মূলত গানের মানুষ। জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’-এর জন কবির হিসেবেই মানুষ তাঁকে চিনেছেন, এরপর অভিনেতা হিসেবে। প্রথমে অল্পস্বল্প হলেও পরে নিয়মিত টিভি নাটকে দেখা যেত তাঁকে। তবে বছর কয়েক আগে সেখান থেকেও বিরতি নেন। ২০২০ সালে প্রথম করোনা বিধিনিষেধের পর ইউটিউবে শুরু হওয়া তাঁর পডকাস্ট এখন বেশ জনপ্রিয়। পডকাস্ট হলো অডিও বা ভিডিও অনুষ্ঠান, যা শ্রোতারা ব্যক্তিগত ডিভাইসে নিয়ে যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় শুনতে পারেন।
প্রথমে গায়ক, পরে অভিনেতা, হালে পডকাস্ট সঞ্চালক—ভবিষ্যতে আর কোন কোন পরিচয়ে হাজির হবেন? প্রশ্নটা পাড়তেই হেসে উঠলেন জন কবির। তিনি জানালেন, আগে থেকে কিছুই পরিকল্পনা করেন না। যত দিন ভালো লাগে, কাজটা করে যান, আগ্রহ হারিয়ে ফেললে ছেড়ে দেন। এই যেমন আগেই জানিয়ে রাখলেন তাঁর পডকাস্ট যতই জনপ্রিয়তা পাক, তিনি যদি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, ‘টা টা’ বলতে সময় নেবেন না।
বছর তিনেক আগে জন কবিরের পডকাস্টের আইডিয়াটি অবশ্য আসে গান থেকেই। ‘সাত-আট বছরের একটা পরিকল্পনা ছিল। সংগীতশিল্পী হিসেবে আমি জানি গানটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু যাঁরা শ্রোতা বা অন্য পেশার, তাঁরা গানকে কীভাবে দেখেন—এই মৌলিক আইডিয়া থেকেই শুরু করেছিলাম। এখন শোতে অন্যান্য বিষয়েও কথা হয়,’ বললেন জন।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মেজবাউর রহমান সুমন, সাফা কবির, আয়মান সাদিক, নুহাশ হুমায়ূন—পরিচালক, অভিনয়শিল্পীসহ নানা পেশার মানুষদের দেখা গেছে তাঁর অনুষ্ঠানে। এর মধ্যে লক্ষণীয় বিষয়, গানের মানুষদের উপস্থিতি কম। জন জানালেন, ব্যাপারটি ইচ্ছাকৃত। তাঁর ভাষ্যে, ‘যখন শুরু করি, তখন গানের মানুষদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কারণ, গান নিয়ে নানা সময়ে আমাদের তো কথা হয়ই। এটা নতুন কিছু নয়। এর চেয়ে বরং অভিনয়শিল্পী, খেলোয়াড়, ইনফ্লুয়েন্সাররা গান নিয়ে কী ভাবেন, এটা আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয়।’
কারও সঙ্গে কথা বলার আগে তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর করাটাই প্রচলিত রীতি। তবে জন জানালেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁর অবস্থান একেবারেই উল্টো। এ কারণেই পডকাস্টটি তাঁর কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সেটি কেমন? শিল্পী ব্যাখ্যা করলেন নিজেই, ‘আমি টিমকে বলে রাখি, অতিথি সম্পর্কে আমাকে কোনো কিছু জানাবে না। আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো অতিথি সম্পর্কে তাঁর মুখ থেকেই জানা। আগে থেকে জেনে বসে থাকলে মানুষটি সম্পর্কে অবচেতন মনে একটা পূর্বধারণা তৈরি হয়।’
সঞ্চালনা সম্পর্কে নিজের দর্শনের আরও ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বললেন, ছোটবেলা থেকেই তাঁর বই পড়তে ভালো লাগে না। জনের জানাশোনার বড় উৎস হলো টেলিভিশন, রেডিও আর মানুষ। বইয়ের পাতায় পড়ার চেয়ে মানুষের কাছ থেকে গল্প শোনা বরাবরই তাঁর কাছে বেশি আকর্ষণীয়।
জন কবিরের পডকাস্টের এ পর্যন্ত ৩ মৌসুমে ২৬ পর্ব প্রচারিত হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটিকে আলাদা করতে চান না তিনি, সব কটিই সমান প্রিয়। জন চেষ্টা করেন ফি বছর দুটি করে সিজন করতে, প্রতি সিজনে আট পর্ব। কিন্তু গানসহ নানা ব্যস্ততায় হয়ে ওঠে না।
বাইরের দেশে আজকাল নানা ধরনের শো হয়। জনের নিজের ভালো লাগে স্যাটারডে নাইট লাইভ, স্টিফেন কোলবার্টের শো, পডকাস্টের মধ্যে ভালো লাগে অ্যান্ড্রু শার্লসের অনুষ্ঠান। বাইরের শোর কথা উঠলেই অবধারিতভাবে উঠে আসে আরেকটি প্রশ্নও—বিদেশি শোতে নানা সংবেদনশীল বিষয়েও সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, অকপট উত্তর দেন অতিথিও। জন কি প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে বিতর্ক তৈরি হবে, এমন বিষয় এড়িয়ে যান? জন জানালেন, মানুষ শুনতে পছন্দ করবেন, এমন প্রশ্নই করেন না তিনি। তাঁর মতে, ‘নেতিবাচক বিষয় বাদ দিয়ে কথা বলি। যদি এমন কোনো অতিথি আসেন, যাঁর নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক আছে, চেষ্টা করি, সেটি দূরে রাখতে। এমন প্রশ্ন করি না যাতে তিনি সমস্যায় পড়েন। আলাপচারিতা যতটা সম্ভব “সামাজিক” রাখতে চাই।’
ভবিষ্যতে নিজের শোতে সরকারি বা বিরোধী দলের বড় কোনো নেতাকে পেলে খুশি হবেন জন। তবে অবশ্যই আলাপটা জমবে মজার কোনো বিষয়ে, রাজনীতি সেখানে থাকবে না।
অনেক দিন ধরেই নাটকে অনিয়মিত জন কবির। তাঁর পডকাস্টের পর্বগুলোর নিচে অনেক দর্শকও তাঁকে পর্দায় দেখতে চেয়ে মন্তব্য করেছেন। জন বলেন, ‘নাটক করতে গেলে একে তো প্রচুর সময় দিতে হয়, তা ছাড়া চিত্রনাট্যও পছন্দ হচ্ছিল না। ফলে বিরতি অবধারিত ছিল।’ তবে অভিনয়ের দরজা মোটেই পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেননি, ‘আমার কাছে চরিত্রই সব। পছন্দ হলে পাঁচ মিনিটের চরিত্রেও অভিনয় করব। নায়ক, খলনায়ক, কেন্দ্রীয় চরিত্র এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। পর্দায় ছাপ রাখা যাবে, এমন কিছু হলেই হলো।’
শুরুটা হয়েছিলে গানের জনকে দিয়ে, শেষটাতেও জানতে চাওয়া হলো গানের খবর। তিনি জানালেন, তাঁর ব্যান্ড ইনডালোর নতুন অ্যালবাম উত্তর খুঁজি দক্ষিণের কাজ চলছে। চলতি বছরের কোরবানি ঈদ বা তারপর আসবে অ্যালবামটি।