ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোটের গান করছে ঢাকার কল্যাণপুরের কমল মিডিয়া। মাত্র ২০ মিনিটে গান তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী মাসুম রানা বলছেন, প্রার্থী ও প্রতীকের নাম দিলে সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের মধ্যেই ভোটের গান করছেন তাঁরা।
আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন উপলক্ষে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই ভোটের প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। প্রচারের ডামাডোলে শহরের অলিগলি থেকে গ্রাম-মহল্লায় দিনভর বাজছে ভোটের গান। নির্বাচনী ক্যাম্প ছাপিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও নির্বাচনী গান ছড়িয়ে পড়েছে।
যুগ যুগ ধরেই ভোটারদের মন গলাতে প্রচারে বাহারি কথার প্যারোডি গানের চল দেখা গেছে। ঢাকার মগবাজার, বিজয়নগর এলাকার বেশ কয়েকটি স্টুডিওতে বেশির ভাগ ভোটের গান রেকর্ড করা হয়। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের গান রেকর্ডের জন্য মগবাজারে ভিড় করতেন প্রার্থীরা। ঢাকার বাইরে থেকেও প্রার্থীরা এসে গান নিয়ে যেতেন।
তবে এবার মগবাজার, বিজয়নগরের বাইরে; এমনকি মফস্সলেও ভোটের গান রেকর্ডের ধুম পড়েছে। ভোটের গানে পরিচিত শিল্পীদের পাওয়া যায় না, মূলত মৌসুমি শিল্পীরাই জনপ্রিয় গানের সুর নকল করে এসব গানে কণ্ঠ দেন।
ঢাকার মগবাজার, বিজয়নগর এলাকার বেশ কয়েকটি স্টুডিওতে বেশির ভাগ ভোটের গান রেকর্ড করা হয়। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের গান রেকর্ডের জন্য মগবাজারে ভিড় করতেন প্রার্থীরা। ঢাকার বাইরে থেকেও প্রার্থীরা এসে গান নিয়ে যেতেন
যেকোনো ট্র্যাকের ওপরে গান লিখতে লাগবে ১৫ মিনিট, গাইতে লাগবে ১০ মিনিট। ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে আমরা ভোটের গান করছি।আসমান আলী, হ্যাঁ স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী
কুষ্টিয়ার কল্যাণপুরের ‘হ্যাঁ স্টুডিও’–তে এবার সাতটির মতো গান তৈরি হয়েছে। স্টুডিওটির স্বত্বাধিকারী আসমান আলী বলছেন, তিনিও ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই গান করে ফেলতে পারেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘যেকোনো ট্র্যাকের ওপরে গান লিখতে লাগবে ১৫ মিনিট, গাইতে লাগবে ১০ মিনিট। ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে আমরা ভোটের গান করছি। ’
এবার ভোটের গানের বাজারে মমতাজ, সুবীর নন্দী, আইয়ুব বাচ্চু, বেবী নাজনীনের মতো জনপ্রিয় শিল্পীদের গাওয়া গানের চাহিদা তুঙ্গে। ঘুরেফিরে ‘খাইরুন লো’, ‘আম্মাজান’, ‘মরার কোকিলে’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গানের সুরই ব্যবহৃত হচ্ছে।
আসমান আলী জানালেন, ‘খায়রুন সুন্দরী’ সিনেমায় মমতাজ ও পলাশের গাওয়া জনপ্রিয় গান ‘খায়রুন লো’সহ বেশ কয়েকটি গানের সুরের ওপর সাতটির মতো ভোটের গান করেছেন তিনি। এর মধ্যে তিনটি গানে তিনি নিজে কণ্ঠ দিয়েছেন।
কীভাবে ‘নকল সুরে’ গান করা হয়—তিনি বলছিলেন, ‘কোন গানের সুরের ওপর গান হবে, সেটা ক্লায়েন্টরাই (প্রার্থী) ঠিক করে দেন। কেউ গানের কথাও লিখে দেন। আবার কখনো শুধু প্রার্থীর নাম, প্রতীক ও সংসদের নাম দিলে আমরা গান লিখে নিই। জনপ্রিয় গানের সুর ঠিক রেখে শুধু কথা বদলে ভোটের গান করা হয়। ’
সুর নকল করেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আসমান আলী বলছেন, ‘ওই পেমেন্ট আমরা পাই না, ফলে ওই সময়ও দিতে পারি না। মৌলিক সুরে গান গাইতে এক দিন সময় লাগবে। সকাল থেকে বসলে সারা দিন লাগবে। কোনো গান সুর করে তিন–চার ঘণ্টার মতো প্র্যাকটিস করতে হয়; পরে সেটা রেকর্ড করতে পুরো দিনই লাগবে।’
২০১০ সাল থেকে গান রেকর্ডিং করেন আসমান আলী। তাঁর ভাষ্যে, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের গানের বাজার মন্দা। কারণ, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী কম। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বেশি থাকায় সেই সময়ই বেশি গানের ফরমাশ পান।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের গানের বাজার মন্দা। কারণ, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী কম। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বেশি থাকায় সেই সময়ই বেশি গানের ফরমাশ পানআসমান আলী, হ্যাঁ স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী
সুরকারেরা বলছেন, ভোটের প্যারোডি গানের নামে কোনো জনপ্রিয় মৌলিক গানের সুর বিকৃতি করা সমীচীন নয়। বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস বলছে, কোনো গানের সুর নকল করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুর বিকৃতি ও কথা পরিবর্তন করে মনমতো গান প্রচার করলে তা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। কোনো গানের সুরকার কপিরাইট অফিসে অভিযোগ জানালে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর জন্য সর্বোচ্চ ৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।