শেখ সাদী খান
শেখ সাদী খান

কেন অভিনয়ে রাজি হলেন শেখ সাদী খান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিবপুর গ্রামের খাঁ পরিবারের সন্তান শেখ সাদী খান। গানের মধ্য দিয়ে এই সংগীত পরিচালক নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। কালজয়ী গান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজেকে করেছেন কালোত্তীর্ণ, সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানকে। ৫ দশকের পেশাদার সংগীতজীবনে একবারই অভিনয় করেন।  চলচ্চিত্র পরিচালক বন্ধু কাজী মোরশেদের ‘নয়নে নয়ন’ নামের সেই ছবিতে সংগীত পরিচালক চরিত্রে অভিনয় করেন। দীর্ঘ বিরতির পর আবার অভিনয় করলেন এই সুরকার ও সংগীত পরিচালক। এবার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে। ‘সাইলেন্স-দ্য জার্নি অব মিউজিক’ নামের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি বানাচ্ছেন সুরকার ও সংগীত পরিচালক ইমন সাহা।

এরই মধ্যে ‘সাইলেন্স-দ্য জার্নি অব মিউজিক’–এর শুটিংও শেষ করেছেন তিনি। শেখ সাদী খান বলেন, ‘সত্য সাহার ছেলে ইমন সাহা বলল, “একটা শর্ট ফিল্ম বানাচ্ছি। সেখানে একটা গুরুজির চরিত্র আছে। ভাবলাম, এটা আপনি করলে ভালো হয়।” কিন্তু আমি তো আর ওস্তাদ না। আমি একজন সংগীত পরিচালক। তারপর কথাবার্তা শুনে আমিও বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে, করে দিচ্ছি।”

শেখ সাদী খান বললেন, ‘ইমন আমাকে ছোটবেলার অনেক কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছিল। বলছিল, “বাবা প্রথমে আপনার কাছে কিবোর্ড বাজানোর জন্য দিয়েছিল। আপনার ছবিতেই প্রথম বাজালাম—মনে আছে?” আমি বললাম, সবই মনে আছে। এরপর বলল, “আমার একটা দাবি আছে না আপনার কাছে।” তখন বললাম, আমার জন্য বেশি ফান হয়ে যাবে না তো। আমি তো এসব করি না। বলল, “না এটা আপনি করলেই ভালো হবে।” এরপর পুরো বিষয়টা বুঝে হ্যাঁ করলাম।’ কথায় কথায় কাজী মোরশেদের ‘নয়নে নয়ন’ ছবির কথাও মনে পড়ে গেল তাঁর। ২০০৬ সালে সেই ছবিতে অভিনয়ের প্রসঙ্গ মনে করে শেখ সাদী খান বললেন, ‘কাজী মোরশেদের “নয়নে নয়ন” ছবিতে প্রথম অভিনয় করি। সংগীত পরিচালকের চরিত্র ছিল তো। সে আমাকে বলল, দোস্ত তুমি এটা করো। মোটামুটি এটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তো। তুমি করলে আমার কাছে সবচেয়ে যৌক্তিক মনে হবে। এরপর করলাম।’

শেখ সাদী খান বললেন, ‘দৃশ্যটা ছিল এ রকম, আমি পার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। একটা ছেলে পার্কে গান গাইছে। নায়ক ছিল রিয়াজ, সে–ই গাইছে। আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নেমে ওর কাছে যাওয়ার পর গানটা বন্ধ করল। আমি বললাম, বাহ, খুব সুন্দর গান গাও তো। তোমার গলাটা তো ভারি সুন্দর। কোথায় থাকো? কোথা থেকে এসেছে? তখন রিয়াজ  বলল, “আমি তো গ্রাম থেকে এসেছি।” গান পছন্দ করো জিজ্ঞেস করতে বলল, “করি।” যাই হোক, তুমি আসো। তারপর স্টুডিওতে নিয়ে গান রেকর্ড করি। এভাবেই সেদিন দৃশ্যটা ধারণ করা হয়।’ ১৭ বছরের মাথায় স্বল্পদৈঘ্য চলচ্চিত্র ‘সাইলেন্স-দ্য জার্নি অব মিউজিক’—এ অভিনয়ের অভিজ্ঞতাও এভাবে বললেন শেখ সাদী খান, ‘শুটিংয়ে আমার দৃশ্য ছিল দুটি।  প্রথম দৃশ্য একবারে ওকে হয়ে যায়। দ্বিতীয় দৃশ্যটা দুইবারে ওকে হয়েছে। সব মিলিয়ে অনুরোধে করা। ইমন সাহার জন্যই করা। অভিজ্ঞতাও ভালো।’

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের ভাতিজা, ওস্তাদ আয়েত আলী খানের সন্তান; ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান, বাহাদুর হোসেন খান ও সংগীতজ্ঞ মোবারক হোসেন খানের ছোট ভাই সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান শুরুতে তবলা বাজানোর তালিম নেন। পরে মেজ ভাই ওস্তাদ বাহাদুর খান তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যান। শেখ সাদী খান তাঁর কাছে তালিম নেন উচ্চাঙ্গসংগীতে। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম রেডিও স্টেশনে চাকরি নেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজের পাশাপাশি ঢাকা মিউজিক কলেজে পড়াশোনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ বেতারে কাজ শুরু করেন গুণী এই পরিচালক। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন একুশে পদক।