জমজমাট আয়োজনে শেষ হলো প্রথম সিজন

হাজং ও বাংলার ফিউশন ‘নাসেক নাসেক’ দিয়ে ছয় মাস আগে বাংলাদেশে শুরু হয় ‘কোক স্টুডিও বাংলা’। প্রথম গানে বাজিমাত হয় এই আয়োজনের। বাংলাদেশের পেশাদার সংগীতে সেদিন যুক্ত হন অনিমেষ রায় নামের নতুন এক শিল্পী। গানটি প্রকাশের পর থেকে দেশের সংগীতপ্রেমীরাও অভিবাদন জানান এ উদ্যোগকে। এদিকে প্রথম গানটি গতকাল পর্যন্ত ইউটিউবে দেড় কোটি ভিউ অতিক্রম করেছে। এই আয়োজনে প্রথম আসরের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়েছে গণসংগীত ‘হেই সামালো’ গান দিয়ে।

প্রথম মৌসুমের শেষ গান ‘হেই সামালো’ প্রসঙ্গে কোক স্টুডিও বাংলার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘অধিকার আদায়ে আমরা কখনো এক ইঞ্চিও ছাড় দিইনি। যতবার বাধা এসেছে, ততবার আমরা প্রতিবাদে সরব হয়েছি। সেই প্রতিবাদের অন্যতম মাধ্যম ছিল আমাদের গণসংগীত। মানুষের দুর্বার জেগে ওঠার, নিজের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার এক জীবন্ত দলিল এই গান। ১৯৪৬-৪৮–এ এমন বঞ্চিত মানুষদের তেভাগা আন্দোলন নিয়ে লেখা সলিল চৌধুরীর এই গান।’ এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সামিনা চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার, অর্ণব, কনা, ঋতুরাজ, সুনিধি নায়েক, অনিমেষ রায়, রুবাইয়াত, মাশাসহ কয়েকজন শিল্পী। গানটি শেয়ার করে কোক স্টুডিও বাংলা বলে, ‘বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসাই আমাদের প্রথম মৌসুমের শেষ পরিবেশনা। দেখা হবে শিগগিরই কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় মৌসুমে।’

হাজং ও বাংলার ফিউশন ‘নাসেক নাসেক’ দিয়ে ছয় মাস আগে বাংলাদেশে শুরু হয় ‘কোক স্টুডিও বাংলা’

কোক স্টুডিও বাংলা কর্তৃপক্ষ তাদের এই আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়েছে, ‘আমরা শিকড়ের গান নিয়ে কাজ করেছি। গানগুলোকে এমনভাবে সমসাময়িক করার চেষ্টা করেছি, যাতে এখনকার তরুণদের সেগুলো ভালো লাগে। কারণ, তাঁরা স্পর্টিফাই, কোক স্টুডিও পাকিস্তান ও ভারতের গানগুলো শুনে ও দেখে ফেলেছেন। এই তরুণেরা আমাদের কাছে সেই মানের মিউজিক প্রত্যাশা করেন। আমাদের চেষ্টা ছিল, তাঁরা যেন আমাদের এ গানগুলো শুনে আনন্দ পান। বিদেশি কাউকে কোক স্টুডিও বাংলার একটা গান শুনিয়ে যেন গর্ব করে বলতে পারেন, “এটা আমাদের গান।” আমরা সেই চেষ্টার সার্থক রূপায়ণ করতে পেরেছি।’

শিল্পীরা গান করছেন, যন্ত্রশিল্পীরা বাজাচ্ছেন স্টুডিওতে—এমন দৃশ্য বাংলাদেশের অনুষ্ঠানে দেখার সুযোগ শ্রোতাদের ছিল না। শ্রোতারা দেখবেন বলে কোক স্টুডিও সাজিয়ে-গুছিয়ে ওই ঘরকে করে তোলা হয় বর্ণিল। নানা ধরনের বাদ্য আর সুরযন্ত্রে ঠাসা সেই গানঘর। যেকোনো গান এ স্টুডিওতে বসে গাইলে সেটি পেয়ে যায় অন্য রকম এক মাত্রা। এ স্টুডিওর বদৌলতে নিখুঁত শব্দ-সুর, দুর্দান্ত গায়কির সঙ্গে শিল্পীর অভিব্যক্তি পুরোনো প্রিয় গানগুলোকে মানুষের কাছে করে তুলছিল আরও প্রিয়। বাংলাদেশে যাত্রার শুরুতে কোক স্টুডিওর ‘একলা চলো’ শিরোনামের গানে শোনা যায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সুরে গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে’ গানের খানিকটা।

কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মমতাজ

কোক স্টুডিও বাংলার গানগুলোর বাছাই-বিন্যাস ও প্রযোজনা করেছেন শিল্পী সায়ান চৌধুরী অর্ণব। কেমন ছিল আয়োজন, সে সম্পর্কে বলেন, ‘শেষ গানটির জন্য আলাদা কিছু করার চিন্তা থেকেই বিভিন্ন ঘরানার শিল্পীদের একত্র করে গণসংগীত নিয়ে কাজ করেছি। সবাই মিলে গানটি করা ছিল এক দারুণ অভিজ্ঞতা। এই গান বাংলাদেশিদের অদম্য চেতনা তুলে ধরেছে। আশা করি, গানটি গাওয়ার সময় যে আবেগ আমরা অনুভব করেছি, তা আমাদের দর্শক-শ্রোতাদেরও স্পর্শ করবে।’

অর্ণব আরও বলেন, ‘আমরা খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। বাংলাদেশিরা এটা নিয়ে গর্বিত। এ উদ্যোগ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙা করেছে। আমরা নতুন-পুরোনো শিল্পীদের নতুনভাবে খুঁজে পেয়েছি। আমরা এমনভাবে ডিজাইন করেছি, বাংলাদেশের আওয়াজটা বিশ্বের কাছে পৌঁছে গেছে।’

কোক স্টুডিও বাংলার ৫০০ ভক্তের জন্য একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজনও করে কোকাকোলা বাংলাদেশ। আয়োজনে অংশ নেওয়া ভক্তদের অনেকে ছয় মাস ধরে প্রথম সিজনের গানগুলো নেচে বা গেয়ে কাভার করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম সিজনের শিল্পীদের স্কেচ ও পেইন্টিং শেয়ার করে তাঁদের প্রতি সম্মান জানানো চিত্রশিল্পীরাও এই আয়োজনে অংশ নেন। শুরু থেকেই যাঁরা এই প্ল্যাটফর্মকে সমর্থন জানিয়ে আসছেন, সেই কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য এই আয়োজন করা হয়। প্রথম মৌসুমে অনিমেষ-পান্থ কানাই ছাড়াও গান করেছেন বাপ্পা মজুমদার, সামিনা চৌধুরী, মমতাজ, মিজান, অর্ণব, বগা তালেব, ঋতুরাজ, কানিজ খন্দকার, জালালি সেট (ব্যান্ড), তাহসান, মধুবন্তী বাগচী, নিগার সুমি, মাশা ইসলাম, নন্দিতাসহ অনেকে।