শ্রোতারা টমেটো ছুড়তে পারেন!

অন্নপূর্ণা দেবী
অন্নপূর্ণা দেবী

মেয়েকে কিছুতেই সংগীত শিক্ষা দিতে চাননি বাবা আলাউদ্দিন খাঁ। বড় মেয়েকে গান শিখিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। বিয়ের পর রক্ষণশীল শ্বশুরবাড়িতে মেয়েকে নাজেহাল হতে হয়েছিল। ছোট মেয়ের বেলায় একই ভুল তিনি কেন করবেন? কিন্তু অন্নপূর্ণা দেবী চুপিচুপি সংগীত শিক্ষা শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাবার কাছে ধরা পড়ে গেলেন তিনি।

অন্নপূর্ণার বড় ভাই আলী আকবর একদিন রেওয়াজ করছিলেন। উঠোনে খেলছিলেন অন্নপূর্ণা। তখন বেনারসের ১৬০ মাইল দূরে মাইহারে থাকতেন তাঁরা। খেলা থামিয়ে বড় ভাইকে বললেন, ‘ভাইয়া, বাবা ওভাবে না তো, এভাবে শিখিয়েছিলেন।’ তারপর বাবার শিখিয়ে দেওয়া উপায়ে ভাইকে গেয়ে শোনালেন। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অন্নপূর্ণা বলছিলেন, ‘আমি এমনভাবে গানের ভেতর ডুবে ছিলাম যে বাবা বাড়িতে ফিরেছেন সেটা খেয়ালই করিনি। তিনি আমাকে ঘরে ডাকলেন। তিনি বুঝেছিলেন, সংগীতের প্রতি আমার সত্যিকারের ভালোবাসা আছে। তিনি আমাকে তালিম দিতে শুরু করলেন।’

অন্নপূর্ণা দেবী

অন্য শিক্ষার্থীর মতো ধ্রুপদি গান দিয়েই তালিম শুরু হয় অন্নপূর্ণার। এরপর তিনি সেতার শেখেন। একদিন বাবা তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, সুরবাহার শিখবে নাকি? সেতারের গোত্রের সুরযন্ত্র সেটা, আকারে সেতারের থেকে খানিকটা বড়। তবে বাজানো একটু কঠিন। তবে শিখতে পারলে দারুণ গৌরবের ব্যাপার হবে। সে কথা স্মরণ করে অন্নপূর্ণা বলছিলেন, বাবা বললেন, তোমাকে আমার গুরুর বিদ্যাটা শেখাব। কারণ তোমার মধ্যে লোভ নেই। এ বিদ্যা শিখতে হলে খুব শান্ত মন আর অসীম ধৈর্য দরকার। আমার মনে হয়েছে, গুরুর এই উপহার তুমি ধরে রাখতে পারবে। সংগীতের প্রতি তোমার সত্যিকারের অনুরাগ আছে। তবে এটা শিখতে হলে তোমাকে সেতার বাজানো ছাড়তে হবে। সেতার সবার পছন্দের, সাধারণ মানুষ ও সমঝদার সবাই সেতার ভালোবাসে। কিন্তু সুরবাহারের প্রশংসা করবেন কেবল সেই সব শ্রোতা, যাঁরা সংগীতের গভীরতা অন্তরের মধ্যে অনুভব করেন। তবে সাধারণ শ্রোতারা অবশ্য তোমার দিকে টমেটো ছুড়ে মারতে পারেন।

বাবার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন অন্নপূর্ণা। তিনি বলেছিলেন, ‘বাবার কথায় আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো হয়ে পড়েছিলাম। আমার জবাব ছিল, আপনি যা আদেশ করবেন তাই হবে।’ সেই সুরবাহারের সম্রাজ্ঞী চলে গেলেন আজ শনিবার। ম্যানজ ওয়ার্ল্ড