সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার প্রেক্ষাপটে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তাহসান বলেছেন, তিনি কখনো বিসিএস পরীক্ষা দেননি। আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আলোচিত সৈয়দ আবেদ আলী কখনো তাঁর মা জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের গাড়িচালক ছিলেন না।
অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ২০০২ সালের মে মাস থেকে ২০০৭ সালের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ছিলেন। আর সৈয়দ আবেদ আলী ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পিএসসির গাড়িচালক ছিলেন।
৫ জুলাই অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পিএসসির দুজন উপপরিচালক ও একজন সহকারী পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আবেদ আলীর স্বীকারোক্তিতে ২০০৫ সাল থেকে পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন আবেদ আলী। এই অপকর্মের মাধ্যমে তিনি ঢাকায় দুটি বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট, দামি গাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে বলা হয়, সৈয়দ আবেদ আলী পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সৈয়দ আবেদ আলী তাঁর গাড়িচালক ছিলেন না। তিনি পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগেই আবেদ আলী চাকরিচ্যুত হন। আবেদ আলীকে তিনি কখনো দেখেননি।
এর মধ্যে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সৈয়দ আবেদ আলী পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের গাড়িচালক ছিলেন। এর সঙ্গে আরেকটি বিষয়ও আলোচনায় আসে যে জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম পিএসসির চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর ছেলে বর্তমান সংগীতশিল্পী তাহসান ২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন। পরে ওই পরীক্ষা বাতিল হলে নতুন করে নেওয়া মৌখিক পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে লেখালেখি করেন।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আজ প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাহসানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাহসান বলেছেন, তিনি কোনো দিন বিসিএস পরীক্ষাই দেননি।
তাহসান এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার রাত নয়টায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ বুঝে এসব ভুয়া খবর। এরই মধ্যে মানুষজন এর প্রতিবাদও করছে। নানানজন নানানভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আরেকটা কথা, আমি কিন্তু কোনো দিন বিসিএস দিইনি। আর যেই গাড়িচালকের (সৈয়দ আবেদ আলী) কথা বলা হচ্ছে, তিনি কোনো দিন আমার আম্মার গাড়িচালক ছিলেন না।’
সৈয়দ আবেদ আলী প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার ঘটনায় ২০১৪ সালে পিএসসি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, আবেদ আলী যত দিন পিএসসির চাকরিতে ছিলেন, তত দিন তিনি সংস্থাটির কোনো চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন না। তিনি একজন যুগ্ম সচিবের গাড়িচালক ছিলেন।
তাহসান ও তাঁর মাকে নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সুরকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ। তিনি তাহসানের নাম জড়িয়ে বিভিন্ন কথা প্রচার করার কারণে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। প্রিন্স মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তাহসানের পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশ হবার খবরটি সত্য নয়। তাহসানের নামে ছড়ানো খবরটি একেবারেই মিথ্যা, সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
সাধারণ মানুষের নজর অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এসব ‘ভুয়া’ খবর সামনে আনা হয় মন্তব্য করে প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, ‘তাহসানের বাবা–মা দুজনেই অত্যন্ত সৎ মানুষ। ছোটবেলা থেকে দেখেছি। সাধারণ সরকারি কর্মকর্তাদের বাচ্চাদের মতো বড় হয়েছে তাহসান। কোনোরকম বিলাসিতা দেখিনি। যা তাহসানের অর্জন, সমস্তটা গানের জন্যই। প্রকৃত অসৎদের ধামাচাপা দেয়ার জন্য এগুলো ছড়ানো হচ্ছে। তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’