টেলর সুইফট। ছবি: এএফপি
টেলর সুইফট। ছবি: এএফপি

সুইফটময় এক বছর

প্রায় দুই দশক ধরে গাইছেন তিনি। জনপ্রিয়তা, স্বীকৃতি—কী পাননি। তবু চলতি বছর যেন আগের সব অর্জন ছাপিয়ে গেলেন টেলর সুইফট। পেশায় তিনি সংগীতশিল্পী বটে, কিন্তু ২০২৩ সালে তাঁর যা পারফরম্যান্স, তাতে টাইম সাময়িকীর চোখে সব মাধ্যমের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব তিনি।
টাইম সাময়িকীর ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হয়েছেন সুইফট। ছবি : টাইম

বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব
‘এতটা গর্ব আর আনন্দ আগে কখনোই অনুভব করিনি। মনে হচ্ছে, সৃজনশীলতার দিকে থেকে পূর্ণতা পেয়েছি, আগে নিজেকে এতটা মুক্তও মনে হয়নি।’ টাইম সাময়িকীর ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ বা বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি পেয়ে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানান টেলর সুইফট। বেশির ভাগ সময় এই সাময়িকীর স্বীকৃতি পান বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। সুইফটের মতো গীতিকার ও সংগীতশিল্পীর এই স্বীকৃতি তাই ব্যতিক্রমই বলতে হবে। তবে চলতি বছর সুইফটের কনসার্ট নিয়ে যেভাবে মাতামাতি হয়েছে, সেটাকে অনেক সমালোচক তরুণ বয়সের ম্যাডোনার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

টেলর সুইফট। এএফপি

সুইফটের গানের সাংস্কৃতিক প্রভাব তো বটেই, আছে বিরাট অর্থনৈতিক প্রভাবও।
টাইম বলছে, বিনোদনকর্মী হিসেবে সুইফটের অবদানের জন্যই তাঁকে বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বের খেতাব দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়েছে। সাময়িকীটির প্রধান সম্পাদক স্যাক জ্যাকবস লিখিত বিবৃতিতে সুইফট সম্পর্কে বলেছেন, ‘টেলর সুইফট সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে পেয়েছেন, পেরেছেন আলোর উৎস হতে...সুইফট এক বিরল ব্যক্তিত্ব, যিনি একই সঙ্গে নিজের গল্পের লেখক ও নায়ক।’ একই সঙ্গে বলা হয়েছে, এখন এই গ্রহের কেউ সুইফটের মতো করে এত মানুষকে নাড়িয়ে দিতে পারেন না।

দ্য ইরাস ট্যুর–জাদু
চলতি বছরের ১৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা থেকে নিজের ষষ্ঠ কনসার্ট ট্যুর শুরু করেছিলেন। এর মধ্যেই ইরাস ট্যুর একটার পর একটা রেকর্ড গড়ে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। ট্যুরটি শেষ হবে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর, কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে। তার অনেক আগেই এটি কোনো নারী শিল্পীর সবচেয়ে বেশি আয় করা কনসার্ট ট্যুরে পরিণত হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, ট্যুর থেকে ২ বিলিয়ন ডলার আয় হতে পারে। এই ট্যুর থেকে চলতি বছর ৯০০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে বলে জানিয়েছে বিলবোর্ড, প্রতি শো থেকে এসেছে ১৪ মিলিয়ন ডলার। এই কনসার্ট ট্যুরের চাহিদা এত বেশি ছিল যে ওয়েবসাইটও ক্র্যাশ করেছিল। সুইফট বাজিমাত করেছেন এই কনসার্ট থেকে নির্মিত সিনেমা ‘টেলর সুইফট: দ্য ইরাস ট্যুর’ দিয়েও। গত ১৩ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি বক্স অফিসে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে।  

টেলর সুইফট। রয়টার্স

কোথায় নেই সুইফট
চলতি বছর স্পটিফাইয়ে সবচেয়ে বেশি স্ট্রিমিং হওয়া শিল্পী টেলর সুইফট। ২০২৩ সালে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সুইফট একাই পকেটে পুরেছেন ১০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে সুইফটের গান স্ট্রিমিং হয়েছে ২৬ বিলিয়নের বেশিবার, যা থেকে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত গায়িকার আয় ৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি। আগের মাসগুলোতে স্ট্রিমিংয়ের প্রবণতা থেকে মনে করা হচ্ছে, চলতি ডিসেম্বর মাসেই তাঁর আয় ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। স্পটিফাই সুইফটকে ‘টপ আর্টিস্ট’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া ফোর্বস সাময়িকী সুইফটকে বিশ্বের পঞ্চম প্রভাবশালী নারী হিসেবে অভিহিত করেছে। এ ছাড়া চলতি বছর এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে (ভিএমএএস) আসরের সর্বোচ্চ ৯টি পুরস্কার পেয়েছিলেন ৩৩ বছর বয়সী গায়িকা।

এবং প্রেম
পুরস্কার, স্বীকৃতির সঙ্গে চলতি বছর নিজের প্রেমিককেও খুঁজে পেয়েছেন সুইফট। মার্কিন খেলোয়াড় ট্রাভিস কেলসির সঙ্গে প্রেম করছেন তিনি। টাইম সাময়িকীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও ৩৪ বছর বয়সী এনএফএল তারকার সঙ্গে প্রেমের কথা স্বীকার করেছেন সুইফট। জানান, সম্পর্কে জড়ানোর আগে তাঁরা একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছেন; এরপরই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টাইম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারেই প্রথমবার প্রকাশ্যে প্রেমিককে নিয়ে কথা বললেন গায়িকা।

টেলর সুইফট। রয়টার্স

গিটার হাতের সেই মেয়েটি
১৯৮৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় জন্ম টেলর সুইফটের। কিশোরী বয়সে গিটার বাজিয়ে গান গাইতেন তিনি, বাবার চাকরিসূত্রে পরে পেনসিলভানিয়া থেকে চলে আসেন কান্ট্রি মিউজিকের রাজধানী বলে খ্যাত ন্যাশভিলে, শিল্পী হয়ে ওঠার পথ খুলে যান সুইফটের সামনে। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘টেলর সুইফট’। জন্মসাল অনুসারে, সুইফট নিজের পঞ্চম অ্যালবামের নাম রাখেন ‘১৯৮৯’।

২০২৩-এর অর্জন
*টেলর সুইফটের কনসার্ট থেকে নির্মিত ‘দ্য ইরাস ট্যুর’ এখন ব্যবসার দিক থেকে সর্বকালের সেরা কনসার্ট সিনেমা। বক্স অফিসে ২৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে সিনেমাটি।
*সুইফটই প্রথম জীবিত শিল্পী, যাঁর পরপর পাঁচটি অ্যালবাম যুক্তরাষ্ট্রের টপ চার্টের সেরা ১০-এ ছিল।
*নারী শিল্পীর মধ্যে তাঁরই সবচেয়ে বেশি অ্যালবাম টপ চার্টের শীর্ষে আছে (১৩টি)। চলতি বছর তিনি বারবারা স্ট্রাইস্যান্ডের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন।
* স্যার পল ম্যাককার্টনি ও লায়নেল রিচিকে পেছন ফেলে গীতিকার হিসেবে সর্বোচ্চ সাতবার গ্র্যামি মনোনয়ন পেয়েছেন।
* ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে তাঁর আট দিনের শোর সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। আগে রেকর্ডটি ছিল পপ ব্যান্ড টেক দ্যাট-এর।
*মিউজিক স্ট্রিমিং সাইট স্পটিফাই ও অ্যাপল মিউজিক সুইফটকে সবচেয়ে বেশি স্ট্রিমিং হওয়া নারী শিল্পী হিসেবে ঘোষণা করেছে।
*সুইফটের চলমান ইরাস ট্যুর নারী শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে আয় করা কনসার্ট ট্যুর। আগেই এই তালিকার শীর্ষে ছিল বিয়ন্সের রেনেসাঁ ট্যুর।
সূত্র: বিবিসি