চলে গেলেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী অনুপ ঘোষাল। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটায় প্রথম সারির এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বার্ধক্যজনিত রোগেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
শিল্পীর মৃত্যুর খবর ছড়াতেই শোকবার্তা পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও সুরকার ড. অনুপ ঘোষালের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর গাওয়া গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১১ সালে তাঁকে “নজরুল স্মৃতি পুরস্কার” ও ২০১৩ সালে “সংগীত মহাসম্মান” প্রদান করে। অনুপ ঘোষালের প্রয়াণে সংগীতজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমি অনুপ ঘোষালের আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
অনুপ ঘোষালের কণ্ঠে নজরুলগীতি মন ছুঁয়ে গিয়েছিল ভক্তদের। ঠুমরি, খেয়াল, ভজন, রাগপ্রধান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, দ্বিজেন্দ্রগীতি, রজনীকান্তর গানের পাশাপাশি আধুনিক বাংলা গান ও লোকগানে দক্ষতা অর্জন করেন। মূলত নজরুলগীতি গাইলেও, তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বারবার। শিল্পী নানা ছবিতে গান গেয়েছেন। বেশ কিছু ছবির সংগীত পরিচালনাও করেছেন। অনুপ ঘোষালের নাম বললে অনেকের মনে প্রথম যে গান আসে, সেটি বোধ হয় ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবির সেই অবিস্মরণীয় গান—‘দেখো রে নয়ন মেলে জগতের বাহার. . ।’ প্রথম আলোর সাক্ষাৎকারে সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে বলেছিলেন, ‘“গুপী গাইন বাঘা বাইন”-এ গান করার কথা ছিল কিশোর কুমারের। তখন সময় দিতে পারেননি তিনি। ফলে, আমার সুযোগ ঘটল। যা-ই বলি না কেন, সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে গান করে একটি প্ল্যাটফর্ম পেলাম আমি। সবাই আমাকে চিনল।’
সংগীতজগতের সঙ্গে যুক্ত পরিবারেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা অনুপ ঘোষালের। বাবা অমূল্যচন্দ্র ঘোষাল, মা লাবণ্য ঘোষাল। মাকে দেখেই সংগীতজগতের প্রতি অনুরাগ জন্মায় অনুপের। প্রথম আলোকে তিনি বলেছিলেন, ‘শুধু মা নয়, আমার দিদি গীতা সেনগুপ্তর কাছেও আমি গান শিখেছি। আসলে খুব ছোট বয়স থেকে আমি গানের ভেতরই বড় হয়েছি। এরপর “শিশুমহল” নামে এক অনুষ্ঠানে গান করতাম। আমি তখন অনেক ছোট। এত ছোট যে মাইক্রোফোনের নাগাল পেতাম না। ফলে মাইক্রোফোনের নাগাল পেতে আমাকে বালিশের ওপর বসিয়ে দেওয়া হতো।’
অনুপ ঘোষাল আশুতোষ কলেজ থেকে মানবিকে স্নাতক। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ। নজরুলগীতির রূপ ও রসানুভূতি ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়। ১৯৬৬-৬৭ সালে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকে সংগীত ভারতীয় ডিগ্রি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে রবীন্দ্রসংগীত শেখা অনুপ ঘোষাল।
বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর আরও অনেক গান জনপ্রিয় হয়েছে। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল শেখর কাপুরের পরিচালনায় হিন্দি ছবি ‘মাসুম’। নাসিরুদ্দিন শাহ-শাবানা আজমি-যুগল হংসরাজ অভিনীত সেই ছবিতে অনুপ ঘোষালের একটি গান তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল,‘তুঝসে নারাজ নেহি জিন্দেগি হ্যায়রান হুঁ ম্যায়...’।