পাপিয়া সারোয়ার
পাপিয়া সারোয়ার

ছায়ানট–শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা শেষে বনানী কবরস্থানে পাপিয়া সারোয়ারকে দাফন

ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে গতকাল মারা যান রবীন্দ্রসংগীতের বরেণ্য শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। গতকাল তাঁর মরদেহ বারডেম হাসপাতালের শব হিমঘরে রাখা হয়। আজ শুক্রবার সকাল নয়টায় তাঁর মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক সেখানে রাখার পর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সংস্থার উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পাপিয়া সারোয়ারের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়। এরপর আবার ধানমন্ডি ২৮ নম্বরের বাসায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে ধানমন্ডি ৬–এ ঈদগাহ মসজিদে নেওয়া হয়। বাদ জুমা জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

পাপিয়া সারোয়ার

ছায়ানট ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের খ্যাতিমান এই সংগীতশিল্পীর প্রতি শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষও। দুই জায়গাতে প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন তাঁর সহকর্মী, ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সংস্কৃতিজনরা তাঁদের স্মৃতিচারণায় বলেন, শুধু রবীন্দ্রসংগীত নয়, পুরো সংগীতজগৎ পাপিয়া সারোয়ারের শূন্যতা অনুভব করবে।

শিল্পীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন পাপিয়া। গত মাসে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন গুণী এই শিল্পী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।

বই পড়তে ভালোবাসতেন পাপিয়া সারোয়ার

পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম বরিশালে, ১৯৫২ সালের ২১ নভেম্বর। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র–অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সাল থেকে বেতার ও টিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।

১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারতে যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই প্রথম ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানে স্নাতক করার সুযোগ পান। এর আগে তিনি ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সন্‌জীদা খাতুন ও জাহেদুর রহিমের কাছে গানের দীক্ষা নেন। তাঁর প্রথম অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮২ সালে। অ্যালবামটির নামও ছিল শিল্পীর নামেই, ‘পাপিয়া সারোয়ার’।

পাপিয়া সারোয়ার

দীর্ঘ সংগীতজীবনে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পাপিয়া সারোয়ার পেয়েছেন। তাঁর ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ও গায়কির প্রশংসা ছিল সংগীতাঙ্গনে। আধুনিক গানেও আছে তাঁর সাফল্য। ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাঁকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দিয়েছে। সংগীতবোদ্ধাদের মতে, আধুনিক গান বাছাইয়ে বেশ সচেতন ছিলেন বলে তাঁর অ্যালবামের সংখ্যা কম। তাঁর সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে।