‘বাজুক প্রাণে বজ্রভেরী/অকূল প্রাণের সে উৎসবে’ স্লোগান ধারণ করে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে তিন দিনের জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে এ উৎসবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন।
১৬৩তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীতে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজকদের মতে, অতীতের সব আয়োজন ছাপিয়ে এবারের ৩৫তম আসর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, উৎসবের পুরোটাজুড়ে রয়েছেন দুই কিংবদন্তি। একজন হলেন কলিম শরাফী, অন্যজন সাদি মহম্মদ। উৎসবের মাধ্যমে উদ্যাপন করা হয় কলিম শরাফীর শততম জন্মবার্ষিকী। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত সাদি মহম্মদ স্মরণে।
নাচ-গান-আবৃত্তি আর নানা অঞ্চলের শিল্পীদের মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি হবে তিন দিনের অনুষ্ঠানে। আছে দলীয় নৃত্য ও জনপ্রিয় বাক্শিল্পীদের রবীন্দ্ররচনা পাঠ। রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এবারের আয়োজনে দেড় শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। তিন দিনের উৎসবটি সাজানো হয়েছে চারটি অধিবেশনে।
আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের লবিতে বিকেলে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে উৎসবের। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নৃত্যানন্দের শিল্পীরা পরিবেশন করে বৃন্দ নৃত্য। নৃত্যের সঙ্গে সমবেত সংগীত ‘আকাশ–ভরা সূর্য–তারা’, ‘বিপুল তরঙ্গ রে’ পরিবেশন করেন সংস্থার শিল্পীরা। এরপর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় মিলনায়তনে।
সন্ধ্যায় উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার। দুই গুণী শিল্পী কলিম শরাফী ও সাদি মহম্মদ সম্পর্কে আলোচনা করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম ও লেখক-আলোকচিত্রী এম এ তাহের। স্বাগত কথনে অংশ নেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সংগীতশিল্পী পীযুষ বড়ুয়া। উৎসবের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ।
এদিন মিলনায়তনের বাইরে বৃন্দ নাচ ও গান শেষে মূল মঞ্চে ঐতিহ্য মেনে পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। এই পর্বে সমবেত গান ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’Õ ও Ô ‘হে নূতন, দেখা দিক আর–বার’Õ পরিবেশন করা হয়। পরে উদ্বোধনী কথনে অংশ নেন অতিথিরা। আলোচনা শেষে হয় প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একে একে একক ও দলীয় পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পীরা।
শিল্পীদের কণ্ঠে শোনা গেল ‘কেহ কারো মন বুঝে না’, ‘হার মানা হার’, ‘প্রথম আদি তব শক্তি’, ‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে’, ‘মহারাজ, একি সাজে এলে’, ‘তাই তোমার আনন্দ’, ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’, ‘নয়ন তোমারে পায় না’, ‘এ কী লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’সহ আরও অনেক গান।
তিন দিনব্যাপী উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্য প্রয়াত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশে। তাই উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল তাঁরই অনুজ বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নীপার নেতৃত্বে ছিল নৃত্যাঞ্চলের শ্রদ্ধা নিবেদন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল শুক্রবার (১০ মে) একই স্থানে দ্বিতীয় অধিবেশন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেবে সুরের ধারা, রবিরাগ, সংগীত ভবন, বাফা, বৈতালিক, সুরতীর্থ ও বিশ্ববীণার শিল্পীরা। ক
য়েক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে একই স্থানে তৃতীয় অধিবেশনের সূচনা হবে সংস্থার রীতি অনুযায়ী দুটি কোরাসের মধ্য দিয়ে। এদিন সংস্থার শিল্পীরা পরপর পরিবেশন করবেন ‘ওই মহামানব আসে’ ও ‘বৈশাখ হে, মৌনী তাপস, কোন্ অতলের বাণী’। তৃতীয় ও সমাপনী দিন আগামী শনিবার (১১ মে) বিকেল পাঁচটায় সমাপনী আয়োজন শুরু হবে। থাকবে সংস্থার শিল্পীদের একক ও দলীয় পরিবেশনা। সমাপনী অধিবেশনের সূচনা হবে পরপর ‘জগত জুড়ে উদার সুরে আনন্দগান বাজে’ ও ‘আলোকের এই ঝর্নাধারায়’ গানের মধ্য দিয়ে। পরে নিয়মিত পর্বে অংশ নেবেন সংস্থার শিল্পীদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত শিল্পীরা। তিন দিনের এই আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত।