ব্যান্ড তারকা জেমস এমনিতে স্বল্পভাষী। খুব বেশি আয়োজনে তাঁকে দেখা যায় না। নিজের মতো থাকতে ভালোবাসেন দেশের ব্যান্ড সংগীত ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় এই তারকা। তবে এবার যেন তিনি নীরবতা ভাঙলেন। নিজের মতো করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাড়া দিলেন। ফেসবুকে লিখলেন আরেক ব্যান্ড তারকা পার্থ বড়ুয়াও।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ। অফলাইন ও অনলাইনে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকা। তবে এই আন্দোলন নিয়ে এবারই প্রথম নিজেদের মতো করে সাড়া দিলেন জেমস ও পার্থ।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে অনেকেই ফেসবুক ওয়ালে প্রোফাইল ও কাভার ফটোতে লাল রং দিয়ে রেখেছেন। সেই তালিকায় যোগ দিয়েছেন জেমস। আজ বৃহস্পতিবার লাল রঙের মাঝখানে বাংলাদেশের মানচিত্রের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন নগরবাউলখ্যাত জেমস। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৭ মিনিটে দেওয়া এই ছবিতে ২৫ হাজার রিয়্যাক্ট, প্রায় ২ হাজার মন্তব্য এবং শেয়ার হয়েছে দেড় হাজার।
একই দিনে সোলস ব্যান্ডের প্রধান পার্থ বড়ুয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আর কিন্তু চুপ থাকা উচিত হবে না মনে হচ্ছে।’
ভোর ৫টায় দেওয়া এই মন্তব্যে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার রিয়্যাক্ট এসেছে। মন্তব্য জমা হয়েছে ২ হাজার ৬ শতাধিক। শেয়ার হয়েছে ১ হাজার ৬০০ বার।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গতকাল বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে হেভি মেটাল ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেইট জানিয়েছে, তারা কখনোই জয় বাংলা কনসার্টে গাইবে না। ব্যান্ডটি লিখেছে, ‘অনেকেই প্রশ্ন করছেন, “আপনারা জয় বাংলা কনসার্ট করবেন?” যে ব্যান্ড দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, অন্যায় ও অবিচার নিয়ে গান করে, তারা কীভাবে এখন চিন্তা করে যে সামনের জয় বাংলা কনসার্টে বাজাবে? তাই প্রশ্নের উত্তর, “না”। ’
আজ দুপুরে রক ব্যান্ড নেমেসিসও এই কনসার্ট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
এক ফেসবুক পোস্টে ব্যান্ডটি লিখেছে, ‘গত দুই সপ্তাহের পরিপ্রেক্ষিতে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমরা আর কখনোই জয় বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করব না।’ হার্ড রক ব্যান্ড আরবোভাইরাস ফেসবুক পোস্টে লিখেছে, তারাও আর জয় বাংলা কনসার্টে গাইবে না।
এদিকে আজ চলমান ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে রাজপথে নামেন চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, থিয়েটারসহ শোবিজের নানা অঙ্গনের শিল্পী ও কর্মীরা। বৃষ্টিতে ভিজে উপস্থিত শিল্পীরা ব্যানার হাতে স্লোগান দিতে দিতে এসে দাঁড়ান ফার্মগেট এলাকায়।
উপস্থিত সবাই এই আন্দোলনে ছাত্রদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চলমান হত্যা, সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার আর হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম, ইরেশ যাকের, সিয়াম আহমেদ, আজমেরী হক বাঁধন, মোস্তফা মন্ওয়ার, সাবিলা নূর, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, নাজিয়া হক অর্ষা, শ্যামল মাওলা, নির্মাতা নূরুল আলম আতিক, আকরাম খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মাতিয়া বানু শুকু, রেদওয়ান রনি, আশফাক নিপুন, আদনান আল রাজিব, পিপলু আর খান, সৈয়দ আহমেদ শাওকী প্রমুখ।
এতে মোশাররফ করিম বলেন, ‘আমাদের দেশে যে অবস্থা বর্তমানে সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমরা ঘরে বসে থাকার মতো অবস্থায় নেই। আমরা শান্তি চাই। রক্ত দেখতে চাই না। গোলাগুলি, রক্ত দেখতে চাই না। আমি ও আমরা সাধারণ মানুষ। আমরা শান্তি চাই।’ অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে আমাদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, সেটি কি করেছেন, চেষ্টা করছেন? আমরা ভালো দিন দেখতে চাই। যেদিন থেকে গুলি চলেছে, সেদিন থেকেই আমরা মানসিকভাবে ভালো নেই। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্ম। যারা মারা গেছে, তাদের হত্যার বিচার চাই।’ পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এই রাজনীতি, ভয়ের রাজনীতি, এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে রাজনীতি, যেভাবে গুলি করা হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রয়োজন ছিল আরও আগে। বড্ড দেরি হয়ে গেছে।’