গাওয়ার কথা ছিল ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। কিন্তু গেয়েছেন প্রায় তিন ঘণ্টা। স্টেডিয়ামের ভেতরে থাকা দর্শক-শ্রোতাদের তুষ্ট করেছেন পাকিস্তানি গায়ক আতিফ আসলাম। আবার টিকিট কেটেও যাঁরা ভেতরে ঢুকতে পারেননি, তাঁরা ছিলেন ত্যক্তবিরক্ত। ছিল বিমানবন্দর সড়কের পথচারীদের ভোগান্তি। সবকিছু ছাপিয়ে আতিফ আসলাম নিয়ে ‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২.০’ শিরোনামে কনসার্ট যেন মুগ্ধতার চেয়ে বেশি চরম অব্যবস্থাপনার উদাহরণ হয়ে রইল!
গত শুক্রবার আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই কনসার্টের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে চরম অব্যবস্থাপনা—এমনটাই মত দিয়েছেন অনুষ্ঠানে আসা দর্শকেরা। আতিফ আসলাম মঞ্চে ওঠার পর বৈদ্যুতিক গোলযোগ, টিকিট কেটেও দর্শকের ভেন্যুতে প্রবেশ করতে না পারা, ভেন্যুর ফটকে হয়রানি, ধারণক্ষমতার বাইরে দর্শকসহ নানা অভিযোগ ছিল। কনসার্টকে কেন্দ্র করে এদিন উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কে তীব্র ট্রাফিক জ্যাম দেখা দেয়, এতে করে বিমানবন্দরগামী ও বিদেশফেরত যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়—যা নিয়ে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশনের আরিফা শবনম আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানালেন, দর্শকের ভালোবাসা তাদের আপ্লুত করেছে। তিনি বলেন, ‘এত বড় আয়োজনে কিছু ভুলত্রুটি হয়ে থাকতে পারে, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমরা ইতিমধ্যে ত্রুটিগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিয়েছি, যাতে ভবিষ্যতে আরও দারুণ এবং স্মরণীয় কনসার্ট দর্শকদের উপহার দিতে পারি।’
চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা মাতাতে এসেছেন আতিফ আসলাম। গতকাল বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২.০’ কনসার্টে অংশ নিয়েছেন তিনি। এই কনসার্ট আয়োজন করছে ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশন। আতিফ ছাড়াও কনসার্টে এদিন পরিবেশনায় অংশ নেন আরেক পাকিস্তানি তরুণ শিল্পী আবদুল হান্নান, বাংলাদেশের তাহসান খান ও ব্যান্ড কাকতাল।
আতিফ আসলাম যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত পৌনে নয়টা। মঞ্চে ওঠার পরপরই বৈদ্যুতিক গোলযোগ দেখা দেয়। এতে গাইতে ২০ মিনিট দেরি হয় আতিফ আসলামের। গাওয়া যখন শুরু করেন, একটানা গেয়েছেন তিন ঘণ্টা। বৈদ্যুতিক গোলযোগের পর ‘তু চাহিয়ে’ গান দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন আতিফ। এরপর একে একে গেয়েছেন ‘তেরা হুনে লাগা হুন’, ‘জিনা জিনা’, ‘দিল দিয়া গাল্লা’, ‘ম্যায় তেনু সামজাওয়ান কি’, ‘সো জানে দো’, ‘ও রে প্রিয়া’, ‘মেরে পিয়া ঘার আয়া’, ‘আউগে যাব তুম ও সাজনা’, ‘এক প্যায়ার কা নাগমা হে’, ‘পেহলি নাজার মে’, ‘পেহলা নাশা’, ‘কেয়া হুয়া তেরা ওয়াদা’, ‘মেরা গীত আমার কর দো’, ‘কুচ ইস তারহা’, ‘ওহ লামহে’, ‘তেরে লিয়ে’, ‘তু তু হে ওয়াহি’, ‘পেহেলি দাফা হে’, ‘দমা দম মাস্ত কালান্দার’।
গানের পাশাপাশি ভক্ত-শ্রোতাদের আবদার মিটিয়েছেন তিনি। মঞ্চের সামনের দর্শকের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ড, ছবি ও টি-শার্টে নিজের স্বাক্ষর দিয়েছেন পাকিস্তানি এই শিল্পী। গানের সময় ভক্তদের গলা মেলাতে মাইক্রোফোন এগিয়েও দেন তিনি। গানের মাঝে গিটার বাজিয়ে মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। গিটার বাজানো শেষে আবার গান শুরু করেন আতিফ। রাত ১১টায় মঞ্চ থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু শ্রোতাদের আবদারে আবার মঞ্চে আসেন। গাইলেন আরও ৪০ মিনিট। এ সময় আতিফ গেয়েছেন, ‘গুলাবি আঁখে’, ‘তেরে বিন’, ‘হোনা থা প্যায়ার’, ‘তু হি রে’, ‘তু জানে না’, ‘কুন ফায়া কুন ফায়া’, ‘দিল মেরি না শুনে’, ‘তাজদার-ই-হারাম’, ‘ম্যায় রং শারবতো কা’, ‘তেরে সাং ইয়ারা’সহ শ্রোতৃপ্রিয় আরও কিছু গান।
বাংলাদেশকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি উল্লেখ করে এদিন দর্শকের উদ্দেশে আতিফ বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় আমার সেকেন্ড হোম, এখানকার দর্শকের ভালোবাসা নেওয়ার জন্য আমি অপেক্ষায় থাকি। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
আতিফ আসলাম মঞ্চে ওঠার আগে জুলাই ‘বিপ্লব’ নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের ভিডিও চিত্র ‘জুলাই অনির্বাণ’ দেখানো হয়। এরপরই মঞ্চে আসেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে কথা বলেন তিনি। এদিন বিকেল পাঁচটায় কাকতাল ব্যান্ডের গান পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। ব্যান্ডটি ‘গোলকধাঁধা’, ‘আবার দেখা হবে’, ‘সোডিয়াম’, ‘ওপেন সিক্রেট’সহ একাধিক গান গেয়ে শোনায়। এরপরই মঞ্চে ওঠেন পাকিস্তানের তরুণ সংগীতশিল্পী আবদুল হান্নান। ঘণ্টাখানেক পারফর্ম করেন তিনি। ‘ইরাদে’ গান দিয়ে এদিন পরিবেশনা শেষ করেন তিনি। পরিবেশনা শেষে দর্শকের উদ্দেশে আপ্লুত হান্নান বলেন, ‘জীবনে এই প্রথম এত দর্শকের সামনে গাইলাম। সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর জন্য, বাংলাদেশের দর্শকদের প্রতি অনেক ভালোবাসা।’
হান্নানের পরিবেশনা শেষে রাত আটটার দিকে স্টেজে ওঠেন তাহসান খান। ৩০ মিনিটের পরিবেশনায় একে একে তিনি গেয়েছেন ‘এখনো’, ‘প্রেম তুমি’, ‘কত দূরে’, ‘দূরে তুমি দাঁড়িয়ে’, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ও ‘প্রেমাতাল’। ‘আলো’ গান দিয়ে পরিবেশনা শেষ করেন তাহসান।