বড় পর্দায় ব্যান্ড তারকারা

তাঁরা গানের মানুষ। কখনো খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার ভক্ত–শ্রোতার সামনে গান করেন। কখনো চারদেয়ালের ভেতর, মিলনায়তনে। তরুণ দর্শকের কাছে তাঁদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। যুগে যুগে ব্যান্ড তারকাদের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে পরিচালকেরা চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবেন। অতিথি চরিত্র বা কখনো কেন্দ্রীয় চরিত্রেও জায়গা করে নেন শিল্পীরা। যেমন গানের মানুষ পার্থ বড়ুয়াকে শিগগিরই দেখা যাবে বড় পর্দায়।
অবশ্য এটি প্রথম নয়, এর আগে আলোচিত ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রেও পার্থ বড়ুয়া পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন। বেশ কয়েকটি টিভি নাটকেও দেখা গেছে তাঁকে। এবার তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি এই চলচ্চিত্রের নাম ‘মেইড ইন চিটাগং’। ছবিতে অভিনয় করেছেন পার্থ বড়ুয়া ও অপর্ণা ঘোষ
ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি এই চলচ্চিত্রের নাম ‘মেইড ইন চিটাগং’। ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের দুটি হলে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কমেডি ধাঁচের ছবিটি নির্মাণ করেছেন ইমরাউল রাফাত। নতুন এই চলচ্চিত্র নিয়ে রোমাঞ্চিত পার্থ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘পুরোপুরি আঞ্চলিক ভাষায় চলচ্চিত্র তৈরির ক্ষেত্রে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সবাই সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। আমরা সবাই উৎসবের আমেজে পুরো শুটিং সেরেছি। দর্শকেরা যে দারুণ কিছু উপহার পেতে যাচ্ছেন, এটা নিশ্চিত।’

‘ঘুড্ডি’ চলচ্চিত্রে হ্যাপি আখান্দ্ ও সুবর্ণা মুস্তাফা

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে দেখা গেছে ব্যান্ড সংগীতের বড় সব তারকাকে। যেমন হ্যাপী আখান্দ্‌। সংগীতের ক্ষণজন্মা এ প্রতিভাবান শিল্পী যেমন গাইতেন, তেমনি গিটার, পিয়ানো, তবলা, নানা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। ‘উইন্ডি সাইড অব কেয়ার’ নামে একটি ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই গুণী শিল্পী। ব্যান্ডে তিনি গিটার বাজানোর পাশাপাশি গানও গাইতেন। এই হ্যাপী আখান্দ্‌কেও চলচ্চিত্রে অভিনয়ে দেখা গেছে। ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ঘুড্ডি’ সিনেমায় অভিনয়ে দেখা গেছে তাঁকে। সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে ছবিটির পরিচালক সালাহউদ্দীন জাকী বলেন, ‘লাকী ও হ্যাপী দুজনের সঙ্গে পারিবারিক পরিচয় ছিল। দুজন বয়সে ছোট হলেও বন্ধুর মতোই ছিল। ‘ঘুড্ডি’র পরিকল্পনার সময় হ্যাপী চোখের সামনে ভেসে ওঠে। একটা চরিত্র ওকে ছাড়া কাউকে ভাবতে পারিনি।’

‘ঘুড্ডি’ চলচ্চিত্রে হ্যাপি আখান্দ্

কথায়–কথায় সালাহউদ্দীন জাকী বললেন, ‘হ্যাপী যদিও একটু গম্ভীর প্রকৃতির ছিল, তারপরও হ্যাপী কোথাও থাকা মানে সবাইকে হ্যাপি করে রাখা। শুটিং শেষে মনে হয়েছে, অসাধারণ অভিনয় করেছে। আমার তো এ–ও মনে হয়, হ্যাপী যেভাবে চরিত্রটা করেছে, অন্য কেউ সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারত না, যদিও চরিত্রটা খুবই ছোট।’

বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আজম খানকেও একবারই দেখা যায় চলচ্চিত্রের পর্দায়। ২০০৩ মুক্তি পাওয়া ‘গডফাদার’ নামের সেই চলচ্চিত্রে নামভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি

বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আজম খানকেও একবারই দেখা যায় চলচ্চিত্রের পর্দায়। ২০০৩ মুক্তি পাওয়া ‘গডফাদার’ নামের সেই চলচ্চিত্রে নামভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ছবিটি বানান শাহীন-সুমন। শাহীন জানান, আজম খানের গানের অনুরাগী ছিলেন, কিন্তু ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না। স্মৃতিচারণায় শাহীন বললেন, ‘প্রথমবার চিত্রনাট্য নিয়ে আজম খানের কমলাপুরের বাসায় গিয়ে তাঁর দেখা পাইনি। ফেরার সময় বাড়ির পাশের লন্ড্রিতে দেখা হয়। এরপর বাসায় গিয়ে ছবি নিয়ে কথা। একপর্যায়ে বললাম, এই ছবি করতে হলে আপনাকে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রাখতে হবে। কথাবার্তা বলে স্ক্রিপ্ট দিয়ে চলে আসি। সাত দিন পর গিয়ে দেখি বাসায় নেই। পেলাম কলোনির মাঠে। দেখি, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। জিজ্ঞেস করলাম, গুরু, দাঁড়ি কেন? বললেন, “রাখলাম, ক্যারেক্টার ভালো লাগছে তো। ছবিটা করব।” এভাবেই হলো শুরু। সেদিন টাকা দিয়েছিলাম, মাত্র ২৫ হাজার টাকা। জাস্ট টোকেন। পরে যখন টাকা দিতে গেছি, নেননি। বললেন, “শাহীন, তোরে আমার ভাল্লাগছে। টাকা নিমু না। আমি আজম খান টাকার কাছে বিক্রি হই না। তোরে আমি ছবিটা গিফট করলাম।”’

‘মনের সাথে যুদ্ধ’ ছবিতে গাওয়ার পাশাপাশি পর্দা উপস্থিতিও ছিল জেমসের

শাহীন জানালেন, ‘গডফাদার’ ছবির জন্য শুরুতে জেমসকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১০ লাখ টাকা সম্মানী চাওয়াতে আর এগোতে পারেননি শাহীন। ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রে জেমস অভিনয় না করলেও ঢালিউডের ‘মনের সাথে যুদ্ধ’ ছবিতে গাওয়ার পাশাপাশি পর্দা উপস্থিতিও ছিল। বলিউডের একাধিক চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়নেও সংগীতশিল্পীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রমিথিউস ব্যান্ডের বিপ্লবকেও চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখা গেছে। অল্প সময়ের উপস্থিতি হলেও দেশের জনপ্রিয় এই ব্যান্ডশিল্পীদের দর্শক মনে রেখেছেন।