শাফিনকে নিয়ে যা বললেন জেমস ও হাসান

হঠাৎ শাফিনের মৃত্যুর খবর সবাইকে হতবাক করে
কোলাজ

গান গাইতে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যান শাফিন আহমেদ। একটি শো শেষে আরেকটির প্রস্তুতিও চলছিল। আয়োজকদেরও ছিল নানা পরিকল্পনা। এর মধ্যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ভার্জিনিয়ার শো বাতিল করতে হয়। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় ভোরে খবর আসে যে শাফিন আহমেদ আর বেঁচে নেই। ভার্জিনিয়ার হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে থাকা দেশের সংগীতের উজ্জ্বল তারকাকে মৃত ঘোষণা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। হঠাৎ উড়ে আসা মৃত্যুর খবর সবাইকে হতবাক করে। ভক্ত–শ্রোতাদের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের সহযাত্রীদের কাছেও এটি ছিল অবিশ্বাস্য।

জেমস

দেড় মাসের সংগীত সফরে জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কানাডার উদ্দেশে উড়াল দেন দেশের ব্যান্ড সংগীতের মহাতারকা জেমস। দেশটির কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে স্টেজ শো শেষে আগামী আগস্টে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সহযোদ্ধা শাফিনের মৃত্যুর খবরে মর্মাহত জেমস তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শাফিন আহমেদেরই গাওয়া গানের কয়েকটি লাইন ব্যবহার করে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন, ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি, নও পাহাড়ি ঝরনা/ যদি বলি ফুল তবুও হবে ভুল, তোমার তুলনা হয় না’।

শাফিন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ‘বিনম্র শ্রদ্ধা বাংলাদেশের মাইলস ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের প্রতি। শোকস্তব্ধ দর্শক-শ্রোতাদের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা। আসুন, আমরা সকলে তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।’

হাসান

শাফিন আহমেদের মৃত্যুর খবরে হতবাক দেশের আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্কের হাসান। তিনি জানান, শাফিন আহমেদ ছিলেন তাঁর আইডল। তাঁর চলা, বলা, হাঁটা, বাজানো, গাওয়া সবকিছুই হাসানের প্রিয় ছিল। হাসান বলেন, ‘শাফিন ভাইকে অনুসরণ করেই সুর করা শুরু করি। আমার ভালো লাগার একজন মানুষ ছিলেন তিনি। শাফিন ভাই ছিলেন অনুকরণীয় সংগীত ব্যক্তিত্ব। আইয়ুব বাচ্চু ভাই আমার কাছে যেমন ছিলেন, শাফিন ভাইও তেমন। তাঁদের কাছ থেকে সব সময়ই শেখা যায়। বাচ্চু ভাই ও শাফিন ভাই দুজনের কাছে আমি ছিলাম সন্তানের মতো। শাফিন ভাইয়ের চলে যাওয়া সংগীতাঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’

হাসান আরও বলেন, ‘মিউজিশিয়ান হিসেবে শাফিন আহমেদ ছিলেন মাস্টার। শিল্পী হিসেবে তিনি ছিলেন স্টাইলিশ। তাঁর গাওয়ার ধরন একেবারেই ইউনিক। শুধু কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই নয়, সংগীতজ্ঞ হিসেবেও আপাদমস্তক তিনি ছিলেন অনুকরণীয়। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, শাফিন ভাই নেই। এমন খবর শোনার জন্য অপ্রস্তুত ছিলাম। দেশ–বিদেশের অনেক মঞ্চে তাঁর সঙ্গে গান করেছি। টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাঁর সঙ্গে বসার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁর স্টুডিও রেকর্ডিং কাছ থেকে দেখেছি। রেকর্ডিং, প্লেয়িং, টেকনোলজি—সব দিক থেকেই তিনি অনেক এগিয়ে ছিলেন। আমিও অনেক কিছু তাঁর কাছ থেকে শিখেছি।’

শাফিন আহমেদ

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে মারা গেছেন শাফিন আহমেদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। শাফিন আহমেদকে তাঁর বাবা সুরকার কমল দাশগুপ্তের কবরে সমাহিত করা হবে। শাফিন আহমেদের মরদেহ এখনো ভার্জিনিয়ায় রয়েছে। শিগগিরই মরদেহ দেশে আনা হবে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বনানী কবরস্থানে বাবার কবরে সমাহিত করা হবে শাফিন আহমেদকে। পাশে তাঁর মা সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের কবর রয়েছে। ১৯৭৪ সালে মারা গেছেন কমল দাশগুপ্ত। ফিরোজা বেগমকে বিয়ের পর তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন।

শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুলসংগীত। শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা জ্বালা...এ অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’ প্রভৃতি।