‘আমার গানের সঙ্গে শাবনূরের এত সুন্দর ঠোঁট মেলানো, মনেই হতো না আমি গানটি গেয়েছি। গানগুলোতে শাবনূরের ঠোঁট মেলানো, অভিব্যক্তি দেখলে মনে হতো, সে নিজেই গাইছে। স্বীকৃতির কতটুকু আমার, কতটুকু শাবনূরের ভাবিনি। “ভালোবাসা থাকো তুমি দূরে”, “কিছু কিছু মানুষের জীবনে”সহ অনেক গানে শাবনূরের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম।’ নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূরকে নিয়ে এভাবেই বলেছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। দেশে তাঁদের তেমন আড্ডা দেওয়া সুযোগ না হলেও এবার অস্ট্রেলিয়ায় জমেছিল আড্ডা।
পর্দায় শাবনূরের ঠোঁট মেলানো বেশির ভাগ প্রশংসিত গানের গায়িকা কনকচাঁপা। সেই গায়িকার সঙ্গে দেখা হবে। এ নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই শাবনূরের মধ্যে। ফেসবুকেও ভক্তদের সেই খবর জানিয়ে দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। তাঁদেরও একটা বায়না ছিল, ফেসবুকে লাইভ হোক। সব মিলিয়ে সেই আড্ডার দিনক্ষণ তৈরি হয়। তাঁরা দেখা করেন। এ যেন সিনেমার মতোই ঘটনা। সেই ঘটনা প্রসঙ্গে কনকচাঁপা জানান, অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর দেবরের বাসায় দেখা হয়। দীর্ঘদিন পরে সেই আড্ডা জমে উঠতে সময় লাগে না। সেই আড্ডায় ছিল কনকচাঁপার স্বামী সুরকার ও সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খান, শাবনূরের বোন ও পরিবারের সদস্যরা।
গত রোববার সকালে অস্ট্রেলিয়ায় কনকচাঁপার এক আত্মীয়র বাসায় অপেক্ষায় ছিলেন। সময়মতো শাবনূর সঙ্গে ফুল, চকলেটসহ নানা কিছু নিয়ে হাজির। কনকচাঁপা বলেন, ‘বাসা থেকে বেরিয়ে শাবনূরের গাড়ির দিকে এগিয়ে যাব, এর আগেই পাখির মতো ডানা মেলে দৌড়ে এসে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শক্ত করে ঠেসে ধরে বুকে জড়িয়ে রাখল। আমি শাবনূরের হার্টবিটের অবস্থা বুঝতে পারছিলাম, আর পাচ্ছিলাম মিষ্টি একটা সুবাস।’
কনকচাঁপার ছেলের বিয়েতে সর্বশেষ তাঁদের দেখা হয়। সেটাও বেশ কয়েক বছর আগে। শাবনূর এসেছিলেন সেই বিয়েতে। এর আগে তাঁদের পরিচয় থাকলেও নিয়মিত তেমন কথা হতো না। তেমন দেখাও হতো না। হাতে গোনা কয়েকবার তাঁদের দেখা হয়েছে। কারণ, সেই সময় শাবনূর রাত–দিন শুটিং, ডাবিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। অন্যদিকে কনকচাঁপাও ব্যস্ত গানে। এক স্টুডিও থেকে অন্য স্টুডিওতে। একসঙ্গে আর শিডিউল মেলানো সম্ভব হতো না। কিন্তু তাঁরা যেন দুজন এক প্রাণ। দুজনই দুজনের কাছে ভীষণ আপন। আত্মার আত্মীয়। তাই এবার দেখা হওয়াটা ছিল বিশেষ।
সেই ঘটনা প্রসঙ্গে কনকচাঁপা বলেন, ‘শাবনূর আমাকে কদমবুসি করার জন্য ঝুঁকে গেল। আমি ওকে আটকিয়ে আবার বুকে নিলাম। শাবনূর এক চঞ্চলা কিশোরী! রঙিন প্রজাপতি! তার হাসিতে কাচের গ্লাস ভাঙার উপক্রম! ওর জায়গা আমার বুকেই।’
‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল’সহ অনেক জনপ্রিয় গানের কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা এবং গানগুলোতে ঠোঁট মেলানো শাবনূর কী করেন, তা আগ্রহ নিয়ে দেখছিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা। পরে কনকচাঁপার স্বামী মইনুল ইসলাম খান বাসার অন্যদের সঙ্গে শাবনূরকে পরিচয় করিয়ে দেন।
এর আগে ছেলের বিয়েতে শাবনূরকে পেয়ে অবাক হয়েছিলেন। সেদিনই বুঝেছিলেন, শাবনূর কেবল ভালো অভিনেত্রীই নন, ভালো মানুষও। বিয়েতে আসা অনেকেই তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার বায়না ধরলেও শাবনূরের মধ্যে কোনো বিরক্তি দেখেননি কনকচাঁপা। দীর্ঘদিন পরে শাবনূরকে দেখে এই গায়িকা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভাবতে অবাক লাগছিল, এই আজন্ম কিশোরী হেসে খেলে, দারুণ অভিনয় দিয়ে আর পদ্মপুকুরের মতো টলটলে নয়নজুড়ানো রূপশ্রী দিয়ে, বাস্তবানুগ উপস্থিতি দিয়ে ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে পুরো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনকে একা, এক হাতে বহন করেছে অবলীলায়। এই শাবনূর, এই চপলা সহজিয়া মানুষটি। আমরা সবাই বিস্মিত। তার চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা দায়! অন্তর্ভেদী তার দৃষ্টি!’ এখানে এক মজার ঘটনা লক্ষ করেন কনকচাঁপা। তাঁদের পোশাকও সেদিন মিলে যায়। এই কাকতালীয় ঘটনাও অবাক করেছে তাঁকে।
শাবনূর দেখা করতে আসার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। সিনেমার সেই ‘নূপুর’, ‘ফুল’, সেই ‘সখী’ পুরোটা সময় কথা বলে যাচ্ছিল। শাবনূর একবার কনকচাঁপাকে জড়িয়ে ধরেন, একবার সেলফি তোলেন। কিছুক্ষণ পরে আবার চুমু দেয়। কখনো কেক কাটার জন্য অপেক্ষা না করে কেকের ওপর বসানো ফল তুলে খাইয়ে দেন।
বিদায়ের সময় সে আমার চোখে তাকায়! আর আমি ভাবি এই শাবনূর একদম আমাদের। আমাদের এ যুগের মহানায়িকা। আর তাঁর ঠোঁটে আমি অনেক গেয়েছি, ভাবতেই আবেগাপ্লুত হই। আমি বলি ঠিক আছে, শাবনূর তুমি যাও। শাবনূর বলে, “না না আপু, আপনি আগে রওনা দেন, তারপর আমি যাব। আপনার আগে আমি যাব না!”
মইনুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি আমাকে অনেক পছন্দ করেন সে কথা বললেন। আমরা ছবি তুললাম। পরে শাবনূর আমার হাত এমনভাবে ধরল যে সেখানে থাকা মিউজিশিয়ানরা আমাদের নিয়ে মজা করতে শুরু করলেন। বলতে চাইলেন, কী রোমান্টিক...শাবনূর আমার হাত ধরা দেখে কনকচাঁপা আবার আমাদের মাঝখানে এসে গাইতে শুরু করলেন, “বিধি তুমি বলে দাও আমি কার, দুটি মানুষ একটি মনের দাবিদার”; তখন শাবনূর আবার হেসে কনকচাঁপার দিকে ইশারা করে আঙুল দিয়ে আমাকে দেখিয়ে দেয় আর বলে, মনের দাবিদার সে। সব মিলিয়ে দারুণ সময় কেটেছে।’
সেদিন তাঁদের একসঙ্গে বাইরে ঘোরার কথা ছিল। কিন্তু শাবনূরের আবার ‘প্রহেলিকা’ সিনেমা দেখার শিডিউল থাকায় যেতে পারেননি। সেখানে বাংলাদেশের অনেকের সঙ্গে দেখা করার কথা। সুরকার ও সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বেশি সময় নেই। তাই আমরা ছোট ভাইয়ের বাসার পাশে ঘুরলাম। ফুলের বাগানে আড্ডা দিলাম। ওর সিনেমা নিয়ে কথা হলো। অনেকেই মনে করে ওর ঠোঁট মেলানো গানগুলো শাবনূরের গাওয়া, সেটা নিয়ে মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করল শাবনূর। এর আগেও করেছে। এ ছাড়া এখন কী করছে, সেগুলো নিয়ে কথা হলো। সে অনুমতি নিয়ে লাইভ করল। পুরো সময় মাতিয়ে রাখল। দারুণ একটা সময় কেটেছে।’
এবার বিদায়ের পালা। কনকচাঁপা যাবেন শেষ দিনের মতো ঘুরতে। পরের দিন দেশে ফিরতে হবে। অন্যদিকে শাবনূর যাবেন সিনেমা দেখতে। শেষেও ‘আনন্দ অশ্রু’ সিনেমার এই নায়িকা কানকচাঁপাকে জড়িয়ে আবার চুমু দেন। এ যেন দীর্ঘদিনের জমে থাকা কৃতজ্ঞতা। একসময় শাবনূর বছরের পর বছর তাঁর গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন। সেই গানগুলো এখনো দেশের দর্শকদের মুখে ঘোরে। বহু সাক্ষাৎকারে শাবনূর কনকচাঁপার প্রশংসা করেছেন। এবার সামনাসামনি ঋণ পরিশোধের পালা।
কনকচাঁপা বলেন, ‘বিদায়ের সময় সে আমার চোখে তাকায়! আর আমি ভাবি এই শাবনূর একদম আমাদের। আমাদের এ যুগের মহানায়িকা। আর তাঁর ঠোঁটে আমি অনেক গেয়েছি, ভাবতেই আবেগাপ্লুত হই। আমি বলি ঠিক আছে, শাবনূর তুমি যাও। শাবনূর বলে, “না না আপু, আপনি আগে রওনা দেন, তারপর আমি যাব। আপনার আগে আমি যাব না!” আমি গাড়িতে উঠলাম। মন পড়ে রইল শাবনূরে। যাওয়ার সময় মনে মনে গাইছিলাম, “আমাকে ছেড়ে তুমি যেও না, না না না যাব না, তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ।” সত্যিই শাবনূর এখনো হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ।’
অস্ট্রেলিয়ায় গানের অনুষ্ঠানে গিয়ে শাবনূরের সঙ্গে দেখা করেন কনকচাঁপা। গত সোমবার দেশে ফিরেছেন এই গায়িকা।