পুরনো ছবিতে পাপিয়া সারোয়ার
পুরনো ছবিতে পাপিয়া সারোয়ার

‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গায়িকা হিসেবে অস্বস্তি ছিল. . .

‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাঁকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দিয়েছে। এমন অনেক জনপ্রিয় সেই গানের শিল্পী আজ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সেই জনপ্রিয় গায়িকা পাপিয়া সারোয়ার যাপিত জীবনের বেশির ভাগ সময় গান নিয়ে থেকেছেন। গানেই খুঁজে পেতেন নিজেকে। গানের জন্যই একসময় তিনি অবসাদে ভুগেছেন। কখনো বা গানকে ঘিরেই কোনো সিদ্ধান্ত তাঁকে ভীষণ পীড়া দিয়েছে।
৬০–এর দশক থেকেই গান করেন তিনি। রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে ৭০ দশকে পরিচিতি পেতে থাকেন। রবীন্দ্রসংগীতের পাশাপাশি আধুনিক গানেরও চর্চা করেছেন। সেসব আধুনিক গান তাঁকে পরিচিতি করে তোলে ভক্তদের কাছে। তবে নিজেকে সব সময় রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবেই পরিচয় করালে খুশি হতেন পাপিয়া সারোয়ার।

পাপিয়া সারোয়ার

পাপিয়া সারোয়ার গান নিয়ে ছুটেছেন দেশ–বিদেশের নানা প্রান্তে। বেশির ভাগ জায়গায় গিয়ে তাঁকে শুনতে হতো ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম’–খ্যাত শিল্পী। এমন পরিচয়ে নিজের কাছে কেমন যেন মন খারাপ হলেও ভক্তদের ভালোবাসাকে সম্মান জানাতেন তিনি।
১৯৭৮ সালের দিকে প্রথম বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ পায় ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাফ’ গানটি। পরে এটি রাতারাতি মানুষের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে। গানটি লিখেছেন মনিরুজ্জামান মনির এবং সুর করেছেন মুনসুর আলী।
এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পাপিয়া সারোয়ার বলেন, ‘আমি তখন শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে এসেছি। বিটিভির একটি অনুষ্ঠানের জন্য গান করতে থাকি। ১০টি গান দিয়ে একটি অনুষ্ঠান। সেখানে সব রকম গান ছিল। তার মধ্যে একটি গান ছিল “নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম...।” আধুনিক এই গান একেবারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। পৃথিবীর যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই এই গানের কথা শুনেছি। পরে এই গান দিয়েই পরিচয় করিয়ে দিত। ’ কিন্তু তিনি চাইতেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবেই পরিচিত হতে। সেই চর্চাই করেছেন সারা জীবন।

সংগীত অঙ্গনে দীর্ঘদিনের বিচরণ। ভক্তদের কাছে পাপিয়া সারোয়ার সফল গায়িকা। তবে নিজেকে কতটা সফল ভাবেন, এমন এক প্রশ্নে তিনি নিউজ২৪–এর সঙ্গে আলোচনায় বলেছিলেন, ‘আমি সফল কি না, এটা নিয়ে কখনোই ভাবি না। আর সফলতার তো আসলে শেষ নাই। কিন্তু আমি যে শান্তিতে থাকতে চাই, সেই শান্তি আছে। আরেকটা কথা, আমি শুরু থেকেই গানটাকে ব্যবসা হিসেবে নিতে চাইনি। সেটা আমাকে মাঝেমধ্যে পীড়া দেয়। এমনকি প্রতিযোগিতা হিসেবেও গান নিয়ে এগোতে চাইনি।’

এই সময়ে প্রাপ্তি প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে পাপিয়া সারোয়ার আরও বলেন, ‘আমার ইচ্ছেমতো ভাবেই গান করতে চাই, করেছি। কিন্তু মাঝে মাঝে পারি না। আজকাল তো বয়স হয়ে যাচ্ছে। দেখা যায়, অনেক সময় হয়তো নিজের ইচ্ছেমতো গান করতে পারছি না তখন মন খারাপ হয়, ডিপ্রেশন চলে যাই। অবসাদে ভুগি। অবসাদ কাটাতেই, নিজেকে ভালো রাখতে হয়। সকালে নিয়মিত রেওয়াজ করি। রেওয়াজ না করলে নিজের কাছে প্রচণ্ড অপরাধী লাগে।’