মাস তিনেক আগে সংগীতশিল্পী কনকচাঁপার জন্মদিনে শাবনূর বলেছিলেন, ‘আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে তোমার বিশাল অবদান রয়েছে।’ গতকাল ১৭ ডিসেম্বর শাবনূরের জন্মদিনে তাঁকে প্রশংসায় ভাসালেন জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী। শাবনূরকে বাংলাদেশের পরিপূর্ণ প্রতিভাময়ী অভিনয়শিল্পী হিসেবে বলেছেন, যাঁকে বাংলাদেশের মানুষ কখনোই ভুলবে না।
কনকচাঁপার গাওয়া অসংখ্য গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। এর মধ্যে ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই’, ‘আমার নাকেরই ফুল বলে রে’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’, ‘ভালোবাসা থাকো তুমি দূরে’, ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে’সহ বেশির ভাগ গানই পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। গায়িকা ও নায়িকার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ না হলেও দুজনের প্রতি দুজনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে।
জন্মদিনে কনকচাঁপা তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘শাবনূর, একটি পরিপূর্ণ প্রতিভাময় শিল্পীর নাম, যাঁকে বাংলাদেশ কখনোই ভুলতে পারবে না! তাঁর অভিনয়শৈলী, তাঁর উচ্চারণ, তাঁর দৈহিক সৌন্দর্য, তাঁর চাঁদপানা মুখশ্রী গোলাপের মতো হাসি এবং তার নয়ন যুগল পুরো যুব সম্প্রদায়কে বুঁদ করে রেখেছে কয়েক যুগ। তার রেশ এখনো কাটেনি, কাটবেও না কখনো। এই “শাবনূর” অ্যাপিসোড থেকে দর্শক বেরোতেও চায়নি, চাইবেও না। কারণ, এমন প্রতিভার অধিকারী শত জনমে একজনই হয়।’
কনকচাঁপা তাঁর ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘শাবনূরের সমসাময়িক অনেকেই আছেন কিন্তু কাছাকাছি কেউ নেই। আমি বলা যায় প্রথম থেকেই তাঁর জন্য গাইছি। আশ্চর্যজনক কথা যে তাঁর সঙ্গে আমার খুবই কম দেখা হয়েছে। আমি আমার মতো গেয়েছি, তিনি তাঁর মতো অভিনয় করেছেন। কিন্তু যখন পর্দায় দেখেছি, তখন আমারই বিশ্বাস হয়নি যে এটা আমি গেয়েছি, মনে হয়েছে এটা যেন তাঁরই কণ্ঠ! এই যে একাকার হয়ে যাওয়া, এই ক্রেডিট আমি শাবনূরকেই দিতে চাই।’
শাবনূরকে ভার্সেটাইল অভিনেতা উল্লেখ করে কনকচাঁপা লিখেছেন, ‘তিনি আসলে আমাদের কবরীর পরে ভার্সেটাইল, যাকে বলে সেই উঁচু মানের মহানায়িকা। সিরিয়াস অভিনয়, হাসির অভিনয়, ছটফটে দুরন্ত কিশোরীর অভিনয়—সবই দুর্দান্ত। তবে তাঁর ভয়ংকর সুন্দর চোখে যখন অশ্রু ঝরে, তখন একটা কথাই মাথায় আসে “ফুল নেব না অশ্রু নেব ভেবে হই আকুল!” আগেই বলেছি ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর সঙ্গে আমার খুব কম দেখা হয়েছে। আমার রেকর্ডিং স্টুডিও আর তাঁর কর্মক্ষেত্র আলাদা জায়গায় হওয়াতেই এমন হয়েছে। কিন্তু যখন তাঁকে দেখেছি, খেয়াল করেছি খুব সহজ সরল তাঁর উপস্থিতি। তাঁর কাঁচভাঙা হাসি আমার মন কেড়ে নিয়েছে। সবারই বোধ হয় এভাবে অনুভব হয়। সাধারণভাবে দেখাসাক্ষাৎ হলে মনে হয়েছে এই মেয়ে সিরিয়াস অভিনয় করে কীভাবে!’
ব্যক্তি শাবনূরের প্রতি কনকচাঁপা তাঁর মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করলেন এভাবে, ‘আমার ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিতে গিয়েছিলাম তাঁর বাসায়। তখন তাঁর আন্তরিক আতিথেয়তা দেখে আমি মুগ্ধ! তখনো আমি নিরাভরণ শাবনূরকে দেখে চমকে উঠেছি, তাঁর বিরল সৌন্দর্য ও চোখের চাহনিতে। আমি খুবই গর্বিত তাঁর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময়ই আমি সঙ্গে ছিলাম। তাঁর অভিনীত এক শ ভাগের নিরানব্বই ভাগ গানই আমার গাওয়া। আমাদের দুই দেহ এক প্রাণ বলা যায়।’
১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর শাবনূরের জন্ম যশোরের শার্শা উপজেলায়, তাঁর বাবার নাম শাহজাহান চৌধুরী। তিন ভাই–বোনের মধ্যে শাবনূর বড়। শাবনূরের ছোট বোনের নাম ঝুমুর, ভাই তমাল। পারিবারিকভাবে শাবনূরের নাম রাখা হয় কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। পরে কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর নামটি পাল্টে চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম রাখেন শাবনূর। ১৯৯৩ সালে এই পরিচালকের ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে ঢালিউডে পথচলা শুরু হয় তাঁর।