আতিফ আসলাম । ফাইল ছবি
আতিফ আসলাম । ফাইল ছবি

আতিফ আসলাম কেন এত জনপ্রিয়

রণবীর কাপুর-ক্যাটরিনা কাইফ জুটির ‘আজব প্রেম কি গজব কাহানি’ সিনেমার ‘তেরা হোনে লাগা হুঁ’ ও ‘তু জানে না’ গান দুটি আতিফ আসলামের গাওয়া। এক যুগের বেশি সময় পরও গানগুলোর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। এক সিনেমায় একই শিল্পীর দুটি গান জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ম্যাজিকটা কী? বৈচিত্র্য। যদিও পরপর শুনলে গান দুটির মধ্যে ফারাক বের করা কঠিন। তবে দুটি গানের মধ্যেই দুটি পৃথক সত্তা আছে। আছে ভিন্ন স্বরের ওঠানামাও। ‘তেরা হোনে লাগা হুঁ’ গানটি শুনলে যে ভালো লাগা কাজ করে, ‘তু জানে না’ গানটি শুনলে ভালো লাগার রেশ না বদলালেও কারণ বদলে যায়। কারণ, প্রথম গানটিতে আছে আনন্দের সৌন্দর্য আর দ্বিতীয়টিতে বেদনার। আনন্দ–বেদনা উভয় সৌন্দর্য কণ্ঠে হৃদয়ে ধারণ করে গানগুলোকে আপন করে নিতে পারেন বলেই কি আতিফের গান ভালো লাগে?

‘লেটস ভাইব আর্ট অ্যান্ড মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’ শিরোনামের উৎসবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকার মঞ্চ মাতিয়েছিলেন আতিফ। আবারও ঢাকার মঞ্চ মাতাতে আসছেন তিনি। জানা গেছে, আগামী ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২.০’ কনসার্টে তিনি অংশ নেবেন।  

আতিফ আসলাম

পাকিস্তানের এই শিল্পী উর্দুর পাশাপাশি হিন্দি, পাঞ্জাবি, বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় গেয়েছেন। কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতীয় সিনেমার কিছু জনপ্রিয় গানেও। সারা বিশ্বে তাঁর গানের অনুরাগী ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়াতেও তরুণ-তরুণীরা তাঁর গান নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও, স্টোরি ও রিলেও তাঁর গান ঘুরে–ফেরে।

এই যে নিজের ভাষা ছাড়িয়ে অন্য ভাষায়, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও তিনি পৌঁছাতে পেরেছেন, এর নেপথ্যের কারণ কী? কেন তাঁর গান তরুণ-তরুণীদের ভালো লাগে? আর কেনই–বা আতিফ আসলাম এত জনপ্রিয়?
১৯৮৩ সালের ১২ মার্চ পাকিস্তানের ওয়াজিরাবাদে আতিফের জন্ম। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করা এই শিল্পী ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন ক্রিকেটে। চার-ছক্কা আর উইকেট দিয়ে মানুষের হৃদয় জিতে নেওয়ার স্বপ্নও দেখেছিলেন। কিন্তু সব স্বপ্ন ভাষা পায় না। আতিফ ক্রিকেটার হলেও কি জনপ্রিয় হতে পারতেন? হয়তো পারতেন অথবা পারতেন না।

আতিফ আসলাম

সিনেমাতেও নাম লিখিয়েছিলেন আতিফ। ২০১১ সালে উর্দু চলচ্চিত্র ‘বল’-এ প্রথম অভিনয় করেন তিনি।

চলচ্চিত্রে অভিনয় করা ক্যারিয়ারের একটি কি পয়েন্ট হলেও আতিফ আসলাম সংগীতজগতে প্রবেশ করেন আরও আগে। ২০০৪ সালে ‘জলপরি’ অ্যালবামের মধ্য দিয়ে সংগীতজগতে অভিষেক হয় তাঁর। তারপর ক্রমে এগিয়েছেন। ভাগ্যও সহায় ছিল। ‘জলপরি’ অ্যালবামের গান ভালো লাগায় পরিচালক মহেশ ভাট তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। ২০০৫ সালে ‘জেহের’ ছবির ‘ওহ লমহে’ গান দিয়ে বলিউডে প্লেব্যাক শুরু করেন। এই গান ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।

‘আজব প্রেম কি গজব কাহানি’ ছাড়াও আব্বাস-মস্তানের ‘রেস’ ছবির জনপ্রিয় গান ‘পেহলি নজর ম্যায়’। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির গানটি সংগীতপ্রেমীদের মনে দোলা দিয়েছিল। একই ঘটনা ঘটেছিল ‘কলিযুগে’র গান ‘আদাত’-এর ক্ষেত্রেও।১৭-১৮ বছর পর আজও গান দুটি ভালো লাগার জোয়ারে ভাটা পড়েনি।

গান দুটি নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদেরও একইভাবে মন কেড়েছে। মন খারাপে, অবসরে গান দুটি শোনেন অনেকে। ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবিতে সালমান খানের হয়ে প্রথমবার প্লেব্যাক করেন আতিফ। তাঁর গাওয়া ‘তু চাহিয়ে’ গানটির সুর দিয়েছিলেন প্রীতম। সালমান খানের হয়ে প্লেব্যাক করা জনপ্রিয় আরও একটি গান হচ্ছে ‘দিল দিয়া গল্লা’। ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ চলচ্চিত্রের গানটির ভিউ আজ পর্যন্ত ৭৯৩ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে।

আতিফ আসলাম। ইনস্টাগ্রাম থেকে

এই যে একের পর এক গান সুপারহিট হওয়া, শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারা, কীভাবে? একটি গান তৈরির ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় কাজ করে। গানের কথা, সুর, সংগীত আর শিল্পীর সন্নিবেশে তৈরি হওয়া একটি গান আলোচনায় আসে। সিনেমার গানগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয় দৃশ্যনির্ভর। আর তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রেম-ভালোবাসা-বিরহ সব সময়ই আলাদা মূল্য পায়। তাই তো প্রেমে, বিরহে, ভালোবাসায় আতিফ আসলামের গান আপন হয়ে ওঠে।