অস্ট্রিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র—দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে নামীদামি ব্র্যান্ডের পছন্দের গিটার সংগ্রহ করে গেছেন প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘ফেন্ডার স্টাটোকাস্টার’, আইভানেজের ‘জেম সেভেনটি সেভেন’সহ ৫০টির মতো গিটার নিয়ে যাত্রা করছে ‘আইয়ুব বাচ্চু মিউজিয়াম’।
স্মৃতির মতো গিটারও আগলে রাখতেন আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর প্রিয় গিটারের তালিকায় ছিল সাদা ও কালো রঙের দুটি ফেন্ডার স্টাটোকাস্টার গিটার। এলআরবির সুখ অ্যালবামের সব গানের বাচ্চুর সঙ্গী ছিল কালোটি। অ্যালবামের ‘চলো বদলে যাই’, ‘রুপালি গিটার’-এর মতো গানে তারকাখ্যাতি পান তিনি।
এর আগে এলআবরির প্রথম ও ডাবল অ্যালবাম এলআরবি ১ ও এলআরবি ২-এর সব গানের রেকর্ডিংয়ে সাদা রঙের গিটারটি বাজিয়েছেন বাচ্চু। তাঁর ক্যারিয়ারের বাঁকবদলের স্বাক্ষী ছিল গিটারগুলো। আজীবন গিটার দুটি আগলে রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। গিটারের স্ট্রিং খুলে তাতে পেইন্ট করে সংরক্ষণ করে গেছেন তিনি, এখনও সেভাবেই রয়েছে।
ফিলিংস, সোলস থেকে এলআরবি—প্রায় চার দশকের ক্যারিয়ারে বহু গিটারে পাওয়া গেছে আইয়ুব বাচ্চুকে। তাঁর বহুল ব্যবহৃত গিটার কোনটি? এলআরবির গিটারিস্ট মাসুদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানালেন, রেকর্ডিংয়ে ও কনসার্টে বিখ্যাত গিটার ব্যান্ড আইভানেজের জেম সেভেনটি সেভেন (ফ্লোরাল প্যাটার্ন) সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন তিনি।
জেম সেভেনটি সেভেন গিটারে ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘অচেনা জীবন’, ‘মনে আছে নাকি নাই’ অ্যালবাম রেকর্ড করা হয়। এই গিটার নিয়ে লন্ডনেও কনসার্ট করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রায় দুই দশকের পুরানো গিটারটির রং খানিকটা ম্লান হলেও তা এখনও সচল রয়েছে।
এই গিটারে ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘অচেনা জীবন’, ‘মনে আছে নাকি নাই’ অ্যালবাম রেকর্ড করা হয়। এই গিটার নিয়ে লন্ডনেও কনসার্ট করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রায় দুই দশকের পুরানো গিটারটির রং খানিকটা ম্লান হলেও তা এখনও সচল রয়েছে।
১৯৯৮ সালে আইভানেজের ৯০ বছর পূর্তিতে জেপিএম সিরিজের ‘জেপিএম নাইনটি এইচএএম’–এর লিমিটেড এডিশন বাজারে এসেছিল। গিটারিস্ট মাসুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গিটারিস্ট জন পেট্রুচি মডেলের এই গিটার দুনিয়াজুড়ে মাত্র সাড়ে ৪০০টি রয়েছে। এর মধ্যে একটি সংগ্রহ করেন আইয়ুব বাচ্চু।
২০০১ সালে আর্মি স্টেডিয়ামে এই গিটারেই ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘চলো বদলে যাই’ গানে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। এর বাইরে আইভানেজের ‘জেএস ১২০০’, এক্সিসের ‘মিউজিক ম্যান’সহ ৫০টির মতো গিটার বাজিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গিটারিস্ট জন পেট্রুচি মডেলের জেপিএম নাইনটি এইচএএম গিটারটি দুনিয়াজুড়ে মাত্র সাড়ে ৪০০টি রয়েছে। এর মধ্যে একটি সংগ্রহ করেন আইয়ুব বাচ্চু।এলআরবির গিটারিস্ট মাসুদ
মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবার কাছে জীবনের প্রথম গিটার উপহার পেয়েছিলেন চট্টগ্রামের ছেলে আইয়ুব বাচ্চু। তবে গিটারটি বেহাত হয়ে যায়, সেটা নিয়ে জীবদ্দশায় বহুবার আফসোসে পুড়েছেন তিনি। বিশ্ব বিখ্যাত গিটারিস্ট জিমি হেনড্রিক্সের অনুরাগী ছিলেন তিনি, কৈশোরে জিমি গিটার বাজানো শুনেই গিটারের প্রতি মুগ্ধতা জন্মে বাচ্চুর। পরে গিটারকেই জীবনের পাথেয় করেছিলেন তিনি।
রুপালি গিটারের দুনিয়া
আইয়ুব বাচ্চুর সেই গিটারগুলো এখন মগবাজারে বাসায় রয়েছে। স্বামীর স্মৃতিকে আগলে রাখছেন বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার। মাঝে কয়েকটি গিটার নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে দুটি প্রদর্শনী করেছে বাচ্চুর পরিবার।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতিবিজড়িত গিটার ও এবি কিচেনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ব্যবহৃত ক্যাপ, টি–শার্ট নিয়ে একটি মিউজিয়ামের স্বপ্ন দেখে আসছে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার ও আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন। সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছে এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি গ্রুপ।
স্বপ্নের ‘আইয়ুব বাচ্চু মিউজিয়াম’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার বনানীর এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটির কার্যালয়ে আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে প্রতিষ্ঠানটি। জাদুঘরটি ঢাকায় নির্মিত হবে।
এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েন্টাল মার্কেটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরেশ যাকের গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে একযোগে কাজ করবেন তাঁরা।
এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি বলছে, মিউজিয়ামে মূলত আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতিবিজড়িত গিটারগুলো থাকবে। তাঁর ব্যবহৃত টি–শার্ট, হ্যাট, ক্যাপ, রোদচশমাসহ বহু কিছু থাকবে। পাশাপাশি ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিতে তাঁর কনসার্ট সরাসরি উপভোগের অনুভূতি নিতে পারবেন দর্শনার্থীরা। এতে এবি কিচেনের আদলে একটি স্টুডিও থাকবে, যেখানে শিল্পীরা গান রেকর্ড করতে পারবেন।
বছর দুয়েকের মধ্যেই মিউজিয়ামটি নির্মাণের কাজে হাত দেবে এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি। মিউজিয়ামের ওয়েবসাইটও থাকবে। দেশের বাইরে থেকে ডিজিটালি মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে পারবেন বাচ্চুর অনুরাগীরা।
জাদুঘরের পাশাপাশি আইয়ুব বাচ্চুকে ট্রিবিউট করে শিগগিরই ঢাকায় ও চট্টগ্রামে দুটি কনসার্ট আয়োজন করা হবে। আইয়ুব বাচ্চুর কিছু অপ্রকাশিত গান প্রকাশ করা হবে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি গ্রুপের কো-চেয়ারপারসন সারা যাকের; এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েন্টাল মার্কেটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরেশ যাকের ও আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আক্তার।
ফেরদৌস আক্তার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটিকে ধন্যবাদ জানাই। আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতি সংরক্ষণে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। ’
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মারা যান আইয়ুব বাচ্চু। মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর গান নিয়ে কাজ করছে আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডশন। তবে সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে গত বছর আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকীতে। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আইয়ুব বাচ্চুর গানের কপিরাইট করা হয়েছে।
আজ আইয়ুব বাচ্চুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী; এদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাঁকে নিয়ে স্মরণসভা রয়েছে। চট্টগ্রামের স্মরণসভায় আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তারও থাকবেন।