ওপার বাংলায়ও এ ধরনের গায়কি কারও মধ্যে ছিল না

চলে গেলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এর আগে কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গতকাল শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। আজ সকালে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। পাপিয়া সারোয়ারের মরদেহ বেলা একটায় ধানমন্ডি ২৮ নম্বরের বাসায় নেওয়া হয়। আজ রাতে বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। কাল জুমা নামাজের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

পাপিয়া সারোয়ার

পাপিয়া সারোয়ার প্রসঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও অনুজেরা শিল্পী ও মানুষ হিসেবে কেন তিনি আলাদা ছিলেন, সে বিষয়ে কথা বলেছেন। স্মৃতিচারণা করে সমকালীন শিল্পী তপন মাহমুদ বলেন, ‘পাপিয়া সারোয়ার অনন্য শিল্পী ছিলেন, একই সঙ্গে অনন্য মানুষও ছিলেন। মানুষ হিসেবে তাঁর যে চালচলন, কথাবার্তা এবং শিল্পবোধ—আমাদের দেশের যেসব শিল্পী রয়েছেন, তাঁদের তুলনায় প্রায় বিরল। তিনি অত্যন্ত নম্র স্বভাবের মানুষ ছিলেন। শিল্পীদের মধ্যে অনেকেরই বেশ অহংবোধ থাকে নিজেকে নিয়ে, কিন্তু পাপিয়া সারোয়ার এক সময়ে দেশের সেরা শিল্পী হয়েও কোনো অহংবোধ তাঁকে স্পর্শ করেনি।

তাঁর শিল্পীসত্তার ব্যাপারে বলতে পারি, বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীতের নতুন ধারার সূচনা করেছিলেন, যে ধারার আর কেউ তাঁকে অনুসরণ করেও তাঁর মতো তৈরি হতে পারেনি। তিনি মূলত রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী হলেও অন্য ঘরানার গানও করেছেন। নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান—প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাঁর গায়কি ছিল অনন্য। কাজেই শিল্পী হিসেবে খুব বড় এবং উঁচু মানের ছিলেন পাপিয়া সারোয়ার। আমি বলব, তাঁর মৃত্যুতে  বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীত তথা সমগ্র বাঙালি সংস্কৃতির এক বড় ক্ষতি হলো।
‘রবীন্দ্রসংগীতে পাপিয়া সারোয়ার এ জন্যই আলাদা বা অনন্য আলাদা ছিলেন, তাঁর যে গায়কি আর কারোর মধ্যে দেখা যায়নি। অনেকে চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ একেবারে আলাদা।

বাংলাদেশ কেন, ওপার বাংলায়ও এ ধরনের গায়কি কারও মধ্যে ছিল বলে আমার জানা নেই। আমরা সমসাময়িক শিল্পী ছিলাম। স্বাধীনতার পরপরই কাদেরী কিবরিয়া, পাপিয়া সারোয়ার এবং আমি নতুন শিল্পী হিসেবে, যদিও আমরা স্বাধীনতার আগে রেডিও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করতাম, তিনজনই। স্বাধীনতার পরই প্রচার–প্রসার যা–ই বলি, তাই হয়েছে। পাপিয়া সারোয়ার সেই নতুন বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীতের এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন, যা না ওপার বাংলায় ছিল, আমাদের বাংলায় তো ছিলই না।  
‘আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে সংগীত পরিবেশনার সাথে ছিলাম। পাপিয়ার সাথে কারও সম্পর্ক খারাপ ছিল বা কারও সাথে তিনি খারাপ ব্যবহার করেছেন বা কারও সাথে বিবাদ হয়েছে এ রকম খবর আমার অন্তত জানা নেই। আমার সঙ্গে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর আলাদা ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি সবার কাছে আলাদা হয়েছেন।’