মিউজিক@ডেস্কে গাইলেন নবনীতা

মিউজিক@ডেস্ক আয়োজনে গাইছেন নবনীতা চৌধুরী
ছবি : জাহিদুল করিম

এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে ভোরের কাগজ অফিসে হাজির হলেন। ইচ্ছা লেখালেখি। সম্মানী পাওয়া যাবে। তাতে একটু স্বাধীনতা মিলবে, বাউণ্ডুলে হতেও বাধা নেই। তবে কিছুদিন পরই দেখা গেল, ভোরের কাগজ-এর সহকর্মীরা তাঁর কাছে গানের ফরমাশ করছেন। একটার পর একটা চলত গান। বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়ে গাইতে এসে এভাবেই নস্টালজিয়া ভর করেছিল নবনীতা চৌধুরীকে। সেই সময়ে ভোরের কাগজ-এ যাঁদের সঙ্গে গান-আড্ডা চলত, তাঁদের অনেকেই ছিলেন গতকালও। শিল্পী যে নস্টালজিয়ায় ভুগবেন, সে আর আশ্চর্য কী!

প্রথম আলোয় নবনীতার আগমনের হেতু মিউজিক@ডেস্ক। কাজের ফাঁকে কর্মীদের বিনোদন দিতে প্রথম আলোর নিয়মিত আয়োজন। বেলা সাড়ে তিনটায় এ আয়োজনে শ্রোতাদের সামনে আসেন নবনীতা। গান শোনানোর আগে প্রথম আলোকে জানালেন, নিজের মতো গাইতে পারবেন, তাঁর সাংবাদিকতা ছাড়ার এটিও একটি কারণ। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমার ইচ্ছাই ছিল গানে ফিরব। টেলিভিশনে পাঁচ দিন অনুষ্ঠান করার পর আবার গান করতে যাওয়া হতো না।’

নবনীতা চৌধুরী গান শুরুর আগেই প্রথম আলো কার্যালয়ের সপ্তম তলায় হাজির হয়েছিলেন বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা। দরজা খুলে নবনীতা চৌধুরী ভেতরে প্রবেশ করতেই করতালিতে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। প্রথম আলোর কর্মীদের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে নবনীতা জানান, এখানে গান শোনানোর আমন্ত্রণ তাঁর জন্য খুবই ‘আবেগময় অভিজ্ঞতা’। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।

নবনীতা চৌধুরী

লালনের গান দিয়ে আসর শুরু করেন নবনীতা। গতকাল ছিল বুদ্ধপূর্ণিমা। সবাইকে বুদ্ধপূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমার লালন সাঁইয়ের গান করতে গেলে সব সময়ই মনে হয়, আসলে আশরাফ-আতরাফের লড়াই, এই যে সবার জন্য সুবিচারের সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার—বাঙালির ভেতরে এগুলো যে শত শত বছর ধরে প্রবাহিত হয়েছে, তার প্রমাণ আমাদের এই লোকগানগুলো।’ এরপরই তিনি শোনালেন ‘এমন মানবসমাজ কবে গো সৃজন হবে’। কক্ষজুড়ে তখন পিনপতন নীরবতা।

এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা অনুষ্ঠানে একে একে ছয়টি গান শোনান নবনীতা। দ্বিতীয় গানটিও ছিল লালনগীতি—‘সত্য বল সুপথে চল’। এরপর দুটি রবীন্দ্রসংগীত—‘তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে’ ও ‘আমারে কে নিবি ভাই’। গান শুরুর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন সাঁইকে নিয়ে তাঁর কথা, গানের সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিকের ‘একলা’ পথ চলার রূপকের প্রয়োগ আয়োজনটিকে করে তুলেছিল আরও উপভোগ্য।

অনুষ্ঠানের শেষে হাসন রাজার দুই গান পরিবেশন করেন নবনীতা চৌধুরী—‘হাসন রাজায় কয়’ ও ‘রূপ দেখিলাম রে’। শেষ গানটির আগে শিল্পী জানান প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখা পড়ে রবীন্দ্রনাথ ও হাসন রাজার সম্পর্ক আবিষ্কারেরর কথা। সিলেটে রবীন্দ্রনাথের আগমনের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত লেখাটি পড়েই তিনি জানতে পারেন, সিলেট সফরের সময় হাসন রাজার গানের একটি বই রবীন্দ্রনাথের হাতে পৌঁছেছিল। পরে রবীন্দ্রনাথ তাঁর দুটি বক্তৃতায় ওই বই থেকে একটি গান উদ্ধৃত করেছিলেন।

‘রূপ দেখিলাম রে’ দিয়ে শেষ করবেন বলেও শেষ করতে পারেননি নবনীতা চৌধুরী। কারণ, শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেনের অনুরোধ, নবনীতা গেয়ে শোনান আরেকটি লালনগীতি ‘জাত গেল জাত গেল বলে’।
নবনীতা চৌধুরীর গানের পুরো আয়োজনটি ১২ মে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও অনলাইনে সম্প্রচার করা হবে।