‘শুরুতে আর্জেন্টিনা দুই গোল দেওয়ার পরও মনে হয়েছিল, কে জিতবে তা শেষ বাঁশি বাজার আগে বলা যাবে না। যদিও আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই ফ্রান্সের ওপর বেশ চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু ফ্রান্সের খেলার যে স্ট্র্যাটেজি, যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছুই হতে পারে, এটা আমার বিশ্বাস ছিল। তবে খুব করে চেয়েছি, মেসি যেন এবার রাজার মতো বিদায় নেয়। মন খুব চাচ্ছিল, বিশ্বকাপ মেসির হাতেই উঠুক। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে ইনশা আল্লাহ।’ কথাগুলো পপ গানের জনপ্রিয় শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের।
ঢাকার অদূরে শ্রীনগরে সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের পৈতৃক ভিটা। বিক্রমপুরের সন্তান বলেই নিজেকে পরিচয় দেন। যতই বয়স বাড়ছে, নাড়ির টান প্রবল হচ্ছে তাঁর। শিল্পী জানান, গ্রাম থেকে কখনোই দূরে সরে থাকেননি তিনি। সব সময়ই গ্রামে সময় দিয়েছেন। তাঁর পাড়ায় ১২০ জন মানুষের বাস। এদের নিয়েই সুখে-দুঃখে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান গান গেয়ে সারা দেশের মানুষের ভালোবাসা পাওয়া ফেরদৌস ওয়াহিদ। বিশ্বকাপ ফুটবলের এবারের ফাইনাল খেলাও গ্রামের বাড়িতে বসেই উপভোগ করেছেন তিনি। আত্মীয়স্বজন সবাই মিলে খেলা দেখেছেন। জানালেন, ফাইনালে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স দুই পক্ষই এত ভালো খেলছে, শেষ পর্যন্ত ফলাফল টাইব্রেকারে গিয়ে ঠেকছে। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা বেশ ভালো করছে। ভালো করেছে বলেই বিশ্বকাপ তাদের হাতেই উঠেছে।
কথায় কথায় জানা গেল, ফুটবলে ফেরদৌস ওয়াহিদের প্রিয় দলের তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল, জার্মানি ও ফ্রান্স। এবার মরক্কোর খেলাও তাঁর মন কেড়েছে। তাই ফুটবলে এই দলটি নতুন করে প্রিয়র তালিকায় জায়গা পেয়েছে। প্রিয় দল যেটাই হোক না কেন, মেসিই তার প্রিয় খেলোয়াড়—জানালেন ফেরদৌস ওয়াহিদ। আধুনিক এই জীবনে মানবতার অনন্য প্রতীক হিসেবেও মেসি তাঁর কাছে সেরা। বললেন, ‘ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র যেটাই ধরি, জনপ্রিয়তায় বিশ্বে এক নম্বরে মেসি। বিশ্বে আট শ কোটি মানুষের মধ্যে আমার মনে হয় চার শ কোটি মানুষ আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের খেলা দেখেছে। আর মেসি সম্পর্কে যতটুকু শুনেছি এবং লেখাপড়া করে জেনেছি, ইউনিসেফের হয়ে বিশ্বের কয়েক হাজার স্কুলের সঙ্গে তার নানাভাবে সম্পৃক্ততা আছে। ইউনিসেফে ডোনেশনও করে থাকে মেসি। যেটা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে, যা আমরাই কোনো দিন পারি তো নাই, কাউকে দেখিনি করতে, সেটা হলো—মা, সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মাঠে যা করেছে, আগেও করেছে, এটা অভাবনীয় ব্যাপার। কোনো সাধারণ মানুষ এভাবে পারে না, ফুটবলার তো দূরের কথা। মেসির এসব কর্মকাণ্ড দেখে আমার মনে হয়, পৃথিবীতে ব্যতিক্রম মানুষেরা যে হঠাৎ হঠাৎ আসে, মেসি তাদেরই একজন। মানবতার অনন্য প্রতীক। মেসি তেমন একজনই তো, তাকে আমার ভালো না লেগে কোনো উপায় নেই।’
মেসির হাতে এবারের বিশ্বকাপ জয়ের দৃশ্য যেমন দেখেছেন তেমনি ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার হাতে বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্তের সাক্ষীও ফেরদৌস ওয়াহিদ।
বললেন, ‘তবে নিঃসন্দেহে মেসির জন্য আমার মন বেশি টানে, কারণ খেলার পাশাপাশি তার মানবিক গুণাবলি। এটার জন্যই তাকে খুব ভালোবাসি, শ্রদ্ধাও করি। এত বড় অবস্থানে থাকার পরও মেসির মতো একটা মানুষ পরিবার, সংসার, সন্তান, মা ও সমাজের জন্য যেভাবে করে, সাদামাটা জীবন যাপন করে, মেসিকে সৃষ্টিকর্তা টাকা যেমন দিয়েছে, নাম, যশ, খ্যাতিতেও এক নম্বর করেছে। কার সঙ্গে মেলাব তাকে। যেমন মেসির খেলা, তেমন তার মানবিকতা। আমার ৭০ বছরের জীবনে এমন কম্বিনেশনের মানুষ দেখিনি। ম্যারাডোনা গ্রেট প্লেয়ার ঠিকই, কিন্তু তার নামে ড্রাগস আসক্তি নিয়ে কথা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমার চোখে মেসি এগিয়ে আছে, মেসিকে কমপ্লিট প্যাকেজ মনে হয়। জীবনের সমস্ত ধর্ম যেসব কল্যাণের কথা বলে, সেসব কল্যাণীয় গুণাবলি আমি মেসির মধ্যে দেখতে পাই।’