শুভ্র দেবের প্রিয় শিল্পী মাইকেল জ্যাকসন। ২৮ বছর আগে তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তটা তাঁর স্মৃতিতে আজও জ্বলজ্বল। মাইকেল জ্যাকসন স্মরণে প্রথম আলোর কাছে তা–ই জানালেন শুভ্র দেব।
সেবার আমেরিকার কয়েকটি রাজ্যে স্টেজ শো করতে গিয়েছিলেন শুভ্র দেব। লস অ্যাঞ্জেলেসেও একটা শো ছিল। সেখানে থাকাকালেই তাঁকে সুযোগটা করে দিয়েছিলেন ডিসকো রেকর্ডিংয়ের শাহীন রহমান। প্রথম আলোকে শুভ্র দেব বলেন, ‘আমার সংগীতজীবনের সবচেয়ে সেরা একটি মুহূর্ত হয়ে আছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়াক্স মিউজিয়ামে একটা কস্টিউম ট্রায়ালে মাইকেল জ্যাকসনের আসার খবর আগেই জানতে পেরেছিলেন শাহীন ভাই। জ্যাকসনের প্রতি আমার তীব্র ভালোবাসার কথাও তিনি জানতেন। আমাকে বললেন শুভ্র, মাইকেল জ্যাকসন আসবে, দেখা করবা নাকি?
আমি বলেছি, কী বলেন শাহীন ভাই! কিন্তু বিশ্বাসও হচ্ছিল না। শুনলাম, শাহীন ভাই জ্যাকসনের ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। এরপরও কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছিল না। শাহীন ভাইকে নাকি জ্যাকসনের ম্যানেজার বলেছিল, নো প্রবলেম। সত্যি বলতে, তখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না।’
সেবার বেভারলি হিলসে উঠেছিলেন শুভ্র দেব। এক রাতে বাড়িতে অন্যদের সঙ্গে আড্ডায় মারছেন গায়ক, এমন সময় রাত দশটার দিকে ল্যান্ডফোনে শাহীন রহমান বলেন, ‘কিছুক্ষণের মধ্যে ওয়াক্স মিউজিয়ামে আসবে মাইকেল জ্যাকসন। তুমি রেডি থাকো। আমি আসতেছি।’
তারপরও বিশ্বাস করতে পারেননি শুভ্র দেব, ‘শাহীন ভাই আমাকে ড্রাইভ করে নিয়ে গেলেন। ওয়াক্স মিউজিয়ামের সামনে দেখলাম, বুলেটপ্রুফ টয়োটা একটা ভ্যান। অনেকে গাড়িটি ঘিরে আছে। পরিষ্কার মনে আছে, ওয়াক্স মিউজিয়ামের পেছন দরজা দিয়ে আমরা ঢুকছিলাম। তাঁকে যে ড্রেসটা পরানো হবে, তাও আমি দেখেছি। তারপর একেবারে পপসম্রাটের সামনে!
দেখলাম, স্টেজে যে মাইকেল জ্যাকসন বাঘের মতো, সিংহের মতো—সামনাসামনি একদম শান্ত। এত নরম সুরে কথা বলেন, সেদিন না দেখলে হয়তো বিশ্বাস হতো না। তাঁর ম্যানেজার পরিচয় করিয়ে দিলেন। উত্তেজনায় সঙ্গে করে কিছু নিয়েও যাইনি। মাইকেলের ম্যানেজার একটা সাদা কাগজ ছিঁড়ে দিলেন। তখন মাইকেল জিজ্ঞেস করল, হাউ ডু ইউ স্পেল ইওর নেম। আমি অবাক, শুভ্র তো তিনি এমনিতে লিখে ফেলতে পারতেন। এত বড় তারকা আমাকে এতটা বিনয় দেখানোর কী আছে। ছবি তোলার সময় একেবারেই আমার পাশে। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের সময় পেয়েছিলাম।’
শুভ্র বলেন, ‘ওয়াক্স মিউজিয়াম ঘুরে দেখছেন মাইকেল জ্যাকসন। আমিও তা চোখের সামনে দেখছি! যে পোশাকটার ট্রায়ালে এসেছিলেন, কালো ভেলবেটের ওপর হীরকখচিত বোতাম, সেটিও দেখলাম। যে পোশাকটি অফিশিয়ালি মাইকেল জ্যাকসনকে তিন সপ্তাহ পরে পরানো হবে, একটা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে।’
যেদিন মাইকেল জ্যাকসন মারা যান, ২০০৯ সালের ২৫ জুন, সেদিনও যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন শুভ্র দেব। দুপুরে নিউইয়র্কের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে দেখলেন, খুব উৎসুক চোখে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে মানুষ। শুভ্র বললেন, ‘আমাদের ঢাকা শহরে এ রকম হরহামেশাই দেখা যায়, কিন্তু নিউইয়র্ক শহরে কখনো এ রকম দেখিনি। আমিও টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকালাম, ওদের চেয়ে আমার মুখ আরও কালো হয়ে গেল। সিএনএন চ্যানেল লাইভ অ্যান্ড এক্সক্লুসিভ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তারকা মাইকেল জ্যাকসন সম্ভবত আর নেই। আমি সৃষ্টিকর্তাকে মনে মনে বলছিলাম, কথাটা যেন মিথ্যা হয়।
আশির দশকে সংগীতজীবন শুরু করা শুভ্র দেব ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’ গানটা গেয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তারপর দীর্ঘ পথচলায় অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। এখনো দেশ–বিদেশের মঞ্চে নিয়মিত গান গেয়ে চলছেন শুভ্র দেব। চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করছেন তিনি। এর বাইরে নিজের মতো করে নতুন গান তৈরির কাজও করছেন। খুব শিগগিরই হয়তো শ্রোতারা আবার তাঁর কণ্ঠে শুনতে পাবেন নতুন গান।