২০২২ সালের সবচেয়ে আলোচিত ও শ্রুতিমধুর সিনেমার গানের তালিকা করতে বলা হলে কোন গানগুলোকে রাখবেন? নিশ্চয় ‘হাওয়া’র ‘সাদা সাদা কালা কালা’ থাকবে। একই ছবির ‘আটটা বাজে দেরি করিস না’ও শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘পরাণ’ ছবির ‘ধীরে ধীরে’ও গানপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এর বাইরে গুণিন ছবির ‘ঘোমটা তুলে বদন খুলে’, ‘দুই দিনের দুনিয়া’ ছবির ‘ট্যাকা পাখি’, ‘জীবন রোড’ ও ‘পাপ পুণ্য’ ছবির ‘তোর সাথে নামলাম রে পথে’, ‘চোখ গেল পাখি’ গানগুলোও মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। এই সব কটি গানের মধ্যে একটা সাধারণ যোগসূত্র আছে। সেই যোগসূত্র হলো ইমন চৌধুরী। কোনোটিতে নিজে কণ্ঠ দিয়েছেন, কোনোটি আবার তাঁর সংগীত পরিচালনায় অন্য শিল্পী গেয়েছেন। প্রতিটি গানে ইমন চৌধুরীর বৈচিত্র্যময় সংগীত ভাবনার প্রতিফলন আছে।
আলোচিত ৫সাদা সাদা কালা কালা, ‘হাওয়া’ধীরে ধীরে, ‘পরাণ’ঘোমটা খুলে বদন তুলে, ‘গুণিন’টেকা পাখি, ‘দুই দিনের দুনিয়া’তোর সাথে নামলাম রে পথে, ‘পাপ পুণ্য’
অথচ চলচ্চিত্রে ইমন চৌধুরীর অভিষেক খুব বেশি দিনের না। তিন বছর আগে ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া মাসুদ পথিকের ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’ তাঁর সংগীত পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের দুটি গান ‘মায়ারে’ ও ‘দুই কোলে’র সুরকার ও সংগীত পরিচালক তিনি। একই বছর মুক্তি পায় তাঁর সংগীত পরিচালনায় আরেকটি ছবি ‘কাঠবিড়ালী’। প্রথম চলচ্চিত্র ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’ দিয়েই শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ইমন চৌধুরী।
গত বছর মুক্তি পাওয়া সরকারি অনুদানের ছবি ‘রাতজাগা ফুল’–এর সংগীত পরিচালনা করে আলোচিত হন ইমন। বছরের শুরুতে মুক্তি পাওয়া ‘মুখোশ’ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনায়ও ছিলেন তিনি। এখন করছেন আবু রায়হান জুয়েলের ‘অ্যাডভেঞ্চার সুন্দরবন’ ও গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’ চলচ্চিত্রের সংগীত। ইমন বলেন, ‘কাজলরেখা’র ৩৮–৪০টি গান থাকছে। এই ছবি গিয়াস উদ্দিন সেলিম ভাইয়ের অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন। এই স্বপ্নের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছি, এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। আমার পরম সৌভাগ্য, বাংলার লোকজ সুর ও সংগীত নিয়ে কাজ করতে পারছি।’
চিরকুটের মাধ্যমে প্রথম ইমন চৌধুরীকে চিনেছে মানুষ। ব্যান্ডটির স্টেজ শোতে তাঁর গিটার বাদনে বুঁদ হয়ে থাকেন শ্রোতা। ব্যান্ডে কাজ করে কীভাবে চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনায় আগ্রহী হলেন জানতে চাইলে ইমন বললেন, ‘আসলে স্রষ্টা আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। ব্যান্ডে থেকেও চলচ্চিত্র আর বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ করে যাচ্ছি।’
ইমন চৌধুরীর বাবা মতিউর রহমান চৌধুরী একজন সংগীতশিল্পী। নরসিংদীর নজরুল একাডেমির তিনি প্রিন্সিপাল। পারিবারিক পটভূমিটা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সংগীত পরিবারের সন্তান, ছোটবেলা থেকেই তাই সব ধরনের গান শোনা হতো। বাবা থিয়েটারও করতেন। নাটকের সংগীত পরিচালক আর নির্দেশকও ছিলেন। হয়তো ওই ধরনের একটা পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে নানা ধরনের সংগীতে পারঙ্গমতা তৈরি হয়েছে। পেশাদার সংগীতজীবন শুরুর পর সব সময় চাইতাম, চলচ্চিত্রের মিউজিক করব। হয়তোবা ওটা থেকেও শুরু। তা ছাড়া আমি যেহেতু ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের স্টুডেন্ট ছিলাম, এটাও অবচেতন মনে কাজ করেছে।’
বাবার একটি কথাকে মন্ত্রের মতো মানেন ইমন, ‘সব সময় একটা কথা বলে আব্বু, “গুণকেই ঘুণে ধরে। গুণে যেন ঘুণ না ধরে সেই চেষ্টা করে যাবা।” তার উপদেশ নিয়ে চলছি।’ চলচ্চিত্রের গানে সফলতা পাওয়া ইমন তাই নিজেকে প্রতিনিয়ত শেখার দিকে মনোযোগী রাখছেন। ইমনের এই পথচলায় স্ত্রী ফারজানা নীপার ত্যাগ ও সমর্থন অনেক। তিনি বলেন, ‘ঘুমের সময় বাদ দিয়ে সব সময় স্টুডিওতে থাকি। স্ত্রীর সাপোর্ট না পেলে এটা কঠিন হয়ে যেত। তারও সব সময়ের চাওয়া, আমি সংগীতে ভালো কিছু করি। সে আমার অনেক ভরসার জায়গা। অনেক কষ্ট স্বীকার করছে, স্যাক্রিফাইস অনেক বেশি।’