এক যুগ আগে ৩৩ বছর বয়সী এক তরুণীর সঙ্গে নেচে উঠেছিল পৃথিবীর মানুষ। কলাম্বিয়ান ওই তরুণীর গাওয়া ‘ওয়াক্কা ওয়াক্কা’ গানটি বেজে উঠলে এখনো দুলে ওঠে মানুষ। ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের থিম সংয়ের সেই কণ্ঠশিল্পী শাকিরার আজ জন্মদিন। ৪৫-এ পা রাখল বিশ্ব–নাচানো সেই মেয়েটি।
ছোটবেলা থেকেই গান লিখতেন শাকিরা। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘ম্যাজিয়া’। সেটার ৯ গানের ৫টিই ছিল তাঁর লেখা। ছোটবেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক ভাইকে হারিয়েছিলেন তিনি। ঘটনাটি দাগ কেটেছিল ছোট্ট শাকিরার মনে। সেই ঘটনা নিয়ে ‘ইয়োর ডার্ক গ্লাসেস’ শিরোনামে একটি গান লিখে বাবাকে শোনান সে। এক সাক্ষাৎকারে বাবা উইলিয়াম মেবারাক চ্যাডিড বলেছিলেন, প্রয়াত ছেলের স্মৃতি জড়ানো একটি চশমা ছিল তাঁর কাছে। সেটা নিয়েই গান লিখেছিল শাকিরা। সেটাই তার লেখা প্রথম গান। ‘ম্যাজিয়া’ অ্যালবামে প্রকাশিত হয় গানটি।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে রেকর্ড লেবেল সনি মিউজিক কলাম্বিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন শাকিরা। সেখান থেকে ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় তাঁর তৃতীয় অ্যালবাম ‘পাইস ডেসকালজোস’। শুরু হয় তাঁর পপ ক্যারিয়ার। এই লং প্লের সাফল্যের পর তাঁকে আর কোথাও থামতে হয়নি। এরপর শুরু হয় তাঁর সংগীতসফর উত্তর থেকে দক্ষিণ আমেরিকায়। তখনকার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রিকি মার্টিনের পাশাপাশি টানা পাঁচ দিন সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন তিনি। ১৮ বছর বয়স থেকে মানবতার জন্য কাজ শুরু করেন শাকিরা। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও পুষ্টির জন্য নিজের দেশের বাড়ি কলাম্বিয়ার বারানকিজায় চালু করেন পাইস ডিসকালসো ফাউন্ডেশন।
২০১০ সালে শাকিরা গেয়েছিলেন ‘ওয়াক্কা ওয়াক্কা’ গানটি। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটি ছিল অন্যতম জনপ্রিয় গান। এ গানের ভিডিওতে যুক্ত হয়েছিলেন পৃথিবীর সেরা সব খেলোয়াড়। সেই সময়ই প্রথমবারের মতো শাকিরার সঙ্গে দেখা হয় স্প্যানিশ ফুটবল তারকা জেরাড পিকের সঙ্গে। পরে তাঁরা প্রেমে পড়েন। ২০১১ সালে ঘর বাঁধেন তাঁরা। মিলান ও শাসা নামের ৯ ও ৭ বছরের দুটি ছেলে আছে তাঁদের। শাকিরা মনে করেন, তাঁর জীবনের সেরা অর্জন এ দুই ছেলে।
২০১৬ সালে ‘জুটোপিয়া’ নামে একটি অ্যানিমেটেড সিনেমায় কণ্ঠাভিনয় শুরু করেন শাকিরা। রোজগারের দিক থেকে ছবিটি সে বছরের চতুর্থ ব্যবসাসফল ছবি নির্বাচিত হয়। ছবির গ্যাজিলি চরিত্রে কণ্ঠাভিনয়ের পাশাপাশি ‘ট্রাই এভরিথিং’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি।
গত ডিসেম্বর মাসে ‘ডান্সিং উইথ মাইসেল্ফ’ নামে একটি নাচের প্রতিযোগিতার বিচারকের আসনে বসার ঘোষণা দেন শাকিরা। ২০১৩ সালে ‘দ্য ভয়েস’ প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক হয়েছিলেন তিনি। অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয় বলে একসময় সেখান থেকে সরে গিয়েছিলেন। গত বছর প্রকাশিত হয় তাঁর শেষ একক ‘ডোন্ট ওয়েট আপ’ গানটি।
শাকিরার জীবন বর্ণাঢ্য। কণ্ঠশিল্পী সাকিরা নেচেছেন মনের আনন্দে, করেছেন অভিনয়। উদ্যোক্তা হিসেবেও তিনি সফল। গত মাসে শাকিরা ঘোষণা দেন, এ বছরই আসছে তাঁর ১২তম স্টুডিও অ্যালবাম।