‘এন্ড্রু কিশোর! একটি বিস্ময়কর দমের নাম, যে দম থেকে সুর বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আকাশে-বাতাসে, নদীতে-সাগরে এবং যেখানে-যেখানে, তাদের সবাইকেই জড়ায় সুরের আরামদায়ক উষ্ণতায়।’ দেশের জনপ্রিয় গায়ক এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে কথাগুলো বললেন আরেক শিল্পী কনকচাঁপা। আজ ৪ নভেম্বর শনিবার দেশের সিনেমার গুণী এই শিল্পীর জন্মদিন। তাই তাঁকে ঘিরে এসব কথা বলেন কনকচাঁপা।
সিনেমার গানে এন্ড্রু কিশোরের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমার সেই গানটি ছিল ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’। বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ সিনেমার ‘ধুম ধাড়াক্কা’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি। তবে ১৯৭৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রতিজ্ঞা’ সিনেমার ‘এক চোর যায় চলে’ গানটির জন্য তিনি জনপ্রিয়তা পান। কনকচাঁপাও এই শিল্পীর সঙ্গে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সহশিল্পীর এন্ড্রু কিশোরের জন্মদিনে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি সহশিল্পীকে নিয়ে অনেক কথাবার্তা লেখেন।
ফেসবুকে কনকচাঁপা লেখেন, ‘তার কণ্ঠে কী আছে আমি কী করে বলি! গান শুনে খালি মনে হয়, কোন দিক থেকে তরল সোনা গলে গলে পড়ছে। তাতে প্রেম, অভিমান, কান্না, কটাক্ষ, চিৎকার, রাগ—সব অলংকারের কাজ করছে। রেকর্ডিংয়ের মেশিনের কাঁটা জানে, এন্ড্রু কিশোরের ভার ও ধার কী। ভয়ংকর! যেন আস্ত নায়াগ্রা জলপ্রপাত একই সঙ্গে ভয়ংকর ও সুন্দর!’
এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে কবে, কখন, কীভাবে কনকচাঁপার সঙ্গে দেখা, তা-ও বলেন। এই শিল্পী বলেন, ‘কিশোরদার সঙ্গে প্রথম দেখা প্লে-ব্যাকেই। এ ছাড়া আর তাঁকে দেখার উপায়ই কী! সুরকার মইনুল ইসলাম খানের সুর ও সংগীতায়োজনে “নাফরমান” সিনেমার মহরতের গান শ্রুতি স্টুডিওতে ১৯৮৬ সালের জানুয়ারিতে। আমি নিতান্তই ছোট মানুষ। ভয় পাচ্ছিলাম, এত বড় শিল্পী! গাইতে গিয়ে দেখি, উনি যেন আমার বড় ভাই, পয়লা হাসিতেই বাজিমাত।’
এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে অনেক মঞ্চে গান করেছেন কনকচাঁপা। সেই স্মৃতি মনে করে কনকচাঁপা বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে কত গান গাইলাম, কত মঞ্চ কাঁপল (আমার গানে মঞ্চ কাঁপে না, কিন্তু কিশোরদার গানে আমি, আমরা ও মঞ্চ নিয়মিতই কাঁপে), কত বিদেশে গেলাম! আপন বড় ভাইয়ের মতো হয়েও তিনি এখনো আমার কাছে বিস্ময়। আপাতদৃষ্টিতে রাগী রাগী মানুষটা আসলে খুবই ফুর্তিবাজ। সবার বিপদে-আপদে সময়মতো দাঁড়িয়ে যান সবার আগে। পারি না বলে কোনো কথা তাঁর অভিধানে নেই।’
দীর্ঘ সংগীতজীবনে একসঙ্গে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এন্ড্রু কিশোর তাঁকে চেনেন, কনকচাঁপা এটা ভাবতেই পছন্দ করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে কনকচাঁপা বলেন, ‘তিনি আমাকে চেনেন, এ ভাবনাতেই আমি আপ্লুত হই এখনো, কিশোরদা হয়তো তা জানেনই না। আমি ধন্য, তিনি আমাকে অত্যধিক স্নেহ করেন। এ জীবনে কতই না পেলাম! আজ এ বিস্ময়কর কণ্ঠরাজের জন্মদিন। শুভকামনা এ সম্পদের জন্য। দীর্ঘদিন সুস্থ হয়ে আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকুন বাংলাদেশের সুরের রাজা!’