ঢাকার মগবাজারের নয়াটোলার বাসা থেকে সংগীতজ্ঞ সঞ্জীব দের মরদেহ বেলা ১১টায় নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহ শহরে তাঁর জন্মস্থান আকুয়াতে। বেলা তিনটায় সেখানে পৌঁছায় তাঁর মরদেহবাহী গাড়িটি। এরপর শহরের বাসা থেকে অদূরে অবস্থিত কেওয়াটখালী এলাকার শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। প্রথম আলোকে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন সঞ্জীব দের বড় ছেলে গায়ক ও সেতারশিল্পী নিশিত দে।
সঞ্জীব দেকে ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে সকাল নয়টায় তাঁর মগবাজারের নয়াটোলার বাসার সামনে একটি আনুষ্ঠানিকতা করা হয়। সেখানে তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে যান তাঁর শিক্ষার্থীদের অনেকে। নিশিত জানালেন, বাবার মারা যাওয়ার খবরে শুধু দেশে থাকা শিক্ষার্থীরা নন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা তাঁর শিক্ষার্থীরা ফোন করেছেন। ফেসবুকে তাঁদের বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণামূলক নানা কথা বলেছেন। সবাই তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন।
সঞ্জীব দে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় মৃত্যুবরণ করেন। ছেলে নিশিত দে বলেন, ‘দুপুরের খাবার শেষে বাবা সাধারণত ঘুমান। বিকেলে ঘুম থেকে উঠেই বাবা বলছিলেন, অস্থির লাগছে। একটা সময় তাঁর অস্থিরতা বাড়তে লাগল। প্রেশার মেপে দেখলাম, অনেক হাই। এসব হতে হতে রাত আটটা বেজে যায়। তারপর অ্যাম্বুলেন্স ডাকলাম। নয়টার দিকে বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। যেতে যেতে বাবার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। খারাপ লাগার মাত্রাটা বাড়তে লাগল। হঠাৎ বাবাই বলে উঠলেন, নিশিত, ইটস টু লেট। পৌনে ১০টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে যাই। এরপর চিকিৎসকেরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন, আমাদের বাবা আর নেই।’
নিশিত এ–ও বললেন, ‘বাবা এমনিতে সুস্থ ছিলেন। কোনো ধরনের সমস্যাই ছিল না। সপ্তাহখানেক আগে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কথা বলছিলেন। তবে তা থেকে সেরে ওঠেন বাবা। কিন্তু গতকাল যে কী হলো, তা আমরা বুঝতেই পারিনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল!’
সঞ্জীব দে ১৯৫৬ সালের ১৪ আগস্ট ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি ঢাকায় আসেন। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রায় পাঁচ দশক তিনি সংগীতশিক্ষার কাজটি করে আসছিলেন। দেশের জনপ্রিয় ও গুণী অনেক শিল্পীর সংগীতগুরু ছিলেন সঞ্জীব দে। পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে গানের সঙ্গে জীবনযাপন তাঁর। তাঁর দাদা পেয়ারী মোহন দে বংশীবাদক, বাবা মিথুন দে উচ্চাঙ্গসংগীতের নামকরা গুরু ছিলেন; সেই ধারাবাহিকতায় সঞ্জীব দের সংগীতের পথচলা। সঞ্জীব দে স্ত্রী অদিতি দে, এক ছেলে নিশিত দে, মেয়ে ত্রিপর্ণা দেসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।