সাদা ধুতি–পাঞ্জাবি। চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। বাঁ হাতে চেইনের পুরোনো আমলের সাদা ঘড়ি। আর যখন মাইকে ফুঁ দিলেন, তখন বুঝতে বাকি রইল না কিংবদন্তি গায়ক হেমন্তকে মনেপ্রাণে ধারণ করেন সত্যজিৎ দাস। সত্যজিৎ দাস ভারতের জি বাংলার ‘সা রে গা মা পা’খ্যাত শিল্পী। তাঁর চেতনাজুড়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাই গলায় সব সময় এই কিংবদন্তি শিল্পীর গান। গতকাল রোববার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় এই শিল্পী মাতিয়ে রেখেছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে উপস্থিত হাজারখানেক দর্শক–শ্রোতাকে।
‘আমি গান শোনাব একটি’ শীর্ষক গানের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যার সূচনা করেন সত্যজিৎ। এরপরই বৃষ্টির সন্ধ্যায় উপহার দিলেন ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন’ গানটি। এরপর মাপা কণ্ঠে একে একে শোনালেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় গান ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’, ‘আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি’, ‘পৃথিবীর গান আকাশকে মনে রাখে’, ‘পথ হারাব বলে এবার পথে নেমেছি’ ইত্যাদি ।
মাঝে হেমন্তের সুরে হিন্দি ‘নাগিন’ ছবির একটি গান শুনিয়ে প্রশংসায় ভাসেন সত্যজিৎ দাস। উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে তাঁর জন্মমাসে স্মরণ করতে এ আয়োজন করা হয়। আর সেখানে গানের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে শিল্পীকে স্মরণ করে সত্যজিতের কথামালা। শিশুমেলা নামে একটি সংগঠনের কর্ণধার রুবেল দাশ মূলত এই সংগীতায়জনের পেছনের মানুষ।
১৯৫৮ সালে পূজার গ্রামোফোন রেকর্ডে প্রচারিত গানও উঠে আসে সত্যজিতের কণ্ঠে। এ পর্যায়ে তিনি করেন সলীল চৌধুরীর লেখা ও সুরে হেমন্তের গান ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’। গানটির হিন্দি ভার্সনও একসঙ্গে করেন সত্যজিৎ।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের কথা এলেই মহানায়ক উত্তমকুমার থাকবেন না, তা কী করে হয়। ১৯৬১ সালে মুক্তি পায় উত্তমকুমারের ছবি ‘দুই ভাই’। সেই ছবির সংগীত পরিচালনায় ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ‘আমার জীবনের এত খুশি এত হাসি কোথায় গেল’ গানটি শুনতে শুনতে শ্রোতারা ফিরে গেলেন চলচ্চিত্রটিতে। একই চলচ্চিত্রের ‘তারে বলে দিয়ো, সে যেন আসে না’ গানটির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন শ্রোতারা। আবার সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবির বিখ্যাত গান ‘এই রাত তোমার আমার’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে গভীর প্রেম–বিরহের আবহ ছড়িয়ে দেন সত্যজিৎ। ‘খিড়কি থেকে সিন্ধু দুয়ার’ গানের মধ্য দিয়েও উত্তমকুমারকে স্মরণ করলেন শিল্পী।
সুরের জাদুকরদের হারিয়ে যাওয়ার আগে আবৃত্তিকার রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত কথামালায় অংশ নেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, অধ্যাপক এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, নিরুপম দাশ ও শিল্পী রিয়াজ ওয়ায়েজ।
সত্যজিৎ শেষ দিকে বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র ‘দেয়া নেয়া’র ‘গানে ভুবন ভরিয়ে দেব...মনে রেখো এই শেষ গান’ শোনান। শ্রোতারা যেন হারিয়ে গেলেন উত্তম-তনুজার সেই অমর প্রেমের শেষ দৃশ্যে। আর গানের রেশ নিয়ে পা বাড়ালেন বাড়ির পথে।