যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক লালন ও লোকজ উৎসব। নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় শনিবার জ্যামাইকার ম্যারি লুইস একাডেমিতে এই উৎসবের আয়োজন করে লালন পরিষদ ইউএসএ। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেলা ২টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এবারের উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে ২০০ শিল্পী ও কলাকুশলী অংশ নেন।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন লোকগানের কিংবদন্তি শিল্পী নীনা হামিদ। এ সময় আরও ছিলেন লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় এবং মুক্তিযোদ্ধা নূরুন নবী প্রমুখ। অন্যদের মধ্যে আরও ছিলেন রাশেদ আহমেদ, শরাফ সরকার, আয়োজনের প্রধান উপদেষ্টা নুরুল আমিন, আহ্বায়ক আবদুল হামিদ, সমন্বয়ক গোপাল স্যানাল, স্বীকৃতি বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
উৎসবে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে যান লোকগানের শিল্পী লায়লা। অনুষ্ঠানে সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, শাহ মাহবুব, আলভিন, মাইশা জেসিন,সংগীতশিল্পী রেশমী, সপ্নীল সজীব, নৃত্যশিল্পী রাসেল আহমেদ এবং চিত্রনায়িকা ও নৃত্যশিল্পী মন্দিরা চক্রবর্তীর পরিবেশনা আমন্ত্রিত দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে।
উৎসবে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যোগ দেন দিনার মনি। লন্ডন থেকে আসা অদিতি রায়ের বিশেষ আলেখ্য ‘হু অ্যাম আই’ দর্শকেরা উপভোগ করেন। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল রোড আইল্যান্ড থেকে যোগ দেওয়া মহিতোষ তালুকদার তাপস ও তাঁর দলের বিশেষ পরিবেশনা। নিউ জার্সির চন্দ্রা ব্যানার্জির দলের দলীয় নৃত্য পরিবেশনা উৎসবকে অন্য মাত্রা দেয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাদিয়া খন্দকার, স্বাধীন মজুমদার ও সেঁজুতি তালুকদার। এবারের লালন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নিউইয়র্কের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার।
আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা নুরুল আমিন বলেন, ‘লালন কোনো জাতিভেদ মানতেন না। তাই তিনি গেয়েছেন, ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/ লালন কয় জাতির কি রূপ দেখলাম না এ নজরে।’ এরূপ সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিমুক্ত এক সর্বজনীন ভাবরসে সিক্ত বলে লালনের গান বাংলার হিন্দু-মুসলিম সবার কাছে সমান জনপ্রিয়। লালনের গান একসময় এতই জনপ্রিয় ছিল যে তা সাধারণ মানুষ ও নৌকার মাঝিমাল্লাদের মুখে মুখে শোনা যেত। এমনকি বর্তমানেও সব মহলে এ গানের কদর বাড়ছে। লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি, যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন নামেও পরিচিত। অসাম্প্রদায়িক থেকেই তিনি তাঁর সৃষ্টিকর্ম রচনা করেছেন। লালন শাহ এমন একজন মানুষ, যিনি সংগীতের মাধ্যমে সারা বিশ্বে প্রচার করে গেছেন মানবধর্ম। দুই বছর পর আবারও লালনকে নিয়ে এমন একটি আয়োজন করতে পেরে ভালো লেগেছে।’
সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশের বাঙালিরা কীভাবে লালনকে ধারণ করেন, তা এই আয়োজনের মাধ্যমে চমৎকারভাবে উপলব্ধি করা যায়। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আগ্রহী ব্যক্তিরা ছুটে এসেছেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে লালনের দর্শন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এমন একটি আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’