‘অনিকেত প্রান্তর’ গানটিকে বাংলা রক ব্যান্ডের অন্যতম সেরা সৃষ্টি বললে কি ভুল হবে? এ নামে আর্টসেল ব্যান্ডের শেষ অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালের ১ এপ্রিল। আগামী মাসের ১ তারিখ অ্যালবামটি প্রকাশের ১৬ বছর পূর্ণ হবে। এই দীর্ঘ সময়ে কয়েকটি একক গান ছাড়া দলের নতুন কোনো অ্যালবাম বের হয়নি। এরই মধ্যে ফুরিয়েছে অ্যালবামের যুগ। সংগীতাঙ্গনে তৈরি হয়েছে নানা সংকট ও সম্ভাবনা। এরই মধ্যে নানা চড়াই-উতরাই আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকে আছে আর্টসেল। আবারও রক ব্যান্ডের শ্রোতাদের মাতাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে এই বাংলা রক ব্যান্ড।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আর্টসেলের তিন সদস্যের সঙ্গে আকস্মিক আড্ডার সুযোগ আসে। নিয়মিত অনুশীলন শেষে ভোকাল জর্জ লিংকন ডি কস্টা, ড্রামার সাজু ও ব্যবস্থাপক বাঁধন বর্মণরা বসেন বনানীর একটি ক্যাফেতে। আড্ডায় বেশ চনমনে দেখায় লিংকনকে। দুপুরে বিরিয়ানি খেয়েছিলেন বলে অন্যদের সঙ্গে গরুর দুধের চা খেতে রাজি হলেন না। দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এসেছেন বন্ধু ও দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাজু। এতে যারপরনাই আনন্দিত তিনি। দলের কার্যক্রম প্রসঙ্গে বাঁধন জানান, গত ডিসেম্বরে ১২টি আর নভেম্বরে ৩টি শো করেছেন তাঁরা। সর্বশেষ একক ‘অভয়’ এসেছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে।
কেমন ছিলেন তাঁরা? লিংকনের কণ্ঠে শোনা যায় করোনার ভয়াবহতার স্মৃতিচারণা, ‘শো নাই, হাত খালি! ওই সময় চাকরিজীবীদের বেতন বন্ধ হয়নি। আমাদের আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মনোবল হারাইনি। বামবা, আমাদের শ্রোতারা, বন্ধু ও পরিবার আমার সহায় ছিল।’ এ আক্ষেপ অমূলক নয়। এখনো বিনা মূল্যে গান শুনতে চাই আমরা। প্রাণ নিংড়ে যে গান তুলে আনা হয়, কতকাল একে ফ্রি দেওয়া যায়? পৃথিবীর কোথাও সে রকম হয় না! ব্যান্ড বা শিল্পীর টিকে থাকতে আর্থিক যে সচ্ছলতা দরকার, বাংলাদেশে এখনো সেটা প্রায় অসম্ভব।
দল টিকিয়ে রাখা আর ভক্তদের কাছে দলের স্মৃতির স্মারক পৌঁছে দিতে শিগগিরই ছোট ছোট পণ্য উৎপাদনে যাবে আর্টসেল। ২০১৯ সালে দলের ২০ বছর পূর্তি উৎসবে যে জনস্রোত বয়ে গিয়েছিল, তার ধারাবাহিকতা দেখা যাবে ২০২৪ সালে ২৫ বছর পূর্তির আয়োজনেও। সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই কাজ শুরু করেছে দলটি। ভোকাল ও রিদম গিটারে জর্জ লিংকন ডি কস্টা, লিড গিটারে কাজী ফয়সাল আহমেদ, বেজিস্ট সেজান, অতিথি বেজিস্ট তিতাস বাহাউদ্দিন আর ড্রামসে কাজী সাজ্জাদুল আশেকীন প্রস্তুত।
কদিন আগে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে অর্থহীন ব্যান্ডের সুমন ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার ‘ওরা অ্যালবাম আনবেই’। আর্টসেলের তৃতীয় অ্যালবাম আসেনি। এক শব্দে ‘আসেনি’ বলে শেষ করতে হচ্ছে। কারণ, না আসার পেছনে রয়েছে হাজার হাজার শব্দের গল্প। দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম, বেদনা, ভালোবাসা, পাওয়া আর হারানোর নানা গল্প। সাজু বলেন, ‘অ্যালবাম নিয়ে কোনো কথা বলব না। অ্যালবামের তিনটি একক গান ইতিমধ্যে শ্রোতারা শুনে ফেলেছেন। আসল গানগুলোর জন্য তাঁদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। শ্রোতাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা অসীম। তাঁরাই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। এক “অনিকেত প্রান্তর” এত এত কাভার হয়েছে, সেগুলোই আমাদের টিকিয়ে রেখেছে।’