ফেরানো গেল না আশি-নব্বইয়ে কোটি মানুষের হৃদয়ে ঝড় তোলা খালিদকে। ‘তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা, তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা’য় আর সুর তুলবেন না কেউ। ক্যাসেট যুগ থেকে তখনো বের হয়নি মানুষ। এর মাঝে নতুন নতুন এফএম রেডিওর রাজত্ব। সেখানেও হাজির খালিদ। অনুরোধের আসরে শিল্পীর গান থাকবে না, এমনটা কখনো কি ভাবা যেত? ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘হয়নি যাবারও বেলা’, ‘তুমি নেই তাই’, ‘আকাশনীলা’—বিরহজাগানিয়া ধীরলয়ে গানের রাজা সেই খালিদ আর ফিরবেন না। সোমবার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন চাইম ব্যান্ডের এই ভোকালিস্ট।
খালিদের মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া। সামাজিক মাধ্যম ভরে উঠেছে তাঁর জনপ্রিয় সব গানের লাইনে। ‘কোনো কিছুতেই তাকে ফেরানো গেল না’, ‘তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা’, ‘নাতিখাতি বেলা গেল’সহ খালিদের আইকনিক গানগুলো। শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন তাঁর সান্নিধ্য পাওয়া কাছের মানুষ এবং সহকর্মীরা। তেমনই একজন নওরীন। নিজের ফেসবুকে খালিদ মামার স্মৃতিচারণা করেছেন তিনি।
নওরীন লিখেছেন, ‘আমার দুই মামা আলী সুমন, শওকত আলী ইমন চাইমে থাকার কারণে ব্যান্ডের সব প্র্যাকটিস নয়াপল্টনে আমার নানার বাড়িতেই হতো, সেই প্র্যাকটিসে চাইমের গান শুনে শুনেই আমার বড় হওয়া। “নাতিখাতি বেলা গেল” সেই ৪–৫ বছর বয়সেই কীভাবে শিখে ফেলেছিলাম আজ আর তা মনেও নেই, কিন্তু খালিদ মামার কণ্ঠে গাওয়া গানটা আমার ব্রেনে এক্কেবারে খোদাই হয়ে আছে এখনো।’
ফেসবুকে খালিদের সঙ্গে মঞ্চের একটি ছবিও পোস্ট করেছেন নওরীন। লিখেছেন, ‘এই ছবিটি ১৯৯০ অথবা ১৯৯১–এর বাম্বা কনসার্টের। আমি তখন “নওরীন নাতিখাতি” হিসেবে পরিচিত।
চাইম স্টেজে উঠে যখন নাতিখাতি গাইছিল, তখন আমাকে খালিদ মামা দর্শকদের দেখিয়ে দেন, সে সময় সেখানে যাঁরা দর্শক ছিলেন, তাঁরা সবাই মিলে কোলে তুলে আমাকে স্টেজে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। খালিদ মামা আমাকে নিয়ে নাতিখাতি গাইলেন। ওপারে অনেক ভালো থাকবেন খালিদ মামা।’
সংগীতশিল্পী খালিদ সাইফুল্লাহর জন্ম ১৯৬৫ সালের ১ আগস্ট। গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী ১৯৮১ সালে গানের জগতে যাত্রা করেন। ১৯৮৩ সালে ‘চাইম’ ব্যান্ডে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালে সারগামের ব্যানারে ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘চাইম’ প্রকাশিত হয়। অ্যালবামের ‘নাতিখাতি বেলা গেল’সহ বেশ কয়েকটি গান রীতিমতো আলোড়ন তোলে। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সোমবার রাতে ঢাকায় মারা গেছেন এ শিল্পী। গতকাল রাতে ঢাকার গ্রিন রোড জামে মসজিদে খালিদের প্রথম জানাজা হয়। শেষে তাঁর মরদেহ গোপালগঞ্জে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবার। দুপুরে জোহর নামাজের পর সেখানে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা হবে। মঙ্গলবার পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে এই শিল্পীকে।