সোমেশ্বরী থেকে অলির গানের যাত্রা

কবিতা লিখতে লিখতে একসময় গানের জগতে যাত্রা সোমেশ্বরী নদীপারের ছেলে সোমেশ্বর অলির। নেত্রকোনার দুর্গাপুরের এই তরুণের গান লেখার ঘটনা শুরুর দিকে শখের বশে হলেও এখন পেশাদার। যাত্রা শুরুর দিকে ‘ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো’ গান লিখে নিজেকেও গানের আকাশে মেলে ধরেন তিনি। দেড় দশকের মাথায় ‘প্রিয়তমা’ ছবিতে ‘ঈশ্বর’ গানটি লিখে নিজেকে নিজেই ছাড়িয়ে গেলেন অলি। সম্প্রতি চরকির ওয়েব ফিল্ম ‘পুনর্মিলনে’ প্রকাশিত হয়েছে গায়েহলুদ অনুষ্ঠান ঘিরে ভিন্নধর্মী গান ‘সিলেটি দামান’। ভিন্ন ধাঁচের এই গানটিও শ্রোতারা পছন্দ করেছেন।

সোমেশ্বর অলি
ছবি : অলির সৌজন্যে

‘প্রিয়তমা’ ছবিতে অলির লেখা ‘ঈশ্বর’ গানের সুর করেছেন প্রিন্স মাহমুদ। কণ্ঠ দেন রিয়াদ। ১৩ বছর ধরে গান করলেও এই গানই তাঁকে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এনেছে। সিনেমার পর্দায় গানটিতে একেবারেই ভিন্ন লুকে ধরা দিয়েছেন শাকিব খান। এই গানের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্রিন্স মাহমুদ আর সোমেশ্বর অলির একসঙ্গে কাজ হয়েছে।

অলি নিজের মতো থাকতে ভালোবাসেন। লেখালেখি করেন মনের আনন্দে। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন। তবে কথা বলে তাঁর কলম। প্রচারের আলোয় তাঁকে সেভাবে দেখা না গেলেও তাঁর লেখা গান শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। কয়েক বছরের চিত্রটাই যেন এমন। এক যুগে তাঁর লেখা ‘ঘুড়ি’, ‘রূপকথার জগতে’, ‘বুকের বাঁ পাশে’, ‘তাই তোমার খেয়াল’, ‘আমার আকাশ পুরোটাই’, ‘খরচাপাতির গান’, ‘শূন্য থেকে আসে প্রেম’, ‘মায়া’, ‘একটাই তুমি’, ‘আসো মামা হে’–এর মতো অনেক গান শ্রোতৃপ্রিয় হয়েছে।

অলি বলেন, ‘শুরুর দিকে “ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো” গানের সাফল্যই আমাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। আমি নিভৃতচারী কি না জানি না। তবে কাজ দিয়েই নিজেকে সব সময় প্রমাণ করতে চেয়েছি। পর্দার পেছনের মানুষ হিসেবে কখনো সামনে এসে মুখ দেখাতে হবে, কথা বলতে হবে, চেহারা চেনাতে হবে—এমন প্রক্রিয়ায় আমি বিশ্বাসী নই। তবে পরিচিতি কে না চায়! সেই পরিচিতি তৈরিতে আমি কিছুটা হলেও পরিমিতিবোধ বজায় রাখতে চাই।’

কিন্তু ‘ঈশ্বর’ গানটি প্রকাশের পর আপনাকে যেভাবে প্রচারমাধ্যম পেয়েছে, অন্য সময় এমনটা ঘটেনি—এটার পেছনে কোনো ভাবনা কাজ করেছে? ‘গান একক কৃতিত্বের ব্যাপার নয়। এটা টিমওয়ার্ক। কথা, সুর, কণ্ঠ, সংগীত আর হাল আমলে অভিনয়—সব মিলিয়ে গান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একেকটি অঙ্গনে একেকজন কাজ করেন। তো, কৃতিত্বটা সমানই হওয়া উচিত। “ঈশ্বর” প্রকাশের পর গণমাধ্যমের ভাই-বন্ধুরাই আমাকে সামনে নিয়ে এসেছেন। এর আগেও কালেভদ্রে গণমাধ্যমে কথা বলেছি। এবার একটু বেশিই ভালোবাসা দিয়েছেন তাঁরা। আমি কৃতজ্ঞ।’ বললেন অলি।

সোমেশ্বর অলি

এই গান তাঁর জীবনকে দারুণভাবে রাঙিয়েছে। বেড়েছে ব্যস্ততাও। অলি বললেন, ‘প্রভাবটা তাৎক্ষণিকভাবেই টের পেয়েছি, পাচ্ছি। “ঈশ্বর” গান প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে কলকাতার একাধিক চলচ্চিত্রে গান লেখার প্রস্তাব পেয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিবদ্ধও হয়েছি। দেশেও বেশ কিছু ভালো মানের ছবিতে কাজ শুরু করেছি। প্রায় প্রতিদিনই প্রস্তাব পাচ্ছি।’

সোমেশ্বর অলি

দেড় দশক আগে ‘রঙিন দালান’ লিখে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন সোমেশ্বর অলি। গানটিতে কণ্ঠ দেন এস আই টুটুল। এরপর আরও কয়েকটি গান লিখেন। ২০১১ সালে গায়ক লুৎফর হাসান প্রকাশ করলেন নিজের গাওয়া প্রথম অ্যালবাম ‘ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো’। অলির লেখা টাইটেল গান ‘ঘুড়ি’ সুপারহিট। এরপর ব্যস্ততা যেভাবে বাড়ার কথা, সেভাবে বাড়তে দেননি। লিখেছেন নিজের পছন্দে। চরকির ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ চলচ্চিত্রে অলির লেখা ‘রূপকথার জগতে’ দারুণ শ্রোতৃপ্রিয়তা পায়।

গানের জনপ্রিয়তা পরের কাজে কোনো চাপ ফেলে কি না? ‘কোনো চাপ অনুভব করি না। তবে উপভোগ করি। “ঈশ্বর” প্রকাশের পর তো নতুন চুক্তিবদ্ধ ছবিগুলোর অধিকাংশতেই জটিল মুহূর্তের গান লেখার প্রস্তাব বেশি আসছে। ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমি নিজের লেখাটাই লিখছি, ছাড় দিচ্ছি না। বলা যায়, চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি।’ বললেন অলি।

সোমেশ্বর অলি

গত দুই মাসে বাংলাদেশ ও কলকাতা মিলিয়ে ১৫টি চলচ্চিত্রে গান লেখার প্রস্তাব পেয়েছেন অলি। আপাতত এসবে নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন তিনি। ১৭ বছরের কবিতা ও গানের ক্যারিয়ার। কম নয়। সোমেশ্বরী থেকে অলির ‘ঈশ্বর’যাত্রায় সঙ্গী একটি কবিতার বই আর দুই শতাধিক গান।