পারশা মাহজাবীন
পারশা মাহজাবীন

অনেকে বলেন, গানটি শুনলে মন ভার হয়ে আসে, কান্না পায়...

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে আলোচিত ‘চলো ভুলে যাই’ গানটি রাফার সংগীতায়োজনে প্রকাশ করছেন তরুণ সংগীতশিল্পী পারশা মাহজাবীন। ভালোবাসা দিবসের একক নাটকে অভিনয় করছেন, একটি ওয়েব সিনেমাতেও অভিনয়ের কথাবার্তা চলছে।

হাতে ইউকেলেলে; কণ্ঠে গান। আর কোনো আড়ম্বর নেই। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে ‘চলো ভুলে যাই’ গানে আলোড়ন তোলেন পারশা মাহজাবীন। খালি গলায় গাওয়া গানটি আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। প্রথমবার রেকর্ড ভার্সনে (সংস্করণ) প্রকাশিত হবে।

২০ নভেম্বর প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তরুণ এই গায়িকা জানান, আন্দোলনের সেই অবরুদ্ধ সময়ে দ্রোহের সুরে গানটি বেঁধেছিলেন তিনি। গানটি এখনো শ্রোতারা মনে রেখেছেন। পারশা বলেন, ‘এখনো অনেকে আমাকে বলেন, গানটি শুনলে মন ভার হয়ে আসে, কান্না পায়। তাই ভাবলাম, গানটি রেকর্ড করি, যেন এটি চিরকাল থেকে যায়।’

পারশা মাহজাবীন

আন্দোলনের মধ্যে মাত্র ১০ মিনিটে ‘চলো ভুলে যাই’ লিখেছেন পারশা; গানের সুরও বেঁধেছেন তিনি। বিরুদ্ধ সময়ে ঝুঁকি নিয়ে গানটি করায় সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানসহ আরও অনেকে পারশার প্রশংসা করেছেন।

রাফার সংগীতায়োজনে আলোচিত গানটি রেকর্ড করেছেন পারশা। রাফার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বললেন, ‘তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। উনিও তো আন্দোলনে আমাদের সবার পাশে ছিলেন। ভাইয়া ভীষণ মজার মানুষ, সেই সঙ্গে গুণী মানুষও বটে।’

‘চলো ভুলে যাই’ গানটি পারশার ক্যারিয়ারের বাঁকবদল করেছে। সাধারণ শ্রোতাদের মধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন এই ‘জেনজি’ গায়িকা। হালে ব্যস্ত শিল্পীদের একজন তিনি। একের পর এক শোতে ডাক পাচ্ছেন।

পারশা মাহজাবীন

গানটি নিয়ে পারশা মাহজাবীন বলেন, ‘তিন বছরের ছোট্ট ক্যারিয়ারে এটাই (চলো ভুলে যাই) সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই গানের জন্য আমি অনেক গুণী মানুষদের আশীর্বাদ পেয়েছি, ভালোবাসা পেয়েছি। প্রায় সব স্তরের মানুষ আমার গান শুনেছেন, গেয়েছেন, কেঁদেছেনও। জনপ্রিয়তার কথা চিন্তা করে গানটি লিখিনি। আর সে জন্যই হয়তো গানটি আমার ক্যারিয়ারে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে।’

পারশা মাহজাবীন

‘চলো ভুলে যাই’ গানের রেকর্ড ভার্সনটি পারশার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হবে। পাশাপাশি নতুন আরও কয়েকটি গান নিয়ে কাজ করছেন তিনি। আপাতত সেমিস্টার ফাইনালের পড়াশোনায় ব্যস্ত রয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী। পরীক্ষা থেকেই গানে নেমে পড়বেন।

পারশা মাহজাবীনের পৈতৃক নিবাস দিনাজপুরে। তবে বাবার চাকরির সূত্রে জন্ম, বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা বগুড়ায়। মায়ের কণ্ঠে গান শিখেছেন। বছর তিনেক বগুড়ার গানের শিক্ষক আবদুল আউয়ালের উচ্চারণ একাডেমিতে (পরে চর্চা সাংস্কৃতিক একাডেমি) গান শিখেছেন।

উচ্চাঙ্গসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীতসহ নানা ধরনের গানের চর্চা করেছেন পারশা। ২০১৯ সালে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে গান কাভার করতে শুরু করেন।

পারশা মাহজাবীন

২০২১ সালে রাফাত মজুমদারের লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন নাটকের দ্বৈত গান ‘দুজন হেরে যাই’-এ কণ্ঠ দেন পারশা। তিন বছরের ক্যারিয়ারে ‘কপি পেস্ট’, ‘পুতুলের সংসার’, ‘যে প্রেম এসেছিল’সহ বেশ কয়েকটি নাটকে গেয়েছেন তিনি। গত বছর বলিউডের গায়ক দার্শান রাভাল ও ঢাকার গায়ক তানভীর ইভানের সঙ্গে মঞ্চে দেখা গেছে পারশাকে।

পারশার প্রিয় শিল্পীদের তালিকায় শ্রেয়া ঘোষাল, রুনা লায়লা, এড শিরানসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন।

পারশা মাহজাবীন

অভিনয়েও আছেন

আগামী ভালোবাসা দিবসে প্রবীর রায় চৌধুরীর একটি নাটকে অভিনয়ের কথাবার্তা চলছে। এর বাইরে একই নির্মাতা বান্টির বিয়ে নামে আরেকটি নাটকে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি। এতে জোভান ও কেয়া পায়েলের সঙ্গে থাকছেন পারশা।
নাটকের বাইরে ওয়েব সিনেমাতেও অভিষেকের সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। একটি ওয়েব সিনেমায় অভিনয়ের কথাবার্তা চলছে বলে জানালেন তিনি। ব্যাটে–বলে মিলে গেলে ওয়েব সিনেমায়ও পাওয়া যাবে তাঁকে।

লিও দ্য ডাইনোসরের সঙ্গে পারশা মাহজাবীন

অভিনয় নিয়ে পারশা বলেন, ‘নাটকের গল্প, পরিচালক, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও সহশিল্পীর কথা মাথায় রেখেই অভিনয়ে এগোচ্ছি।’

এ বছর ভালোবাসা দিবসে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রবীর রায় চৌধুরীর নাটক লাভ লাইন দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক ঘটেছে তাঁর। এতে জোভান ও নীহার সঙ্গে মূল চরিত্রে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। গান ও অভিনয়ের মধ্যে গানটাকেই বেশি প্রাধান্য দিতে চান তিনি। তবে অভিনয়টাও চালিয়ে যেতে চান।

গান ও অভিনয়ের পাশাপাশি আঁকাআঁকিতেও পারদর্শী পারশা।