’ গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করে আলোচনায় নাভেদ পারভেজের

‘চলো নিরালায়’ গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা নাভেদ পারভেজের। এই গানের সংগীত পরিচালক এখন মা–বাবার সঙ্গে নিউইয়র্কে থাকেন। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক হয়েছে নিউইয়র্কের একটি প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করছি। সংগীতে পেশা অনিশ্চিত, তাই চাকরি শুরু করছি। শুধু ছুটির দিনে গানের কাজ করব। কারণ, গান আমার ভালোবাসা ও আবেগের বড় একটা জায়গা জুড়ে আছে।’
‘চলো নিরালায়’ গানটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে গানটি তৈরি করেছিলাম। গানটি শ্রোতারা পছন্দ করেছেন, সংগীত পরিচালক হিসেবে ভালো লাগছে। কিন্তু এই ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি।’ ২০১৪ সালে কিস্তিমাত ছবির ‘শুধু একবার বলো’ গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করে প্রথম আলোচনায় আসেন নাভেদ। তিনি সর্বশেষ কাজ করেন তালাশ সিনেমায়।

প্রথম চলচ্চিত্র ছুঁয়ে দিলে মন–এ সাজিদ সরকারের সংগীত পরিচালনায় তৈরি ‘তুমি ছুঁয়ে দিলে মন’ ও ‘শূন্য থেকে আসে প্রেম’ গান দুটি তাঁকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়

২০১০ সালে হাবিব ওয়াহিদের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করা সাজিদ সরকার প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন মন ফড়িংয়ের গল্পতে। এরপর একে একে অ্যাঙ্গরি বার্ড, বড় ছেলে, বুকের বাঁ পাশে, অদ্ভুত তো আপনিসহ ৫০টির বেশি নাটকে সংগীত পরিচালকের কাজ করেছেন তিনি। আবহ সংগীতের কাজ যেমন করেছেন, তেমনি নাটকের গানও তৈরি করেছেন। প্রথম চলচ্চিত্র ছুঁয়ে দিলে মন–এ তাঁর সংগীত পরিচালনায় তৈরি ‘তুমি ছুঁয়ে দিলে মন’ ও ‘শূন্য থেকে আসে প্রেম’ গান দুটি তাঁকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। এই সংগীত পরিচালকের কাজ করা সর্বশেষ চলচ্চিত্র নেটওয়ার্কের বাইরেতে ‘রূপকথার জগতে’ গানটিও শ্রোতৃপ্রিয়তা পেয়েছে।

কয়েক বছর ধরে নাটক আর বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করলেও শাহরিয়ার মার্সেলের অভিষেক হয়েছে চলচ্চিত্রের গানের সংগীত পরিচালনায়

এ সময়ের ব্যস্ততম সুরকার ও সংগীত পরিচালকদের একজন শাহরিয়ার মার্সেল। কয়েক বছর ধরে নাটক আর বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করলেও অভিষেক হয়েছে চলচ্চিত্রের গানের সংগীত পরিচালনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতে স্নাতক সম্পন্ন করা মার্সেল ৬০টির বেশি নাটকের গানে কাজ করেছেন। কোনো কোনো নাটকের আবহ সংগীতও করেছেন তিনি। সংগীতে নিজেকে আরও ভালোভাবে মেলে ধরতে মুম্বাই মিউজিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিক মিউজিক প্রোডাকশন ও সাউন্ড ডিজাইনিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনায় নিজেকে মেলে ধরতে চাই।’

আভ্রাল সাহির সংগীত পরিচালক হিসেবে বেশি আলোচনায় আসেন “বুক চিন চিন” গানটির নতুন করে সংগীতায়োজন করে

২০১৪ সালে ‘সাহির মিক্স’ অ্যালবাম দিয়ে পেশাদার গানের অঙ্গনে যাত্রা শুরু গায়ক ও সংগীত পরিচালক আভ্রাল সাহিরের। তবে আভ্রাল প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘পাঞ্জাবিওয়ালা’খ্যাত শিরিনের গানওয়ালি অ্যালবাম দিয়ে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতীয় শিল্পীদের সঙ্গেও কাজ করেছেন এই সংগীত পরিচালক। মুম্বাই মিউজিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিক মিউজিক প্রোডাকশন ও সাউন্ড ডিজাইনিংয়ে এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন বলে জানালেন আভ্রাল। কাজ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংগীত পরিচালক হিসেবে বেশি আলোচনায় আসি “বুক চিন চিন” গানটির নতুন করে সংগীতায়োজন করে। শিল্পী নাটকে এই গান প্রকাশের পর ভাইরাল হয়। কয়েক বছরের মধ্যে শতাধিক নাটকে সংগীত পরিচালনা ও আবহ সংগীতের কাজ করেছি।’

সংগীত পরিচালক তাহসীন আহমেদ সুর ও সংগীতের পাশাপাশি বেশির ভাগ গানে নিজেই কণ্ঠ দেন

সংগীত পরিচালক তাহসীন আহমেদ সুর ও সংগীতের পাশাপাশি বেশির ভাগ গানে নিজেই কণ্ঠ দেন। ২০১১ সালে নিজের সুর ও সংগীতের একক অ্যালবাম ‘ভালোবাসার রং’ বাজারে আসে। সে সময় অ্যালবামটির ‘ভালোবাসার রং’ গানটি বেশ আলোচিত হয়েছিল। এরপর ২০১২ ও ২০১৩ সালে দুটি মিশ্র অ্যালবাম বের হয়। তবে নাটকের জন্য তাহসীনের তৈরি করা ‘অভিমান হাজারো’, ‘একটু বেশি অকারণ’, ‘অনিবার্য কারণ’, ‘মন রঙের আঁচড়’, ‘ঠিকানা’ গানগুলো প্রশংসা কুড়িয়েছে। গাওয়ার পাশাপাশি সুর-সংগীত পরিচালনা করা বেশ উপভোগ করেন তাহসীনও। গেল ঈদেও মিজানুর রহমান আরিয়ানসহ একাধিক পরিচালকের নাটকের গান তৈরি করেছেন এই সংগীত পরিচালক।